প্যারিস নগরী কোথায় এবং প্যারিসের দর্শনীয় স্থান সমূহ

প্যারিস নগরী কোথায় এবং প্যারিসের দর্শনীয় স্থান সে প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, আইফেল টাওয়ার ইতিহাস সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ। তাই আমাদের আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন প্যারিস নগরের অবস্থান, এর দর্শনীয় স্থান আইফেল টাওয়ার এবং ভ্রমণের খরচ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
প্যারিস-নগরী-কোথায়-এবং-প্যারিসের-দর্শনীয়-স্থান-সমূহ
পৃথিবীর অন্যতম আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় শহর প্যারিস। ভ্রমণপ্রিয় মানুষের জন্য এটি যেন এক স্বপ্নের গন্তব্য। তাই আজকের পোস্টে প্যারিস নগরী কোথায় এবং প্যারিসের দর্শনীয় স্থান সেই বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আপনারা ধৈর্য সহকারে আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

ভূমিকা

প্যারিস ফ্রান্সের রাজধানী এবং ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় এই শহরটি শুধুমাত্র ফ্রান্সের নয়, বরং পুরো বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ইতিহাস, সংস্কৃতি, স্থাপত্য এবং রোমান্সের অপরূপ মিশেলে তার সৌন্দর্য তুলে ধরে। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা যা কিছু জানবো তা হল- প্যারিসের রাজধানীর নাম কি, আইফেল টাওয়ার ইতিহাস, প্যারিস কোন মহাদেশে অবস্থিত, প্যারিস যেতে কত টাকা লাগে, প্যারিস নগরী কোথায় এবং প্যারিসের দর্শনীয় স্থান, প্যারিস কোন নদীর তীরে অবস্থিত এ সকল বিষয়ের তথ্য সম্পর্কে।

প্যারিসের রাজধানীর নাম কি

প্যারিস ফ্রান্সের রাজধানী এবং এটি ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ শহর। প্যারিস শুধুমাত্র ফ্রান্সের নয়, বরং পুরো বিশ্বের একটি বিশিষ্ট অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। শহরটি তার ঐতিহাসিক সৌন্দর্য, শিল্পকলার সমৃদ্ধি, এবং ঐতিহ্যময় স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত। প্রাচীনকাল থেকেই প্যারিস ফ্রান্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এটি "লাভ সিটি" বা "সিটি অফ লাইটস" নামে পরিচিত।

এখানে ১১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের বসবাস, যা প্যারিসকে ইউরোপের অন্যতম জনবহুল শহর করে তুলেছে। এটি ফ্রান্সের অর্থনীতির প্রধান কেন্দ্র এবং বহু বহুজাতিক কোম্পানির সদর দপ্তর এখানেই অবস্থিত। প্যারিসের ঐতিহাসিক ও আধুনিক স্থাপনাগুলো পর্যটকদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ল্যুভ মিউজিয়াম, নটর ডেম ক্যাথেড্রাল, চ্যাম্পস-এলিসি, এবং সর্বোপরি আইফেল টাওয়ার প্যারিসের গর্ব।

প্যারিসে শিল্প ও সংস্কৃতির এক সমৃদ্ধ মিশ্রণ রয়েছে। এখানে প্রতিবছর বহু আন্তর্জাতিক ফ্যাশন শো এবং আর্ট প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। প্যারিস শুধু একটি শহর নয়, এটি একসময় ফরাসি ইতিহাস এবং আধুনিকতা মিশ্রিত এক জীবন্ত প্রতীক। এতক্ষণ আমরা জানলাম প্যারিস নগরী কোথায় এবং প্যারিসের দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে এবার জানব।

আইফেল টাওয়ার ইতিহাস

প্যারিসের নাম শুনলেই প্রথম যে প্রতীকটি মনে আসে, তা হলো আইফেল টাওয়ার। এটি শুধু প্যারিসের প্রতীক নয়, পুরো ফ্রান্সের গর্ব। ১৮৮৯ সালে ফ্রান্স বিপ্লবের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত "এক্সপোজিশন ইউনিভার্সেল" নামক এক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীর জন্য এই টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। এটি নির্মাণের পেছনে ছিলেন গুস্তাভ আইফেল, একজন খ্যাতিমান ফরাসি প্রকৌশলী।

তার কোম্পানি এই প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৮৮৭ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং মাত্র দুই বছরের মধ্যেই এটি সম্পন্ন হয়। আইফেল টাওয়ার নির্মাণের সময় অনেক বিতর্ক এবং সমালোচনা হয়েছিল। অনেক শিল্পী এবং স্থপতি এর নকশাকে "বিকৃত ধাতব দানব" বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে, এই টাওয়ার সম্পন্ন হওয়ার পর এটি প্রশংসা কুড়াতে শুরু করে এবং পরিণত হয় প্যারিসের সবচেয়ে বড় আকর্ষণে।

টাওয়ারটির উচ্চতা ৩০০ মিটার এবং এটি একসময় পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপত্য হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে এটিতে একটি অ্যান্টেনা যোগ করার মাধ্যমে এর উচ্চতা বেড়ে হয় ৩৩০ মিটার। নির্মাণের সময় টাওয়ারটি প্রধানত লোহার কাঠামো দিয়ে তৈরি হয়েছিল, এবং এটি আজও স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে এক অবিশ্বাস্য উদাহরণ।

বর্তমানে, প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন পর্যটক এই টাওয়ার দেখতে আসেন। প্যারিস নগরী কোথায় এবং প্যারিসের দর্শনীয় স্থান এর কথা উঠলেই আমাদের আইফেল টাওয়ারের কথা মনে পড়ে। এর তিনটি পর্যায় রয়েছে, যেখানে দর্শকরা বিভিন্ন উচ্চতায় উঠে প্যারিসের অপূর্ব দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। টাওয়ারের শীর্ষ থেকে পুরো প্যারিস শহর যেন হাতের মুঠোয় চলে আসে।

আইফেল টাওয়ার ইতিহাস জানলে বোঝা যায় এটি শুধু একটি স্থাপত্য নয়, শিল্পকর্ম, প্রকৌশল এবং ঐতিহ্যের এক অপূর্ব মিশ্রণ। আইফেল টাওয়ারের ইতিহাস স্থাপত্যের, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক সমৃদ্ধির প্রতীক। যদিও প্রথমে এটি একটি প্রদর্শনীর জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল, এটি আজ প্যারিসের প্রাণ এবং ফ্রান্সের পরিচয়ের অংশ।

প্যারিস কোন মহাদেশে অবস্থিত

প্যারিস ইউরোপ মহাদেশে অবস্থিত, যা বিশ্বের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম মহাদেশ হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা প্যারিস নগরী কোথায় এবং প্যারিসের দর্শনীয় স্থান আলোচনার ধারাবাহিকতায় এটি কোন মহাদেশে অবস্থিত তা সম্পর্কেও জানতে পেরেছি। প্যারিস ফ্রান্সের রাজধানী এবং এটি দেশের উত্তর-মধ্যাঞ্চলে সাইন (Seine) নদীর তীরে অবস্থিত। প্যারিসের ভৌগোলিক অবস্থান একে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর করে তুলেছে।

ইউরোপ মহাদেশের কেন্দ্রে অবস্থিত হওয়ার কারণে এটি বাণিজ্য এবং পরিবহন ব্যবস্থার একটি প্রধান কেন্দ্র। এখান থেকে ইউরোপের অন্যান্য বড় শহর যেমন লন্ডন, বার্লিন, বা রোম সহজেই পৌঁছানো যায়। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকেই এটি একটি জনবসতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ধীরে ধীরে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে ওঠে এবং বর্তমানে এটি ইউরোপের একটি প্রধান পর্যটনকেন্দ্র।

প্যারিস তার সমৃদ্ধ ইতিহাস ও আধুনিকতাকে একত্রিত করে অনন্য সৌন্দর্য তুলে ধরেছে। এটি "সিটি অফ লাইটস" নামে পরিচিত এবং সারা বিশ্ব থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভ্রমণে আসেন। শহরটির আকর্ষণীয় স্থাপনাগুলোর মধ্যে আইফেল টাওয়ার, ল্যুভ মিউজিয়াম, নটর ডেম ক্যাথেড্রাল, এবং সাক্রে-কুর বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

প্যারিসের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং এর ভূমিকা ইউরোপের উন্নতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ফ্যাশন, শিল্পকলা, এবং শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে। প্যারিস শুধু ইউরোপের একটি শহর নয়, এটি একটি অনুভূতি। এর প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে শিল্প, ইতিহাস, এবং জীবনধারার এক চমৎকার মিশ্রণ। ইউরোপ মহাদেশের এই ঐতিহ্যবাহী শহরটি বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় এবং রোমাঞ্চকর স্থান।

প্যারিস যেতে কত টাকা লাগে

প্যারিস, ফ্রান্সের রাজধানী এবং বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য। প্যারিস ভ্রমণের খরচ নির্ভর করে আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা, সময়কাল, এবং ভ্রমণের ধরন উপর। এখানে আমরা বাংলাদেশ থেকে প্যারিস যাওয়ার সম্ভাব্য খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

বিমান ভাড়াঃ বাংলাদেশ থেকে প্যারিসে সরাসরি বা সংযোগকারী ফ্লাইটে যেতে হয়। বিমানের টিকিটের মূল্য ভ্রমণের সময় এবং এয়ারলাইনসের উপর নির্ভর করে। সাধারণত টিকিটের দাম ৭০,০০০ থেকে ১,২০,০০০ টাকার মধ্যে হয়। পিক সিজনে, যেমন গ্রীষ্মকাল বা বড় ছুটির সময় এই খরচ আরও বাড়তে পারে। টিকিট কিনতে আগাম বুকিং করলে সাশ্রয় করা সম্ভব।

থাকার খরচঃ প্যারিসে থাকার জন্য হোটেলের খরচও বৈচিত্র্যময়। বাজেট হোটেল বা হোস্টেলে প্রতি রাতের খরচ ৫০-১০০ ইউরো (৫,৮০০-১১,৬০০ টাকা) হতে পারে। মধ্যম মানের হোটেলে থাকার খরচ ১০০-২০০ ইউরো (১১,৬০০-২৩,২০০ টাকা) এবং বিলাসবহুল হোটেলের খরচ আরও বেশি হতে পারে।

খাবারের খরচঃ প্যারিসে খাবারের জন্য খরচ নির্ভর করে কোথায় খাচ্ছেন তার উপর। স্থানীয় ক্যাফেতে খেতে গেলে একটি খাবারের খরচ ১০-২০ ইউরো (১,১৬০-২,৩২০ টাকা)। তবে বিলাসবহুল রেস্তোরাঁয় খেলে খরচ অনেক বেড়ে যেতে পারে।

স্থানীয় পরিবহনঃ প্যারিসে ঘোরার জন্য মেট্রো, বাস, এবং ট্রেন সবচেয়ে সাশ্রয়ী এবং সহজ। প্রতিদিনের পরিবহন খরচ ৫-১০ ইউরো (৫৮০-১,১৬০ টাকা)। পর্যটকদের জন্য বিশেষ পাস বা টিকিট প্যাকেজ পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করলে খরচ কমে।

অন্যান্য খরচঃ প্যারিসের দর্শনীয় স্থান যেমন আইফেল টাওয়ার, ল্যুভ মিউজিয়াম, এবং নটর ডেম দেখার জন্য টিকিটের মূল্য যুক্ত করতে হবে। এছাড়া শপিং এবং স্থানীয় সংস্কৃতি উপভোগের জন্য অতিরিক্ত খরচ থাকতে পারে।

মোট খরচঃ সব মিলিয়ে প্যারিস ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ থেকে গড় খরচ হতে পারে ১,৫০,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ টাকা। এটি একটি প্রাথমিক হিসাব; আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করে খরচ কম বা বেশি হতে পারে।

সঠিক বাজেট নির্ধারণের জন্য আগেই ভালোভাবে পরিকল্পনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ভ্রমণ আরও স্মরণীয় এবং আরামদায়ক হবে।

প্যারিস নগরী কোথায় এবং প্যারিসের দর্শনীয় স্থান

প্যারিস, যা ফ্রান্সের রাজধানী, বিশ্বের অন্যতম রোমান্টিক এবং জনপ্রিয় শহর। এটি ফ্রান্সের উত্তর-মধ্যাংশে অবস্থিত এবং সাইন (Seine) নদীর তীরবর্তী স্থান। প্যারিস তার ইতিহাস, সংস্কৃতি, এবং স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিশ্বজুড়ে খ্যাত। ইউরোপ মহাদেশের একটি কেন্দ্রীয় শহর হিসেবে প্যারিস তার বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক এবং পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।
  • প্যারিসের দর্শনীয় স্থানঃ প্যারিস ভ্রমণের মূল আকর্ষণ হলো এর ঐতিহ্যপূর্ণ এবং বিশ্বখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলো। এখানে ভ্রমণ করলে যেসব স্থানে অবশ্যই যেতে হবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটিঃ
  • আইফেল টাওয়ারঃ প্যারিস এবং ফ্রান্সের প্রতীক হিসেবে আইফেল টাওয়ার অদ্বিতীয়। এটি ১৮৮৯ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন দর্শক এর আকর্ষণে মুগ্ধ হন। এই ৩০০ মিটার উচ্চতার স্থাপত্যে উঠে প্যারিস শহরের দৃশ্য উপভোগ করা ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা।
  • ল্যুভ মিউজিয়ামঃ বিশ্বের বৃহত্তম আর্ট মিউজিয়াম ল্যুভ, যেখানে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির বিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনা লিসা সংরক্ষিত রয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদে অবস্থিত এবং এখানে বিশ্বের বিভিন্ন সময়ের শিল্পকলার অসংখ্য নমুনা রয়েছে।
  • নটর ডেম ক্যাথেড্রালঃ গথিক স্থাপত্যের অনন্য উদাহরণ নটর ডেম ক্যাথেড্রাল। এটি তার বিস্ময়কর জানালা এবং সূক্ষ্ম নকশার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
  • সাক্রে-কুর ব্যাসিলিকাঃ মন্টমার্ত্র পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই গির্জা থেকে প্যারিস শহরের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। এর সাদা গম্বুজ এবং চমৎকার স্থাপত্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।
  • চ্যাম্পস-এলিসি এবং আর্ক দে ত্রিওম্ফঃ প্যারিসের সবচেয়ে বিখ্যাত রাস্তা চ্যাম্পস-এলিসি, যা বিলাসবহুল দোকান, রেস্তোরাঁ এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা দ্বারা ঘেরা। এর শেষে অবস্থিত আর্ক দে ত্রিওম্ফ ফরাসি সামরিক ইতিহাসের প্রতীক।
প্যারিস নগরী কোথায় এবং প্যারিসের দর্শনীয় স্থান নিয়ে জানলে বোঝা যায়, এই শহরটি শুধুমাত্র তার স্থাপত্য নয়, বরং তার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার জন্যও অনন্য। প্যারিসের প্রতিটি কোণায় লুকিয়ে আছে এক নতুন অভিজ্ঞতা যা ভ্রমণকারীদের স্মৃতিতে চিরস্থায়ী হয়ে থাকে।

প্যারিস কোন নদীর তীরে অবস্থিত

প্যারিস ফ্রান্সের সাইন (Seine) নদীর তীরে অবস্থিত, যা শহরের ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এই নদীটি প্যারিস শহরকে দুই ভাগে ভাগ করেছে—বাম তীর (Left Bank) এবং ডান তীর (Right Bank)। সাইন নদী শুধু প্যারিসের ভৌগোলিক গঠনেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি শহরটির জীবনধারা, ইতিহাস, এবং নান্দনিকতার সাথে গভীরভাবে জড়িত।

সাইন নদী এবং প্যারিসের ইতিহাসঃ সাইন নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রাচীনকালে রোমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বসতি ছিল, যা ধীরে ধীরে প্যারিস শহরের রূপ নেয়। মধ্যযুগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সাইন নদী প্যারিসের বাণিজ্য এবং পরিবহনের একটি মূল কেন্দ্র। আজও এটি প্যারিসের সাংস্কৃতিক ও পর্যটন কার্যক্রমের অন্যতম অংশ।

নদীর তীরের দর্শনীয় স্থানঃ সাইন নদীর তীর ধরে রয়েছে প্যারিসের কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

আইফেল টাওয়ারঃ সাইন নদীর কাছাকাছি অবস্থিত এই স্থাপত্যটি রাতের আলোয় আলোকিত হয়ে এক স্বপ্নময় পরিবেশ সৃষ্টি করে।

নটর ডেম ক্যাথেড্রালঃ এই ঐতিহাসিক গির্জা নদীর একটি দ্বীপে অবস্থিত, যা গথিক স্থাপত্যশৈলীর একটি চমৎকার উদাহরণ।

ল্যুভ মিউজিয়ামঃ সাইন নদীর তীরে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম এই আর্ট মিউজিয়াম, যা লাখো পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্র।

পন্ট দে আর্টসঃ এই বিখ্যাত ব্রিজটি শিল্পপ্রেমী এবং রোমান্টিক মুহূর্তের জন্য পরিচিত।

সাইন নদী ভ্রমণঃ সাইন নদীতে নৌভ্রমণ প্যারিসে আসা পর্যটকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ। বিভিন্ন ক্রুজের মাধ্যমে আপনি প্যারিস শহরের সৌন্দর্য আরও ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন। বিশেষ করে রাতে ক্রুজ ভ্রমণে সাইন নদীর তীরবর্তী স্থাপনাগুলো আলোর ঝলকানিতে দারুণভাবে উপস্থাপিত হয়।

প্যারিসের সাইন নদী শুধু একটি প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নয়, এটি প্যারিসের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি অংশ। প্যারিস কোন নদীর তীরে অবস্থিত জানতে গেলে বোঝা যায়, সাইন নদী শহরের ইতিহাস, নান্দনিকতা এবং রোমান্টিক পরিবেশকে এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। প্যারিস শুধু একটি শহর নয়, এটি একটি অভিজ্ঞতা।

প্যারিস নগরী কোথায় এবং প্যারিসের দর্শনীয় স্থান নিয়ে জানা মানেই ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং সৌন্দর্যের এক অন্যরকম ভ্রমণে যাত্রা। আইফেল টাওয়ার ইতিহাস এবং অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থান ভ্রমণের মাধ্যমে আপনি প্যারিসের প্রকৃত সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে পারবেন। সুতরাং, প্যারিসে ভ্রমণের জন্য পরিকল্পনা শুরু করুন এবং এই রোমান্টিক শহরের অভিজ্ঞতা উপভোগ করুন।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে প্যারিস নগরী কোথায় এবং প্যারিসের দর্শনীয় স্থান তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে প্যারিস নগরীর অবস্থান এবং দর্শনীয় স্থান আইফেল টাওয়ারের ইতিহাস ও ভ্রমণ খরচ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url