জরায়ুতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয়
জরায়ুতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় সে প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, জরায়ুতে সিস্ট এর লক্ষণ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ।
মেয়েদের জরায়ুতে সিস্ট থাকলে তা নিরাময়ে অবহেলা করলে বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি ক্যান্সারেও পরিণত হতে পারে। তাই আজকের পোস্টে জরায়ুতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় সেই বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।
.
জরায়ুতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয়
জরায়ুতে সিস্ট হলে গর্ভধারণ সম্ভব কি না, এটি অনেক নারীর কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এর উত্তর নির্ভর করে জরায়ুতে সিস্ট এর লক্ষণ, ধরণ, আকার, এবং এর প্রভাবের ওপর। সাধারণত বয়ঃসন্ধি থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে নারীদের জরায়ু বা ডিম্বাশয়ে সিস্ট হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তবে সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাপনের মাধ্যমে অনেক নারীই সিস্ট থাকা সত্ত্বেও মা হতে সক্ষম হন।
জরায়ু হচ্ছে নারীর প্রজনন ক্ষমতার মূল অঙ্গগুলোর একটি। কিন্তু কখনো কখনো জরায়ুতে সিস্টের মতো জটিলতা দেখা দেয়, যা উদ্বেগের কারণ হতে পারে। জরায়ুতে সিস্ট হলো নারীর প্রজনন অঙ্গে গঠিত একটি গুটি বা ফোলা। সাধারণত তরল বা আধা-ঠাসা পদার্থে পূর্ণ হয় এবং ছোট হলে কোনো সমস্যা সৃষ্টি নাও করতে পারে।
তবে বড় বা জটিল সিস্ট হলে তা প্রজননস্বাস্থ্য এবং দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা যা কিছু জানবো তা হল- জরায়ুতে সিস্ট কেন হয়, জরায়ুতে সিস্ট এর লক্ষণ, জরায়ুতে সিস্ট হলে কি হয়, সিস্ট থেকে কি ক্যান্সার হয়, জরায়ুতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয়, জরায়ু সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায় এ সকল বিষয়ের তথ্য সম্পর্কে।
ছোট বা স্বাভাবিক সিস্ট সাধারণত গর্ভধারণে কোনো বাধা সৃষ্টি করে না। তবে জটিল সিস্ট যেমন পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) বা এন্ডোমেট্রিওসিস সিস্ট প্রজননক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পিসিওএসে আক্রান্ত নারীদের ওভ্যুলেশন বা ডিম্ব স্ফোটনের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায়। এ সমস্যায় ডিম্বাণু সঠিকভাবে পরিপক্ব না হওয়ায় মাসিক অনিয়মিত বা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকতে পারে।
এন্ডোমেট্রিওসিস সিস্টের ক্ষেত্রে, সিস্ট জরায়ুর বাইরের অংশে বা ডিম্বাশয়ের কাছে তৈরি হলে তা ডিম্বাশয়ের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। এতে ডিম্বাণু তৈরি বা মুক্তির প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে গর্ভধারণ জটিল হয়ে পড়ে। পিসিওএসের ফলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এতে প্রজনন ক্ষমতা ও গর্ভধারণের সময় বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন গর্ভপাতের ঝুঁকি, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, এবং প্রিক্ল্যাম্পসিয়া।
অতিরিক্ত ওজন বা মানসিক চাপ পিসিওএস-জনিত বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। ওজন নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, এবং মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি, চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ বা প্রজনন চিকিৎসা নিলে গর্ভধারণের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। সুতরাং জরায়ুতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয়, এর উত্তর হ্যাঁ হতে পারে, যদি সময়মতো চিকিৎসা এবং সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
জরায়ুতে সিস্ট এর লক্ষণ
জরায়ুতে সিস্টের লক্ষণ একেকজন নারীর ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। সিস্ট ছোট হলে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা যায় না এবং এটি নিজের থেকেই চলে যেতে পারে। তবে সিস্ট বড় বা জটিল হলে কিছু সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
- পেটের নিচের দিকে ব্যথা জরায়ুতে সিস্টের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। এই ব্যথা স্থায়ী হতে পারে বা বিশেষ কিছু অবস্থায়। যেমন মাসিকের সময় বা যৌন মিলনের সময় বেশি অনুভূত হতে পারে। অনেক সময় এই ব্যথা তীব্র হয়ে দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।
- অনিয়মিত মাসিক সিস্টের আরেকটি বড় লক্ষণ। মাসিক চক্রের সময়সীমা এবং রক্তস্রাবের পরিমাণে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। কোনো কোনো নারীর ক্ষেত্রে মাসিক একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
- জরায়ুতে সিস্টের ফলে মূত্রথলির ওপর চাপ পড়তে পারে। যা প্রস্রাবে অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর পাশাপাশি পেট ফাঁপা অনুভব করা বা গ্যাস জমা, বমি বমি ভাব, এবং কখনো কখনো ওজন বৃদ্ধি দেখা দিতে পারে। এসব লক্ষণ হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলেও হতে পারে। যা সিস্টের কারণ এবং লক্ষণ দুটোই হতে পারে।
- এছাড়া সিস্টের আকার বড় হলে তা ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে। যা ডিম্বাণু তৈরিতে সমস্যা সৃষ্টি করে। এর ফলে গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক নারীর ক্ষেত্রে এটি একমাত্র লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। জরায়ুতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এই লক্ষণগুলো যত দ্রুত চিহ্নিত করা যাবে, তত দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ সম্ভব হবে।
তবে লক্ষণগুলো সবসময় সিস্টের জন্যই ঘটে এমন নয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াও জরুরি। সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যাবে যে এটি সিস্ট নাকি অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা।
সিস্ট মানে কি
সিস্ট হলো এক ধরনের জলভরা থলির মতো গঠন, যা শরীরের এমন জায়গায় হয় যেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক কিছু থাকার কথা নয়। এই থলির ভেতরে তরল (ফ্লুইড) বা পুঁজ (পাস) জমা থাকতে পারে। এটি শরীরের যে কোনো অঙ্গে যেমন ত্বক, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, হাড়, বা শরীরের ভেতরের অংশে গড়ে উঠতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা, সংক্রমণ বা আঘাতজনিত সমস্যা, জিনগত সমস্যাগুলো সিস্টের সাধারণ কারণগুলোর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। অনেক সময় সিস্ট ক্ষতিকর নয় এবং কোনো লক্ষণ নাও দেখাতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি আকারে বড় হতে পারে এবং ব্যথা বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ওভারিয়ান সিস্ট, সেবাসিয়াস সিস্ট, বা ডার্ময়েড সিস্ট উল্লেখযোগ্য। যদি সিস্টের ব্যথা বা সমস্যা সৃষ্টি করে, দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
জরায়ুতে সিস্ট কেন হয়
সিস্ট হতে পারে বিভিন্ন কারণে। এটি একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর কারণগুলো অনেকটাই জটিল এবং নানাভাবে আমাদের জীবনযাত্রার সাথে যুক্ত। নারীর প্রজনন অঙ্গে ডিম্বাশয় বা জরায়ুর গায়ে একটি গুটি বা ফোলা গঠনকে সিস্ট বলা হয়। এটি সাধারণত তরল বা আধা-ঠাসা পদার্থে পূর্ণ হয়। তবে সিস্ট কেন হয়, তা বুঝতে হলে এর মূল কারণগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি।
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সিস্টের অন্যতম কারণ। নারীর দেহে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন নামক হরমোনের সঠিক ভারসাম্য বজায় না থাকলে সিস্ট তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে মাসিক চক্রে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) একটি বড় কারণ। এই সমস্যায় ডিম্বাণু ঠিকমতো তৈরি হতে না পারায় ডিম্বাশয়ে একাধিক সিস্ট জমতে থাকে।
- এই সিস্টের কারণটি প্রজনন ক্ষমতায়ও প্রভাব ফেলে। জরায়ুতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় প্রসঙ্গে বলতে হয়, এটা অবশ্যই প্রজননে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
- এন্ডোমেট্রিওসিস অবস্থায় জরায়ুর অভ্যন্তরের টিস্যু জরায়ুর বাইরের অংশে বৃদ্ধি পায়, যা সিস্ট গঠনের কারণ হতে পারে। এছাড়া জিনগত প্রভাবে বা পরিবারের কারো এই ধরনের সমস্যা থাকলে এটি অন্য সদস্যদের মধ্যেও হতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ বা প্রদাহ জরায়ুর টিস্যুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং এতে জরায়ুতে সিস্ট গঠনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাস, যেমন অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া, অনিয়মিত ঘুম, এবং মানসিক চাপও এই সমস্যা বাড়াতে পারে।
জরায়ুতে সিস্ট হওয়ার কারণগুলো ভিন্ন ভিন্ন হলেও এদের মধ্যে একটি সাধারণ বিষয় হলো অস্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এসব কারণ সময়মতো চিহ্নিত না করলে তা বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।
জরায়ুতে সিস্ট হলে কি হয়
শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রভাব দেখা দিতে পারে জরায়ুতে সিস্টের কারণে। যা নারীর দৈনন্দিন জীবন এবং প্রজননক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। সিস্ট ছোট হলে অনেক সময় তা কোনো লক্ষণ ছাড়াই থেকে যায় এবং নির্দিষ্ট সময়ে নিজে থেকেই চলে যেতে পারে। তবে বড় বা জটিল সিস্ট হলে এর প্রভাব আরও গুরুতর হতে পারে।
জরায়ুতে সিস্ট হলে পেটের নিচের দিকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। এই ব্যথা কখনো মাসিকের সময়, কখনো দৈনন্দিন কাজ বা যৌন মিলনের সময় বাড়তে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এই ব্যথা এতটাই তীব্র হয় যে দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এর পাশাপাশি অনিয়মিত মাসিক জরায়ুতে সিস্টের আরেকটি বড় প্রভাব। মাসিকের সময় অস্বাভাবিক রক্তস্রাব, দীর্ঘ সময় ধরে মাসিক চলা, বা একেবারে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া সিস্টের কারণে হতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা জরায়ুতে সিস্টের কারণে দেখা দেয়। যা শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন সৃষ্টি করে। অনেক নারীর ক্ষেত্রে এটি দ্রুত ওজন বৃদ্ধি বা চুল পড়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বড় সিস্ট ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। এটি গর্ভধারণে সমস্যা তৈরি করতে পারে। যা নারীর প্রজননক্ষমতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
কিছু সিস্ট মূত্রথলির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজনীয়তা, এবং কখনো মূত্রাশয়ের সম্পূর্ণ খালি না হওয়ার অনুভূতি হতে পারে। একইসঙ্গে সিস্টের কারণে পেটে ফাঁপা ভাব, গ্যাস জমা, এবং বমি বমি ভাবও দেখা যেতে পারে। সিস্ট ফেটে গেলে বা পেঁচিয়ে গেলে তীব্র ব্যথা এবং অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের মতো জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।
যাতে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। বড় সিস্ট যদি চিকিৎসা না করা হয়। তবে এটি জরায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। সুতরাং জরায়ুতে সিস্ট হলে অবহেলা করা উচিত নয়। লক্ষণ বা অস্বস্তি অনুভব হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হলে সিস্ট থেকে সৃষ্ট জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
সিস্ট থেকে কি ক্যান্সার হয়
প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ- জরায়ুতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয়, আর যদি তাতে ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে, তখন কি করবেন। বেশিরভাগ জরায়ুর সিস্ট ক্ষতিকারক নয় এবং এগুলো নিজে থেকেই চলে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে বড় বা অস্বাভাবিক সিস্ট ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।
জরায়ু বা ডিম্বাশয়ে সিস্ট নারীদের একটি সাধারণ সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিস্ট ক্ষতিকর নয়। আর সব সিস্ট ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয় না। কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে সিস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সাধারণ সিস্ট যেমন ফাংশনাল সিস্ট বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS)-এর কারণে তৈরি সিস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি খুব কম।
এগুলো সাধারণত হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা ডিম্বাশয়ের স্বাভাবিক কার্যপ্রক্রিয়ার সময় সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতিকর নয়। তবে বড় সিস্ট, জটিল সিস্ট, বা লম্বা সময় ধরে স্থায়ী থাকা সিস্টের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া জরুরি। কিছু সিস্টের প্রকৃতি এমন যে, সেগুলো ক্যান্সারের ঝুঁকি বহন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ডারময়েড সিস্ট বা এন্ডোমেট্রিওমাসিস্ট, যেগুলো জটিল এবং ডিম্বাশয় বা জরায়ুর টিস্যুতে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।
এসব সিস্ট যদি দ্রুত আকারে বৃদ্ধি পায় বা স্বাভাবিকের তুলনায় ব্যতিক্রমী উপসর্গ সৃষ্টি করে, তাহলে এটি ক্যান্সারের পূর্বাভাস হতে পারে। পরিবারে যদি ডিম্বাশয় ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাহলে সিস্ট ক্যান্সারে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিশেষত ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বেশি।
এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে কোনো সিস্ট থাকলে, এটি ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। সিস্ট যদি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তীব্র ব্যথার কারণ হয়, বা রক্তক্ষরণ শুরু হয়, তবে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সঠিক চিকিৎসা অপরিহার্য। বায়োপসি, আল্ট্রাসাউন্ড বা সিটি স্ক্যানের মতো পরীক্ষা সিস্টের প্রকৃতি এবং এর সম্ভাব্য ঝুঁকি নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
সিস্ট থেকে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা খুবই বিরল এবং নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতেই ঘটে। প্রাথমিক পর্যায়ে সিস্ট শনাক্ত করা এবং সঠিক চিকিৎসা নেওয়া হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
জরায়ু সিস্ট দূর করার ঘরোয়া উপায়
সিস্টের চিকিৎসা করতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। এই রোগের প্রকাশ জনসম্মুখে লজ্জাজনক বলে অনেক নারীর মনে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় সৃষ্টি করে এবং সংশয়ে থাকে জরায়ুতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয়। কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে যেগুলো সিস্টের উপসর্গ হ্রাসে সহায়তা করতে পারে।
- হলুদ প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে বলে প্রতিদিন গরম পানির সাথে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করতে পারেন।
- মেথির বীজ হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে। গরম পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি পান করুন।
- গ্রিন টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা সিস্টের বৃদ্ধি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- দারুচিনি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং হরমোনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্য, এবং মানসিক চাপ কমানো সিস্ট নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- ঘরোয়া উপায়ে যদি উন্নতি না হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। জরায়ুতে সিস্ট একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে জরায়ুতে সিস্ট এর লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ।
সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিলে সিস্টের জটিলতা এড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি ঘরোয়া পদ্ধতিও সিস্টের উপসর্গ হ্রাসে সহায়ক হতে পারে। আপনার যদি এই বিষয় নিয়ে আরও প্রশ্ন থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন এবং সচেতন থাকুন। কারণ স্বাস্থ্যই জীবনের আসল সম্পদ।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে জরায়ুতে সিস্ট হলে কি বাচ্চা হয় তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে জরায়ুতে সিস্ট হওয়ার কারণ, লক্ষণ এবং সমাধান সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ
মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url