গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল সে প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয় সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ।
মেয়েদের গর্ভকালীন সময়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং ডায়াবেটিস তার মধ্যে অন্যতম। তাই আজকের পোস্টে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল সেই বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।
.
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল
গর্ভাবস্থা প্রত্যেক মায়ের জন্য আনন্দের একটি অধ্যায়। তবে এই সময় শরীরের নানা পরিবর্তন মা এবং শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। যা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ না করলে মা এবং শিশুর উভয়ের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। গর্ভাবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরিমাপ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের আজকের পোস্টে আমরা যা কিছু জানবো তা হল- গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কেন হয়, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর লক্ষণ, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর উপায়, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না, নরমাল, ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন কত নিতে হয় এ সকল বিষয়ের তথ্য সম্পর্কে। সাধারণত গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের স্বাভাবিক মাত্রা নির্ধারণের জন্য নিম্নলিখিত মানদণ্ড ব্যবহৃত হয়।
খালি পেটেঃ রক্তে শর্করার মাত্রা ৯৫ মিগ্রা/ডেসিলিটার বা তার কম হওয়া উচিত।
খাওয়ার এক ঘণ্টা পরঃ ১৪০ মিগ্রা/ডেসিলিটার বা কম।
খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরঃ ১২০ মিগ্রা/ডেসিলিটার বা কম।
এই মানগুলো ছাড়িয়ে গেলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। কারণ গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়, তা নির্ভর করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ওপর।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয়
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ না করলে শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। এ সমস্যার কারণে শিশুর ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা ম্যাক্রোসোমিয়া নামে পরিচিত। এটি স্বাভাবিক প্রসবকে জটিল করে তুলতে পারে এবং সি-সেকশনের সম্ভাবনা বাড়ায়। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের আরেকটি বড় ঝুঁকি হলো হাইপোগ্লাইসেমিয়া, যেখানে শিশুর জন্মের পর রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যন্ত কমে যায়।
এই অবস্থাটি শিশুর স্নায়ুতন্ত্রে গুরুতর ক্ষতি করতে পারে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না পেলে মারাত্মক হতে পারে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে শিশুর ফুসফুসের বিকাশে বাধা আসতে পারে, যার ফলে নবজাতকের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয়। এটি বিশেষত নির্ধারিত সময়ের আগেই জন্মানো শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
এছাড়া, গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে শিশুর জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা তার হৃদপিণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র এবং কিডনির গঠনে ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের শিশুরা ভবিষ্যতে টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতায় আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়া, ডায়াবেটিসের প্রভাব শিশুর জন্মের পরপরই হলুদ জ্বর বা জন্ডিসের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
এসব ঝুঁকি এড়ানোর জন্য গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মা ও শিশুর উভয়ের সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ডাক্তারি চেকআপ এবং নির্ধারিত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই শিশুর এই ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়ক।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কেন হয়
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস, বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস), একটি সাধারণ সমস্যা যা গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকে দেখা দিতে পারে। এটি তখনই হয় যখন গর্ভাবস্থার হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, বা শরীরের কোষ ইনসুলিন ব্যবহার করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিসের মূল কারণগুলো হলো।
হরমোনের পরিবর্তনঃ গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা থেকে একাধিক হরমোন উৎপন্ন হয়, যেমন হিউম্যান প্লাসেন্টাল ল্যাক্টোজেন (hPL), যা ইনসুলিন রোধী বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এই হরমোনগুলো গর্ভবতী নারীর রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ইনসুলিন হরমোন যখন এই অতিরিক্ত শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তখন ডায়াবেটিস দেখা দেয়।
ওজন বৃদ্ধিঃ গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। যাদের প্রাক-গর্ভকালীন ওজন বেশি, তাদের শরীরে ইনসুলিন রোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে, যা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
পারিবারিক ইতিহাসঃ যদি আপনার পরিবারে কারও ডায়াবেটিস থাকে, তবে আপনার জিনগত কারণে এই সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। পরিবারে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায়।
আগের গর্ভাবস্থার ইতিহাসঃ যেসব মায়ের আগের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ছিল, তাদের পরবর্তী গর্ভাবস্থায় এটি পুনরায় দেখা দিতে পারে। একইভাবে, যেসব শিশুর ওজন জন্মের সময় ৪ কেজির বেশি ছিল, সেসব মায়েরও এই ঝুঁকি বেশি থাকে।
জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসঃ অতিরিক্ত চিনি বা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার গ্রহণ, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গর্ভাবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়াও গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যান্য কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলো সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
বয়সঃ যেসব মায়ের বয়স ৩০ বছরের বেশি, তাদের মধ্যে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেশি।
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমঃ পিসিওএস থাকলে গর্ভাবস্থায় ইনসুলিন রোধের সম্ভাবনা বাড়ে।
ধূমপান বা অ্যালকোহলঃ গর্ভাবস্থায় ধূমপান বা মদ্যপানের কারণে ইনসুলিন রোধ এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে।
যমজ সন্তানঃ যমজ বা একাধিক ভ্রূণ থাকলে প্লাসেন্টার কার্যক্রম আরও বেশি হরমোন নিঃসরণ করে, যা ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস করে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল তা জেনে এবং সঠিক খাদ্য তালিকা মেনে চলা জরুরি। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কারণগুলো জানা থাকলে তা প্রতিরোধে আগেভাগেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষা এবং জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন গর্ভাবস্থার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস এর লক্ষণ
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের লক্ষণ অনেক সময় স্পষ্টভাবে বোঝা যায় না। এটি ধীরে ধীরে শরীরে বিকাশ লাভ করতে পারে, এবং কিছু ক্ষেত্রে তেমন কোনো উপসর্গ নাও থাকতে পারে। তবে নিচে উল্লেখিত কিছু লক্ষণ ডায়াবেটিসের সম্ভাব্য সংকেত দিতে পারে।
অতিরিক্ত পিপাসাঃ গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের অন্যতম সাধারণ লক্ষণ হলো সারাক্ষণ তৃষ্ণার্ত বোধ হওয়া। শরীরে অতিরিক্ত শর্করার কারণে কিডনি বেশি প্রস্রাব তৈরি করে, যা শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে। ফলে মায়েরা বেশি করে পানি পিপাসা অনুভব করেন।
ঘন ঘন প্রস্রাবঃ বিশেষত রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। এটি শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ অপসারণের জন্য কিডনির অতিরিক্ত কাজের কারণে ঘটে।
অতিরিক্ত ক্লান্তিঃ গর্ভাবস্থায় মায়েরা সাধারণত ক্লান্তি অনুভব করেন, তবে ডায়াবেটিস থাকলে এই ক্লান্তি অত্যন্ত বেশি হতে পারে। রক্তে শর্করা সঠিকভাবে কোষে পৌঁছাতে না পারায় শরীর পর্যাপ্ত শক্তি উৎপাদনে অক্ষম হয়।
অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাসঃ গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়া স্বাভাবিক, তবে ডায়াবেটিস থাকলে ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যদিকে, শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা হ্রাস পেলে অস্বাভাবিক ওজন কমে যেতে পারে।
দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়াঃ ডায়াবেটিস থাকলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে চোখের ভেতর তরল জমা হতে পারে, যা দৃষ্টিকে ঝাপসা করে তুলতে পারে।
অতিরিক্ত ক্ষুধাঃ শরীর যদি শর্করা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারে, তবে শক্তি ঘাটতি পূরণের জন্য মায়েদের অতিরিক্ত ক্ষুধা অনুভূত হতে পারে।
বারবার সংক্রমণঃ গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস থাকলে প্রস্রাবের নালী, ত্বক বা যোনিপথে বারবার সংক্রমণ হতে পারে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির একটি প্রভাব।
হাত-পা ফুলে যাওয়াঃ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ফলে গর্ভাবস্থায় অস্বাভাবিক ফুলে যাওয়া লক্ষ্য করা যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস সঠিকভাবে শনাক্ত এবং নিয়ন্ত্রণ না করলে মা এবং শিশুর উভয়ের জন্য জটিলতা দেখা দিতে পারে। এজন্য যদি এই লক্ষণগুলোর মধ্যে কোনোটি দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। ডাক্তারের সাহায্যে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল তা নির্ধারণ করুন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কমানোর উপায়
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক জীবনযাপন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে প্রথম ধাপ হলো স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে ফাইবার ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, যেমন শাকসবজি, ফল (কম গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত), বাদাম, এবং সম্পূর্ণ শস্য খাওয়া জরুরি। চিনি ও উচ্চ কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
শারীরিক সক্রিয়তা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিটের হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা গর্ভাবস্থার জন্য উপযোগী যোগব্যায়াম, রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে কার্যকর। তবে, যে কোনো ব্যায়ামের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। যদি খাদ্য ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হয়, তাহলে ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী ইনসুলিন বা ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে ইনসুলিনের মাত্রা পরিবর্তন করা ঝুঁকিপূর্ণ। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল তা নিশ্চিত করুন। গ্লুকোমিটার ব্যবহার করে ঘরে বসেই রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। পাশাপাশি, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও মানসিক চাপ মুক্ত জীবনযাপন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না
এসময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দিতে পারে, যা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এজন্য এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
- চিনি, মিষ্টি, কেক, পেস্ট্রি, মিষ্টি পানীয়, এবং মিষ্টিজাতীয় খাবার থেকে বিরত থাকুন। এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায়।
- উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) যুক্ত সাদা চাল ও ময়দা শর্করার মাত্রা বাড়াতে পারে। এগুলোর পরিবর্তে ব্রাউন রাইস বা আটা ব্যবহার করুন।
- ফাস্টফুড, প্রিজারভেটিভযুক্ত খাবার, এবং প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, যেমন চিপস, বিস্কুট বা ইনস্ট্যান্ট নুডলস, রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। এগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি।
- বাজারে পাওয়া সফট ড্রিঙ্কস, ফ্লেভারড মিল্ক এবং জুসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, যা গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ কঠিন করে তোলে। বাড়িতে তৈরি চিনি ছাড়া জুস বা ডাবের পানি বেছে নিন।
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, বিশেষ করে ট্রান্স ফ্যাট বা স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত খাবার যেমন ফ্রায়েড ফুড, ফাস্টফুড, এবং প্যাকেটজাত কেক এড়িয়ে চলুন। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা এবং কোলেস্টেরল বাড়ায়।
- আলু, কুমড়া, মিষ্টি আলু এবং ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার যতটা সম্ভব কম খান।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব খাবার এড়িয়ে চললে শর্করার মাত্রা সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ডায়াবেটিস কত হলে ইনসুলিন কত নিতে হয়
গর্ভাবস্থায় ইনসুলিন নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যা অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। এজন্য গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল তা জানা এবং নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইনসুলিনের পরিমাণ মূলত রক্তে শর্করার মাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণের মানদণ্ড সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- খালি পেটে রক্তে শর্করা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যদি রক্তে শর্করার মাত্রা ৯৫ মিগ্রা/ডেসিলিটার ছাড়িয়ে যায়, তবে ইনসুলিন গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।
- যদি খাওয়ার এক ঘণ্টা পর রক্তে শর্করা ১৮০ মিগ্রা/ডেসিলিটার বা তার বেশি হয়, তবে ইনসুলিনের ডোজ বাড়ানো হতে পারে।
- যদি খালি পেটে বা সকালে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তবে রাতে ইনসুলিন দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
- গর্ভাবস্থায় রক্তে শর্করার স্বাভাবিক মাত্রার পরিমাণ খালি পেটে ৪.৫-৫.৫ মিলিমোল/লিটার এবং খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে ৫-৬ মিলিমোল/লিটার। এসময়ে ইনসুলিনের ধরন ও পদ্ধতি
- দ্রুত-অভিনয়কারী ইনসুলিনঃ খাবারের আগে নেওয়া হয়। যেমনঃ নভোর্যাপিড বা হুমালোগ।
- দীর্ঘস্থায়ী ইনসুলিনঃ দিনে একবার নেওয়া হয়। যেমনঃ ইনসুলেটার্ড বা হুমুলিন আই।
- রোগীকে ৯০ ডিগ্রিতে সুই ঢুকিয়ে ইনজেকশন দিন। ইনজেকশনের পরে ১০ সেকেন্ড ধরে সুই ত্বকের নিচে ধরে রাখুন। চর্বিযুক্ত সমস্যা এড়াতে প্রতিবার ভিন্ন স্থানে ইনজেকশন দিন । ডাক্তারের নির্দেশ ছাড়া ইনসুলিনের মাত্রা পরিবর্তন করবেন না। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে ডোজ নির্ধারণ করুন।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মা ও শিশুর জন্য একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। তবে সঠিক নিয়ম, খাদ্যাভ্যাস, এবং চিকিৎসা মেনে চললে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কারণ গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে বাচ্চার কি ক্ষতি হয় তা নির্ভর করে ডায়াবেটিস কতটা ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তার ওপর। মায়েদের স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ার পাশাপাশি ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করলে গর্ভাবস্থার এই চ্যালেঞ্জ সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব। সঠিক যত্ন নিলে মা এবং শিশুর উভয়ের সুস্থতাই নিশ্চিত করা যায়।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসের কারণ, লক্ষণ, ঝুঁকি, কমানোর উপায় এবং ইনসুলিনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ
মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url