টিউমার কিভাবে ক্যান্সারে পরিণত হয়
টিউমার কিভাবে ক্যান্সারে পরিণত হয় সে প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, টিউমার ফেটে গেলে কি হয় সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ।
দেহের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থেকে টিউমার হয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি করে থাকে। তাই আজকের পোস্টে টিউমার কিভাবে ক্যান্সারে পরিণত হয় সেই বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।
.
টিউমার কিভাবে ক্যান্সারে পরিণত হয়
মানুষের শরীরে কোনো ধরনের টিউমার হলে সেটি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। টিউমার এমন একটি শারীরিক অবস্থা যেখানে কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমাট বাঁধে। তবে সব টিউমার ক্যান্সার নয়, আর সব টিউমারই ক্ষতিকর নয়। টিউমার এবং ক্যান্সারের মধ্যে সম্পর্ক জটিল।
যদিও বিনাইন টিউমার ক্ষতিকর নয়, তবে কিছু টিউমার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ম্যালিগন্যান্ট হয়ে ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে। আর এই ব্যাধিতে জীবননাশের হুমকি রয়েছে। টিউমার আমাদের শরীরের একটি অস্বাভাবিক অবস্থা হলেও, এটি সবসময় ক্যান্সারের সমান নয়। তবে টিউমার ফেটে গেলে কি হয় এবং তা থেকে ক্যান্সারে পরিণত হয় এ সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রয়োজন।
আমাদের আজকের পোস্টে আমরা যা কিছু জানবো তা হল- টিউমার কেন হয়, টিউমার ফেটে গেলে কি হয়, টিউমার চেনার উপায়, টিউমার কি ব্যথা হয়, টিউমার গলানোর উপায় এ সকল বিষয়ের তথ্য সম্পর্কে। টিউমারের লক্ষণগুলো সম্পর্কে জানা থাকলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব। সঠিক চিকিৎসা এবং সচেতনতার মাধ্যমে টিউমারকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নিম্নে টিউমার কিভাবে ক্যান্সারে পরিণত হয় তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ডিএনএ মিউটেশনঃ শরীরের কোষে ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেগুলো অস্বাভাবিকভাবে বিভাজিত হতে শুরু করে। এই ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে টিউমার গঠন করে।
অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনঃ কোষের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি শরীরের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দেয়, যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
রক্তনালী সৃষ্টিঃ কিছু টিউমার তাদের বৃদ্ধির জন্য নতুন রক্তনালী তৈরি করে (এঞ্জিওজেনেসিস)। এটি টিউমারের আকার বাড়িয়ে দেয় এবং যার ফলশ্রুতিতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
অঙ্গ আক্রমণঃ ম্যালিগন্যান্ট টিউমার আশপাশের অঙ্গ ও টিস্যুকে আক্রমণ করতে পারে এবং সেগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা নষ্ট করে।
মেটাস্টেসিসঃ ক্যান্সার কোষ রক্ত বা লসিকার মাধ্যমে শরীরের অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এটি ক্যান্সারকে আরও বিপজ্জনক করে তোলে।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং শরীরের পরিবর্তনে সতর্ক থাকা টিউমার ও ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিয়মিত পরীক্ষা এবং সচেতনতা খুবই জরুরি। কারণ টিউমার কিভাবে ক্যান্সারে পরিণত হয় তা আগাম বোঝা সবসময় সহজ নয়।
টিউমার ফেটে গেলে কি হয়
টিউমার ফেটে যাওয়া একটি গুরুতর চিকিৎসাজনিত অবস্থা। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে এবং এর ফলাফল রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। টিউমার সাধারণত দেহের কোনো স্থানে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট হয়। যখন এটি ফেটে যায় তখন তা দেহে নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। টিউমার ফাটার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।
- অতিরিক্ত চাপঃ বড় বা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠা টিউমার আশেপাশের টিস্যু ও রক্তনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এটি টিউমারের ভেতরের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং ফেটে যেতে পারে।
- ইনফেকশনঃ টিউমারে কোনো ধরনের সংক্রমণ হলে এটি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ফেটে যেতে পারে।
- আঘাতঃ শরীরের টিউমার আক্রান্ত স্থানে আঘাত লাগলে এটি ফেটে যেতে পারে।
- চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন থেরাপির পর টিউমার নরম হয়ে ফেটে যেতে পারে।
- টিউমার ফাটার পরিণতিঃ টিউমার ফাটলে এর অভ্যন্তরের তরল বা কোষের উপাদান আশেপাশের টিস্যু বা দেহের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে।
- রক্তপাতঃ অনেক টিউমার রক্তনালীসমৃদ্ধ হয়। ফেটে গেলে রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা কখনও কখনও জীবনঘাতী হতে পারে।
- সংক্রমণঃ টিউমারের অভ্যন্তর থেকে নির্গত পদার্থ সংক্রমণ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে আক্রান্ত স্থানে বা সারা শরীরে সেপসিস (রক্তসংক্রমণ) হতে পারে।
- দুর্বিপাক টিউমারের বিস্তারঃ ফেটে যাওয়ার ফলে টিউমার কিভাবে ক্যান্সারে পরিণত হয় সেই বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। যদি এটি ক্যানসারজনিত হয়। তবে ফেটে যাওয়ার কারণে ক্যানসারের কোষ আশেপাশের টিস্যুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি মেটাস্ট্যাসিসের (ক্যানসারের ছড়িয়ে পড়া) ঝুঁকি বাড়ায়।
- ব্যথা ও প্রদাহঃ টিউমার ফাটলে গুরুতর ব্যথা, ফোলা এবং প্রদাহ হতে পারে।
- অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়াঃ যদি টিউমার কোনো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কাছে থাকে এবং ফেটে যায়, তবে ওই অঙ্গের কার্যক্ষমতা নষ্ট হতে পারে।
টিউমার ফাটলে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সংক্রমণ প্রতিরোধ, রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ এবং টিউমার অপসারণের জন্য অপারেশন করা হতে পারে। তাছাড়া ক্যানসার হলে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশন প্রয়োজন। তাই টিউমারের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা করানো জরুরি।
টিউমার কেন হয়
টিউমার হওয়ার প্রধান কারণ হলো কোষ বিভাজনের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারানো। টিউমার দুই ধরনের হতে পারে- সৌম্য (Benign) এবং দুর্বিপাক (Malignant)। টিউমার কেন হয় সেটা নির্ভর করে একাধিক কারণের ওপর। এ কারণগুলোকে সাধারণত জেনেটিক, পরিবেশগত, এবং জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে ভাগ করা যায়।
জেনেটিক কারণঃ বংশগত জিনগত পরিবর্তন বা মিউটেশন টিউমারের জন্য দায়ী হতে পারে। কিছু মানুষ এমন জিন বহন করে যা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়। টিউমার সাপ্রেসর জিন বা প্রোটো-অঙ্কোজিনে ত্রুটি থাকলে কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়তে পারে।
পরিবেশগত কারণঃ পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন কার্সিনোজেন বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান যেমন, তামাকের ধোঁয়া, বায়ুদূষণ, এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ টিউমারের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিবেগুনি রশ্মি (UV Ray) বা রেডিয়েশনের দীর্ঘমেয়াদী সংস্পর্শে থাকাও একটি বড় কারণ।
জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসঃ অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, যেমন উচ্চ চর্বি এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ, টিউমারের ঝুঁকি বাড়ায়। শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং স্থূলতা টিউমারের একটি বড় কারণ। অ্যালকোহল বা তামাকের অতিরিক্ত ব্যবহার কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে।
সংক্রমণঃ কিছু ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া যেমন- হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV), হেপাটাইটিস বি ও সি, এবং হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি সংক্রমণ টিউমারের কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে টিউমার কিভাবে ক্যান্সারে পরিণত হয় সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
হরমোনাল পরিবর্তনঃ দেহে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
সৌম্য টিউমার সাধারণত কম ক্ষতিকর এবং অপারেশন বা ওষুধের মাধ্যমে সরানো যায়। তবে দুর্বিপাক টিউমার বা ক্যানসার দ্রুত চিকিৎসা করা না হলে জীবনসংকট তৈরি করতে পারে। তাই টিউমার থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অপরিহার্য।
টিউমার চেনার উপায়
টিউমার হলো শরীরের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যা নির্দিষ্ট স্থান বা টিস্যুতে গঠন তৈরি করে। এটি দুই ধরনের হতে পারে- বিনাইন (ক্ষতিকর নয়) এবং ম্যালিগন্যান্ট (ক্যান্সারজাতীয়)। টিউমার চেনার জন্য বিভিন্ন লক্ষণ ও উপসর্গ বিবেচনা করা হয়।
শরীরে অস্বাভাবিক ফোলা বা গুটিঃ টিউমারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো শরীরে গুটি বা ফোলা। এটি মাংসপেশি, ত্বক, হাড়, বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে হতে পারে। গুটি শক্ত বা নরম হতে পারে এবং চাপে ব্যথা অনুভূত হতে পারে বা নাও হতে পারে।
ব্যথা বা অস্বস্তিঃ ক্ষতিকর টিউমার প্রায়ই প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথা সৃষ্টি করে না। তবে এটি যখন বড় হয় বা আশেপাশের টিস্যু বা নার্ভে চাপ ফেলে, তখন ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
ওজন কমে যাওয়াঃ হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। ক্যান্সারযুক্ত টিউমার শরীরের শক্তি বেশি ব্যবহার করে, যা ওজন হ্রাসের কারণ হতে পারে।
ত্বকের পরিবর্তনঃ ত্বকের ওপর কোনো গুটি, দাগ, বা রং পরিবর্তন হলে এটি টিউমারের ইঙ্গিত হতে পারে। বিশেষ করে মেলানোমা বা ত্বকের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
অঙ্গের কার্যকারিতা হ্রাসঃ যে অঙ্গে টিউমার হয়, সেই অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। যেমন মস্তিষ্কে টিউমার হলে স্মৃতিশক্তি, দৃষ্টিশক্তি বা ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে।
হঠাৎ রক্তপাতঃ যদি হঠাৎ রক্তপাত বা শরীরের কোনো অংশে অস্বাভাবিক ক্ষত তৈরি হয়, তবে এটি টিউমারের লক্ষণ হতে পারে।
অতিরিক্ত ক্লান্তিঃ টিউমারের কারণে শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। এটি প্রায়শই ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
যদি এসব লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা জরুরি। প্রয়োজন হলে বায়োপসি, সিটি স্ক্যান বা এমআরআইয়ের মাধ্যমে রোগের প্রকৃত অবস্থা নিশ্চিত হওয়া যায়। শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তনকে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া টিউমার শনাক্ত ও নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ।
টিউমার কি ব্যথা হয়
টিউমার ব্যথা হয় কি না, তা নির্ভর করে তার ধরণ, আকার, অবস্থান এবং টিউমারের বৃদ্ধি বা আশপাশের টিস্যুতে প্রভাবের ওপর। সাধারণত টিউমারের প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যথা থাকে না। তবে নির্দিষ্ট কিছু অবস্থায় ব্যথা দেখা দিতে পারে।
ব্যথাহীন টিউমারঃ প্রথম দিকে বেশিরভাগ টিউমার ব্যথাহীন থাকে। বিনাইন (ক্ষতিকর নয়) টিউমার সাধারণত আশপাশের টিস্যুকে তেমন ক্ষতি করে না, ফলে ব্যথা হয় না। তবে এটি বড় হলে ত্বকে টান বা চাপ অনুভূত হতে পারে।
ব্যথাযুক্ত টিউমারঃ ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সারজাতীয় টিউমার আশপাশের টিস্যু বা নার্ভে চাপ দিলে বা সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত করলে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে হাড় বা নার্ভে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলে তীব্র ব্যথা হতে পারে।
ফুটে গেলে ব্যথাঃ কিছু টিউমার ফেটে গেলে কি হয় বা সংক্রমিত হলে যা হয়, তা হলো ব্যথা শুরু হয়। এটি বিশেষত ত্বকের নিকটবর্তী টিউমারের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
চাপ প্রয়োগে ব্যথাঃ টিউমার যদি ত্বকের নীচে বা গভীরে থাকে এবং চাপে ব্যথা অনুভূত হয়। তবে এই সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য সতর্ক সংকেত হতে পারে।
আপনার শরীরে যদি টিউমারের মতো কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দেয়। তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। টিউমারের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির জটিলতা এড়ানোর জন্য সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
টিউমার থেকে ক্যান্সার এর লক্ষণ
আমাদের শরীরের কোষগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে বিভাজিত হয় এবং পুরোনো কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তবে কোনো কারণে এই প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটলে অতিরিক্ত কোষ তৈরি হয় এবং তা একত্র হয়ে টিউমারে রূপ নেয়। টিউমার হলো দেহের কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা স্ফীতি। আমাদের দেহের কোষ স্বাভাবিকভাবে নির্দিষ্ট নিয়মে বিভাজিত হয় এবং এক সময়ে ধ্বংস হয়।
কিন্তু কখনও কখনও এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটে, ফলে কোষগুলো নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে শুরু করে। এ অবস্থাতেই টিউমার গঠিত হয়। টিউমার থেকে ক্যান্সার হওয়ার লক্ষণ নির্ভর করে টিউমারের ধরন, অবস্থান এবং এটি দেহে কেমন প্রভাব ফেলছে তার ওপর। সাধারণত টিউমার থেকে ক্যান্সার হলে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্ষত, যা দীর্ঘদিনেও সারে না, চামড়ায় অস্বাভাবিক গঠন বা পরিবর্তন, একটি জায়গায় দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, অস্বাভাবিক রক্তপাত বা স্রাব, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, খাবারে অরুচি, ক্লান্তি এবং দুর্বলতা। কিছু ক্ষেত্রে টিউমার বড় হতে থাকলে পাশের টিস্যুতে চাপ ফেলে, যা দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে।
বিশেষ করে ফুসফুস, স্তন বা গলা অঞ্চলে টিউমার থাকলে শ্বাসকষ্ট, ঢোক গিলতে অসুবিধা বা কফের সঙ্গে রক্ত আসা হতে পারে। যদি টিউমারের কোনো পরিবর্তন বা উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা জীবন বাঁচাতে পারে।
টিউমার গলানোর উপায়
টিউমার গলানোর জন্য বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। যা সম্পূর্ণ নির্ভর করে টিউমারের ধরণ, আকার এবং অবস্থানের ওপর। সাধারণত চিকিৎসক রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে সঠিক পদ্ধতি নির্ধারণ করেন।
ওষুধঃ নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ছোট আকারের টিউমার গলাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে হরমোনাল থেরাপি বা টার্গেটেড থেরাপি কিছু নির্দিষ্ট প্রকারের টিউমারে কার্যকর।
রেডিওথেরাপিঃ এটা এমন একটি পদ্ধতি যেখানে উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন রশ্মি ব্যবহার করে টিউমারের কোষ ধ্বংস করা হয়। ক্ষতিকর বা ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ধ্বংস করতে এটি বেশ কার্যকর।
কেমোথেরাপিঃ টিউমার কিভাবে ক্যান্সারে পরিণত হয় জানতে হবে। কেননা কেমোথেরাপি সাধারণত ক্যান্সারজনিত টিউমার গলানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এতে শক্তিশালী ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে টিউমারের কোষ ধ্বংস করা হয়।
সার্জারিঃ বড় আকারের টিউমার বা যেখানে অন্যান্য পদ্ধতিতে গলানো সম্ভব নয়, সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এটি অপসারণ করা হয়।
প্রাকৃতিক পদ্ধতিঃ সুস্থ জীবনযাপন, ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কিছু টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিরোধে সহায়ক। উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার এবং সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখার মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রাখা যায়।
সব ধরনের টিউমারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টিউমার ভালো বা ক্ষতিকর তা নির্ধারণের জন্য বায়োপসি বা অন্যান্য পরীক্ষা প্রয়োজন। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব। টিউমার গলানোর চেষ্টা করার আগে টিউমার কিভাবে ক্যান্সারে পরিণত হয় সম্পর্কে জানার পাশাপাশি চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলাই সেরা উপায়। রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসাই সুস্থতার চাবিকাঠি।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে টিউমার কিভাবে ক্যান্সারে পরিণত হয় তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে টিউমারের কারণ, প্রতিক্রিয়া ও চিকিৎসার পদ্ধতি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ
মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url