বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সে প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, বৃষ্টির পানিতে গোসলের উপকারিতা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ।
বৃষ্টির-পানির-উপকারিতা-ও-অপকারিতা
বৃষ্টি আমাদের জীবনধারণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আজকের পোস্টে বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সেই বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।
.

বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা

বৃষ্টির পানির উপকারি ও অপকারি দিক সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। বৃষ্টির পানি যেমন আমাদের জীবনধারণে সহায়ক, তেমনই এর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। আজকে আমরা এ সকল বিষয়েই জানব সাথেই জানব বৃষ্টির পানি কি বিশুদ্ধ, বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি, বৃষ্টির পানি কিভাবে পান করতে হবে, বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে, বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

বৃষ্টির পানির উপকারিতাঃ বৃষ্টি প্রকৃতির অন্যতম দান, যা পরিবেশ এবং জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টির পানির উপকারি দিকগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হলো, যা আমাদের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে।
  • কৃষিক্ষেত্রে বৃষ্টির পানিঃ বৃষ্টির পানি কৃষির প্রধান উৎস। এটি জমি সেচের জন্য প্রাকৃতিক ও খরচবিহীন মাধ্যম। বৃষ্টির ফলে মাটি আর্দ্র থাকে। যা ফসল উৎপাদনে সহায়ক, মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং প্রাকৃতিকভাবে জমি পরিষ্কার করে।
  • জলাশয়ের পূরণঃ বৃষ্টির পানি নদী, পুকুর, হ্রদ, এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর পূরণ করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করে, প্রাকৃতিক জলচক্র এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
  • তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ বৃষ্টি আবহাওয়ার তাপমাত্রা কমিয়ে পরিবেশকে ঠাণ্ডা করে।
  • ত্বক ও চুলের জন্য উপকারীঃ বৃষ্টির পানিতে গোসলের উপকারিতা ত্বক এবং চুলের জন্য অসাধারণ। এটি রাসায়নিক মুক্ত হওয়ায় ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং চুল মসৃণ ও ঝলমলে করে।
  • পরিবেশ পরিষ্কার রাখাঃ বৃষ্টির পানি বায়ুমণ্ডল থেকে ধূলিকণা, ধোঁয়া এবং দূষিত উপাদান ধুয়ে ফেলে শহর এবং গ্রামীণ পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে।
  • খরার প্রতিরোধঃ বৃষ্টি খরা থেকে রক্ষা করে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি জল সরবরাহ নিশ্চিত করে এবং কৃষি ও অন্যান্য কার্যক্রম সচল রাখে।
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিঃ বৃষ্টির ফলে গাছপালা সতেজ হয় এবং প্রকৃতি সবুজে ঢেকে যায়।
বৃষ্টির পানির উপকারিতা অসীম। সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বৃষ্টির পানি থেকে পরিবেশ ও জীবনের উন্নতি নিশ্চিত করতে পারি।

বৃষ্টির পানির অপকারিতাঃ বৃষ্টির পানি প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ হলেও কিছু ক্ষেত্রে এটি পরিবেশ, মানুষের স্বাস্থ্য এবং সম্পত্তির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এর ক্ষতিকর দিকগুলোও বুঝতে হবে।
  • জলাবদ্ধতা সৃষ্টিঃ অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থার অভাবে রাস্তা, ঘরবাড়ি, এবং জনজীবন ব্যাহত হয়। জলাবদ্ধতা পরিবহনে বিঘ্ন ঘটায় এবং রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ বাড়ায়।
  • ভূমিধস ও বন্যাঃ অত্যধিক বৃষ্টি পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস এবং সমতল এলাকায় বন্যার সৃষ্টি করে। ভূমিধস পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে। এগুলো মানুষের জীবন ও সম্পত্তির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে।
  • এসিড বৃষ্টিঃ বায়ুদূষণের কারণে বৃষ্টির পানিতে সালফিউরিক এবং নাইট্রিক এসিড মিশে এসিড বৃষ্টি তৈরি হয়। এটি মাটির পিএইচ কমিয়ে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং গাছপালা, জলজ প্রাণী এবং স্থাপনার ক্ষতি করে।
  • রোগজীবাণুর বিস্তারঃ বৃষ্টির জমে থাকা পানি মশা ও অন্যান্য পোকামাকড়ের জন্য আদর্শ প্রজননক্ষেত্র তৈরি করে। এটি ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং অন্যান্য রোগ ছড়ানোর জন্য দায়ী।
  • স্থাপনার ক্ষতিঃ অতিরিক্ত বৃষ্টি এবং জলাবদ্ধতা বিল্ডিং, রাস্তা, এবং ব্রিজের মতো স্থাপনার স্থায়িত্ব হ্রাস করে। পানিতে মিশ্রিত রাসায়নিক পদার্থ এসব স্থাপনার মারাত্মক ক্ষয়সাধন করে থাকে।
  • পানিদূষণঃ বৃষ্টির পানি ভূগর্ভস্থ জলাধারে মিশে দূষিত হয়ে যেতে পারে। রাস্তা, কারখানা এবং কৃষিক্ষেত্রের রাসায়নিক বৃষ্টির সঙ্গে মিশে জলাশয়ের পানি ব্যবহারের অযোগ্য করে তোলে।
বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা নির্ভর করে এর সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করলে বৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে এর ইতিবাচক দিকগুলোকে কাজে লাগানো সম্ভব।

বৃষ্টির পানিতে গোসলের উপকারিতা

বৃষ্টির পানি প্রকৃতির দান যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং আমাদের শরীর, মনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেকেই বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। প্রাকৃতিক এই পানিতে কোনো বড় ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে না বলে ত্বক এবং চুলের জন্য বেশ উপকারী। বৃষ্টির পানিতে গোসল করার উপকারিতাগুলো নিম্নে দেয়া হলো।

ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখাঃ বৃষ্টির পানি নরম এবং খনিজ পদার্থবিহীন হওয়ায় এটি ত্বকের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা বজায় রাখে। নিয়মিত বৃষ্টির পানিতে গোসল করলে ত্বক কোমল এবং উজ্জ্বল হয়।

প্রাকৃতিক মানসিক প্রশান্তিঃ বৃষ্টির পানি শরীর এবং মনে এক বিশেষ প্রশান্তি আনে। বৃষ্টির পানিতে ভিজলে মানুষের শরীর থেকে এন্ডোরফিন ও সেরাটোনিন বা হ্যাপিনেস হরমোন নিঃসৃত হয়। তার সাথে বৃষ্টির হালকা ঠান্ডা অনুভূতি মানসিক চাপ কমায় এবং মনের ক্লান্তি দূর করে।

চুলের যত্নে অনন্যঃ বৃষ্টির পানি চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে চুল মসৃণ এবং ঝলমলে করে তোলে। এছাড়া এটি চুলের রুক্ষতা কমাতে এবং খুশকির সমস্যা দূর করতেও সহায়ক।

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিঃ বৃষ্টিতে ভেজার সময় শরীরের রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এটি বিশেষত ঠান্ডা বা ফ্লু প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে। ত্বকের চুলকানি, খসখসে ভাব কমাতে সাহায্য করে। বৃষ্টির পানি কানে ইনফেকশন বা ব্যথা দূর করতে যথেষ্ট কার্যকর। তবে ১০-১৫ মিনিটের অতিরিক্ত সময় বৃষ্টিতে ভেজা উচিত নয় এবং এরপরে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ঠান্ডার সমস্যা হবেনা।

প্রাকৃতিক থেরাপিঃ বৃষ্টির পানিতে ভেজা শরীরের জন্য একধরনের প্রাকৃতিক থেরাপি। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং ত্বকের ছিদ্র পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।

বৃষ্টির পানিতে গোসলের উপকারিতা সর্বাধিক পেতে পরিষ্কার ও নিরাপদ পরিবেশে এই প্রাকৃতিক উপহার গ্রহণ করা উচিত। তাছাড়া বৃষ্টির পানির যথাযথ ব্যবহার এবং এর গুণাবলীর সঠিক মূল্যায়ন না করলে আমরা অনেক সময় এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারি।

বৃষ্টির পানি কি বিশুদ্ধ

বৃষ্টি প্রকৃতির অন্যতম দান, যা পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং জীবনের জন্য অপরিহার্য। তবে, বৃষ্টির পানি যেমন আমাদের জন্য উপকারী, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিকর প্রভাবও ফেলতে পারে। জলাবদ্ধতা, এসিড বৃষ্টি, এবং রোগজীবাণুর বিস্তার এর কয়েকটি নেতিবাচক দিক। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা থাকলে বৃষ্টির অপকারিতা কমিয়ে এর উপকারিতা কাজে লাগানো সম্ভব।

বৃষ্টির পানি প্রকৃতিগতভাবে বিশুদ্ধ কারণ এটি বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তৈরি হয়। পানি বাষ্পীভূত হয়ে যখন আকাশে মেঘে জমা হয়, তখন এটি সাধারণত দূষণমুক্ত থাকে। তবে, বৃষ্টির পানি মাটিতে বা বিভিন্ন জায়গায় পড়ার আগে বায়ুমণ্ডলের ধূলিকণা, ধোঁয়া এবং রাসায়নিক পদার্থ মিশে এটি দূষিত হতে পারে। বিশুদ্ধ বৃষ্টির পানিতে সাধারণত কোনো কঠিন পদার্থ বা দূষণ থাকে না।

তবে শিল্প এলাকা বা ঘনবসতিপূর্ণ শহরে, যেখানে বায়ুদূষণ বেশি, সেখানকার বৃষ্টির পানিতে সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড, HCl এর মতো এসিডিক উপাদান থাকতে পারে। তাই বৃষ্টির পানি সরাসরি পান করার আগে সতর্ক থাকা উচিত। বৃষ্টি আমাদের জীবনধারণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বৃষ্টির পানিতে কোন ভিটামিন থাকে

বৃষ্টির পানিতে সাধারণত ভিটামিন থাকে না। তবে এটি প্রাকৃতিক পানির একটি উৎস যা খনিজ পদার্থ এবং বিভিন্ন গ্যাসের উপস্থিতির জন্য পরিচিত। বৃষ্টি পড়ার সময় বাতাসের বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান যেমন নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড পানিতে মিশে যায়। এ কারণে বৃষ্টির পানিতে ক্ষুদ্র মাত্রায় নাইট্রেট ও মিনারেল পাওয়া যেতে পারে।

এই উপাদান গুলো উদ্ভিদের জন্য অনেক উপকারী। তবে বৃষ্টির পানি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য সরাসরি উপকারী ভিটামিনের উৎস নয়। তদুপরি শহরের বায়ুদূষণ এবং শিল্প দূষণের কারণে বৃষ্টির পানি অনেক সময় অম্লীয় হয়ে উঠতে পারে। আর সেটা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। বৃষ্টির পানি পানের উপযোগী করতে বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত জরুরি। সুতরাং ভিটামিনের জন্য বৃষ্টির পানি নির্ভরযোগ্য নয়।

শহরাঞ্চলে বা দূষিত এলাকায় বৃষ্টির পানি সরাসরি ব্যবহার করলে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। শহুরে বায়ুদূষণের কারণে বৃষ্টির পানিতে সালফার ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড মিশে যেতে পারে, যা ত্বক এবং চুলের জন্য ক্ষতিকর। এ কারণে দূষণমুক্ত এলাকায় বৃষ্টির পানি ব্যবহার করাই উত্তম। আবার ঋতুর শুরুতে যে বৃষ্টি হয় তাতে ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রিত থাকার কারণে পরবর্তীতে বৃষ্টিতে ভিজতে পারেন।

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতি

বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ আমাদের জীবনে একটি টেকসই উপায়। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। নিচে কয়েকটি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।
  • ছাদে পানি সংগ্রহের পদ্ধতিঃ ঘরের ছাদ থেকে বৃষ্টির পানি পাইপের মাধ্যমে একটি ট্যাংকে সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিটি বিশেষত শহরাঞ্চলে অত্যন্ত কার্যকর।
  • জলাধার তৈরিঃ গ্রামীণ এলাকায় পুকুর বা কুয়া খনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যায়।
  • ফিল্টারিং ব্যবস্থাঃ সংগ্রহ করা পানিকে ব্যবহারযোগ্য করতে ফিল্টারিং ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন।
  • আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারঃ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য আধুনিক রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা বাড়ে। বৃষ্টির পানি মজুতের জন্য মাটির নিচে ট্যাঙ্ক স্থাপন, ফিল্টার ও পাম্পের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয়।
সংরক্ষিত বৃষ্টির পানি কৃষিকাজ, গৃহস্থালি কাজ এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপরে আপনাদের সাথে বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

বৃষ্টির পানি কিভাবে পান করতে হবে

বৃষ্টির পানি প্রকৃতির এক বিশেষ উপহার। এটি প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ থাকলেও বিভিন্ন কারণে সরাসরি পান করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি থাকতে পারে। বায়ুমণ্ডলের দূষণ, ধূলিকণা এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান বৃষ্টির পানিকে দূষিত করতে পারে। তাই বৃষ্টির পানি পান করার আগে সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে বৃষ্টির পানি নিরাপদে পান করার জন্য প্রয়োজনীয় ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

ফিল্টার করাঃ বৃষ্টির পানি সংগ্রহের পরপরই এটি ফিল্টার করা জরুরি। উচ্চমানের ফিল্টার ব্যবহার করে পানির ভেতর থাকা ধূলিকণা, ক্ষতিকারক রাসায়নিক, এবং ক্ষুদ্র কঠিন পদার্থ দূর করা সম্ভব। বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টার পাওয়া যায়।

সেদ্ধ করাঃ ফিল্টারের পর পানিকে অন্তত ১০-১৫ মিনিট সেদ্ধ করা উচিত। এটি পানিতে থাকা ক্ষতিকারক জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে। সেদ্ধ করার মাধ্যমে পানিকে ৯৯% জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব, যা এটি পান করার জন্য নিরাপদ করে তোলে।

বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহারঃ জরুরি পরিস্থিতিতে, যেখানে ফিল্টার বা সেদ্ধ করার সুযোগ নেই, সেখানে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে।

পরিষ্কার ও নিরাপদ সংগ্রহ পদ্ধতিঃ বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে ধারণা থাকলে এটা সংগ্রহ ও ব্যবহারে সতর্ক হওয়া যায়। বৃষ্টির পানি সংগ্রহের পাত্র অবশ্যই ঢেকে রাখা, পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হতে হবে।

পান করার আগে সংরক্ষণের পরিবেশ পরীক্ষা করুনঃ যে এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে, সেখানকার বায়ুদূষণের মাত্রা বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। শিল্পাঞ্চল বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বৃষ্টির পানিতে এসিড মেশার সম্ভাবনা থাকে, যা পানিকে ক্ষতিকারক করে তুলতে পারে।

বৃষ্টির পানি সঠিকভাবে বিশুদ্ধ করে পান করা হলে এটি শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর। এতে সাধারণত ক্লোরিন বা ফ্লোরাইডের মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক থাকে না, যা কলের পানিতে থাকতে পারে। সঠিক পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে নিরাপদ পানীয় জলে পরিণত করে ব্যবহার করা উচিত।

বৃষ্টির পানিতে কোন এসিড থাকে

বৃষ্টির পানি সাধারণত বিশুদ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণের কারণে এতে বিভিন্ন ধরনের এসিড মিশে যেতে পারে। বিশেষত, শিল্প এলাকা এবং শহরাঞ্চলের বায়ুদূষণ বৃষ্টির পানিকে দূষিত করে। দূষিত বৃষ্টির পানিতে দুই ধরনের এসিড সবচেয়ে বেশি পরিমাণে থাকে।

H₂SO₄ বা সালফিউরিক এসিডঃ শিল্প কারখানা এবং যানবাহনের নির্গত সালফার ডাই-অক্সাইড (SO₂) বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত অক্সিজেন ও পানির সঙ্গে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক এসিড তৈরি করে। এই এসিডযুক্ত বৃষ্টির পানি মাটির উর্বরতা নষ্ট করতে পারে, পাশাপাশি এটি গাছপালা, জলজ প্রাণী এবং স্থাপনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

(HNO₃) বা নাইট্রিক এসিডঃ নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOₓ), যা প্রধানত যানবাহনের ধোঁয়া এবং শিল্প কারখানা থেকে নির্গত হয়, বৃষ্টির পানিতে মিশে নাইট্রিক এসিড তৈরি করে। এই এসিড পরিবেশের পিএইচ স্তর কমিয়ে মাটি এবং জলাশয়ের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করতে পারে।

পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে বিকল্প জ্বালানি এবং উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে। তাই পরিবেশ রক্ষা এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা বৃষ্টির পানি থেকে এসিড দূষণ প্রতিরোধ করতে পারি। বৃষ্টির পানির উপকারী ও অপকারী দিক সম্পর্কে সচেতন হলে আমরা এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারব।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে বৃষ্টির পানির উপকারিতা ও অপকারিতা তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে বৃষ্টির পানির সংরক্ষণ, ব্যবহার ও উপকারিতা-অপকারিতা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url