ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ।
ডায়াবেটিস-রোগীর-নিষিদ্ধ-খাবার-তালিকা
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যা সারা বিশ্বে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই রোগের সৃষ্টি হয় এবং নিয়ন্ত্রণে বিশেষ খাদ্যতালিকা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। তাই আমাদের আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
.

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু খাবার এড়িয়ে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে খাদ্যতালিকা হতে নিচের খাবারগুলো বাদ দেওয়া উচিত।

চিনি এবং মিষ্টিজাতীয় খাবারঃ মিষ্টি, চকলেট, মিষ্টান্ন, আইসক্রিম এবং চিনি-যুক্ত পানীয় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়।

সাদা চাল এবং ময়দাঃ সাদা চাল, ময়দার তৈরি রুটি বা পাউরুটি রক্তে গ্লুকোজ দ্রুত বাড়ায়। এর পরিবর্তে লাল চাল বা আটা ব্যবহার করতে হবে।

প্রক্রিয়াজাত খাবারঃ ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলোতে উচ্চমাত্রার চর্বি ও সোডিয়াম থাকে।

মিষ্টি ফলঃ কলা, লিচু, আঙুর এবং আমের মতো মিষ্টি ফল সীমিত করতে হবে। এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়।

তেল ও চর্বিঃ অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার, ঘি এবং মাখন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর।

কোমল পানীয় এবং অ্যালকোহলঃ সফট ড্রিঙ্ক, এনার্জি ড্রিঙ্ক এবং অ্যালকোহল রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস রক্ষা করতে ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক।

দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায়

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং ঘরোয়া উপায়গুলো খুবই কার্যকর। নিয়মিত প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।
  • প্রথমেই পানীয় জলে মেথি ভিজিয়ে রেখে তা সকালে খালি পেটে খাওয়া একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি। মেথির বীজ ফাইবার সমৃদ্ধ এবং ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি আম পাতার রস খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত উপকারী।
  • জিরা, দারুচিনি এবং হলুদের মিশ্রণ নিয়মিত পান করুন। এগুলোর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাবলি রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া করলা বা তেতো লাউয়ের রস প্রাকৃতিক উপায়ে ডায়াবেটিস কমানোর একটি অন্যতম ঘরোয়া উপাদান। করলার মধ্যে থাকা পলিপেপটাইড-P নামক উপাদান ইনসুলিনের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
  • খাবারে ফাইবারসমৃদ্ধ উপাদান যোগ করা খুবই জরুরি। শাকসবজি, ফলমূল এবং বাদাম খাওয়ার অভ্যাস ডায়াবেটিস কমাতে সহায়ক। বিশেষ করে শসা, টমেটো এবং ব্রকলি খাবারের তালিকায় রাখতে হবে।
  • নিয়মিত আলোর ব্যায়াম ও যোগব্যায়াম শরীরের ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। ধ্যান এবং হাঁটাহাঁটি মানসিক চাপ কমিয়ে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • তার সাথে ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা বর্জন করতে হবে। চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার বর্জন করুন। মিষ্টি বা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার কম খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।
উল্লেখিত ঘরোয়া উপায়গুলো দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় হিসেবে কার্যকর হলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শর্করার মাত্রা মনিটর করা উচিত।

ডায়াবেটিস কী

ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী মেটাবলিক রোগ। যা দেহে রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়। আমাদের শরীরের কোষে শক্তি সরবরাহ করার জন্য গ্লুকোজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইনসুলিন নামক একটি হরমোন ভূমিকা পালন করে। ইনসুলিন অগ্ন্যাশয় (Pancreas) থেকে নিঃসৃত হয়। ডায়াবেটিস তখনই ঘটে যখন দেহ পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। আবার তৈরি হওয়া ইনসুলিন দেহ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। ডায়াবেটিস প্রধানত দুই ধরনের হয়।

১. টাইপ ১ ডায়াবেটিসঃ এটি একটি অটোইমিউন ডিজঅর্ডার। যেখানে শরীরের ইমিউন সিস্টেম নিজেই অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন তৈরি করা কোষগুলো ধ্বংস করে ফেলে। এটি সাধারণত শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

২. টাইপ ২ ডায়াবেটিসঃ এটি সবচেয়ে সাধারণ ধরণ প্রায় ৯০-৯৫% ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিনের কার্যক্ষমতা হারায়। এছাড়াও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস রয়েছে যা গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়। এটি সাধারণত সাময়িক হলেও ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে এটি হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি ক্ষতি এবং স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে। তবে সঠিক ডায়েট অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা তৈরির পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য খাবার খাওয়া উচিত। এছাড়া শরীরচর্চা এবং ওষুধের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ডায়াবেটিস কেন হয়

ডায়াবেটিস একটি জটিল বিপাকীয় রোগ বিভিন্ন কারণের জন্য হয়ে থাকে। এটি মূলত শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি বা অকার্যকারিতা থেকে শুরু হয়। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ানোর কিছু সাধারণ কারণ এবং প্রভাবশালী উপাদান নীচে আলোচনা করা হলো।
  • পরিবারে পূর্বপুরুষদের মধ্যে ডায়াবেটিস থাকলে এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এটি টাইপ ১ এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিশেষ করে জিনগত কারণ টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়।
  • ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা থেকে অতিরিক্ত শর্করা এবং উচ্চ-ক্যালোরি খাদ্য গ্রহণ ডায়াবেটিসের একটি প্রধান কারণ। সাদা চাল, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং মিষ্টি খাবার বেশি খাওয়া রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। ফাইবারের অভাবযুক্ত খাবার ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমায়।
  • অতিরিক্ত ওজন এবং মেদবহুলতা (বিশেষ করে পেটের অংশে) টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রধান কারণ। বেশি ওজন শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধ বাড়ায় এবং এটি শর্করার নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত করে।
  • অলস জীবনযাত্রা এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব দেহের বিপাক প্রক্রিয়াকে ধীর করে। এতে রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যায়।
  • মানসিক চাপের কারণে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপ টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • কিছু হরমোনজনিত সমস্যা যেমন পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) বা কুশিংস সিনড্রোম টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • গর্ভাবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে এটি গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হিসেবে ভবিষ্যতে এটি টাইপ ২ ডায়াবেটিসে রূপ নিতে পারে।
  • বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ৪০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বেশি দেখা যায়।
  • ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়।
ডায়াবেটিস হওয়ার এসব কারণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হলে এ রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস থেকে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব।

ডায়াবেটিস রোগের লক্ষণ

ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যা প্রাথমিক পর্যায়ে খুব সহজে চিহ্নিত করা যায় না। অনেক সময় রোগটি ধীরে ধীরে শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে লক্ষণগুলো স্পষ্ট হতে সময় লাগে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা ডায়াবেটিসের উপস্থিতি নির্দেশ করে। এগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকলে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা। রক্তে অতিরিক্ত শর্করা জমা হলে শরীর তরল গ্রহণের মাধ্যমে তা দূর করার চেষ্টা করে। যা বেশি পানি পান করার প্রবণতা সৃষ্টি করে।
  • রক্তের বাড়তি শর্করা কিডনি দিয়ে ছেঁকে বের করার জন্য শরীর ঘন ঘন প্রস্রাবের মাধ্যমে তা দূর করে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদের দেহ কোষের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্লুকোজ সরবরাহ করতে পারে না। ফলে বারবার ক্ষুধা লাগে। যদিও শরীরের শক্তির চাহিদা পূরণ হয় না।
  • রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিক হলে শরীর পর্যাপ্ত শক্তি না পাওয়ার কারণে রোগী সব সময় ক্লান্তি এবং দুর্বলতা অনুভব করেন।
  • যখন শরীর গ্লুকোজ ব্যবহার না করতে পারলে এটি শক্তির জন্য চর্বি এবং পেশী ব্যবহার শুরু করে। ফলে রোগীর ওজন দ্রুত হ্রাস পায়।
  • ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার উচ্চতার কারণে চোখের লেন্সে পরিবর্তন ঘটে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা করতে পারে।
  • রক্তে বাড়তি শর্করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু এবং রক্ত প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে শরীরের ছোটখাটো ক্ষত শুকাতে অনেক বেশি সময় লাগে।
  • ডায়াবেটিস স্নায়ুর ক্ষতি করে হাত-পায়ে ঝিনঝিন ভাব বা অবশ অনুভূতির কারণ হতে পারে।
  • রোগীদের মধ্যে ত্বকে চুলকানি বা গাঢ় দাগ পড়া সাধারণ সমস্যা।
  • ডায়াবেটিস রোগীরা প্রায়ই ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাল সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন।
এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের তালিকা

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা জরুরি। একটি সুষম ডায়েট রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় মেনে চললে এটি অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের তালিকা তৈরি করার সময় কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত খাবারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। নিচে ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের তালিকা দেওয়া হলো।
  • সকালের খাবারের তালিকায় রাখা উচিত ফাইবার সমৃদ্ধ ওটস, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। আবার সিদ্ধ বা হালকা ভাজা ডিম প্রোটিনের ভালো উৎস। শাকসবজি ও স্যুপ সকালবেলার খাবারের তালিকায় রাখুন।
  • মধ্যাহ্নভোজের ক্ষেত্রে গ্রহণীয় খাবারের মধ্যে আমন্ড, আখরোট এবং সূর্যমুখীর বীজ খাবারের মধ্যে রাখতে পারেন। সবুজ শাকসবজি ব্রকলি, পালং শাক এবং করলা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য খুব উপকারী। সাধারণ ভাতের পরিবর্তে লাল চাল বা ব্রাউন রাইস খেতে হবে।
  • সন্ধ্যার নাস্তার মধ্যে আপেল, কমলালেবু, বা পেয়ারা খেতে পারেন। তবে কলা এবং আঙুর এড়িয়ে চলুন। গ্রিন টি বা দারুচিনির চা শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • রাতের খাবারের মধ্যে চিকেন বা মাছ সেদ্ধ বা হালকা ভাজা প্রোটিনযুক্ত খাবার ভালো। মসুর ডাল বা ছোলার ডাল রক্তে শর্করা বাড়ায় না। শসা, টমেটো এবং পেঁয়াজ দিয়ে স্যালাড তৈরি করুন।
  • এছাড়া চিনি, মিষ্টি, সফট ড্রিঙ্ক, সাদা চাল, ময়দা এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করুন।
ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের তালিকা এমনভাবে তৈরি করতে পারলে সুষম ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এরসাথে আলাদাভাবে ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা করে রাখা উচিত।

ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা কত

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রা জানা অত্যন্ত জরুরি। রক্তে শর্করার মাত্রা সঠিক থাকলে বিভিন্ন জটিলতা এড়ানো সম্ভব। ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা মেনে চলা এবং দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হবে।

স্বাভাবিক মাত্রাগুলো হলো- খালি পেটে ৭০-১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার। খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে ১৪০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের কম। আর HbA1c (৩ মাসের গড়) ৫.৭% এর কম। আবার স্বাভাবিক রক্তে শর্করার মান আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের (ADA) মতে- খালি পেটে রক্তে শর্করার মান ৭০-১৩০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (৩.৯-৭.২ mmol/L)।

অন্যদিকে খাওয়ার পর রক্তে শর্করার মান ১৮০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের কম (১০ mmol/L)। প্রি-ডায়াবেটিস এবং ডায়াবেটিসের লক্ষণ গুলো হলো- খালি পেটে রক্তে শর্করার মাত্রা ৫.৫-৬.৯ mmol/L হলে এটি প্রি-ডায়াবেটিস বলে ধরা হয়। আর ৭ mmol/L বা এর বেশি হলে এটি ডায়াবেটিস নির্দেশ করে। ডায়াবেটিস নির্ণয়ের মাপকাঠি হিসেবে অভুক্ত অবস্থায় ৭ mmol/L বা এর বেশি এবং খাবার পর এই মাত্রা ১১ mmol/L বা এর বেশি হয়ে থাকে।

আর স্বাভাবিক মাত্রা ধরা হয় ৩.৩-৬.৯ mmol/L (অভুক্ত অবস্থায়) এবং খাবারের পরে <৭.৮ mmol/L। যদি রক্তে শর্করার মাত্রা এই সীমার বাইরে থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি নির্দেশ করে এবং দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। নিয়মিত রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা, শরীরচর্চা, ওষুধ গ্রহণ এবং ডায়েট অনুসরণ ডায়াবেটিস রোগীকে এ বিষয়গুলোতে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে।

ডায়াবেটিস সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে এটি হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা এবং অন্যান্য জটিলতার কারণ হতে পারে। সঠিক জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখার মাধ্যমে ডায়াবেটিস থেকে সুস্থ থাকা সম্ভব। আপনার জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসে ছোট ছোট পরিবর্তন এনে এই দীর্ঘস্থায়ী রোগকে দূরে রাখুন।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার তালিকা তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে ডায়াবেটিস কী, কারণ, লক্ষণ, কমানোর ঘরোয়া উপায়, ডায়াবেটিস এর স্বাভাবিক মাত্রা কত এবং রোগীর খাবারের তালিকা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url