বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস উনিশ ও বিশ শতক

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস উনিশ ও বিশ শতক সে প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, উনিশ শতকের নারী শিক্ষা বিস্তার সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ। তাই আমাদের আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, উনিশ ও বিশ শতক এবং নারীদের অবদান সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
বাংলা-সাহিত্যের-ইতিহাস-উনিশ-ও-বিশ-শতক
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রাচীন হলেও উনিশ শতক থেকে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলি সাহিত্যে নতুন দিগন্তের সূচনা করে, যা সমাজের প্রতিচ্ছবি হিসেবে গড়ে ওঠে। তাই আজকের পোস্টে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস উনিশ ও বিশ শতক সেই বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আপনারা ধৈর্য সহকারে আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন। 

ভূমিকা

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস, বিশেষ করে উনিশ ও বিশ শতক, আমাদের সংস্কৃতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়কালে বাংলা সাহিত্য এক নতুন দিশা পেয়েছিল, যেখানে সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তনগুলি সাহিত্যের ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সেই সময়ে নারী শিক্ষা, ধর্ম সংস্কার, সাহিত্যিকদের ভূমিকা এবং নারীদের সাহিত্যে অংশগ্রহণ এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছিল। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা যা কিছু জানবো তা হল-বাংলা সাহিত্য, উনিশ শতকের নারী শিক্ষা বিস্তার, বাংলা সাহিত্যের যুগ বিভাগ, উনিশ বিশ শতকে নারী সাহিত্যিক, উনিশ শতকের বাংলায় ধর্ম সংস্কার, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস উনিশ ও বিশ শতক এ সকল বিষয়ের তথ্য সম্পর্কে।

বাংলা সাহিত্য

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস খুবই প্রাচীন। তবে উনিশ শতক থেকে বাংলা সাহিত্যকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা শুরু হয়। বাংলা সাহিত্যের প্রারম্ভিক পর্যায়ে কবিতা, নাটক, গল্প এবং ইতিহাসমূলক লেখালেখি ছিল। যা মধুরতা, ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতা এবং রাজকীয় গৌরবের ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়। তবে উনিশ শতকের শেষের দিকে এবং বিশ শতকের প্রথম দিকে বাংলা সাহিত্য এক নতুন গতি পায়, যখন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলন শুরু হয়।

এটি ছিল এক নতুন ভাবনার যুগ, যেখানে সাহিত্য সমাজের প্রতিচ্ছবি হিসেবে আবির্ভূত হতে শুরু করে। উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যে বিদ্যমান ধ্রুপদী ও শাস্ত্রীয় সাহিত্য শৈলী থেকে বের হয়ে, একদিকে উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ এবং নাটক নতুন জীবনীশক্তি লাভ করে। অন্যদিকে নাট্যশিল্প, প্রবন্ধ-লেখন, এবং কবিতার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিকপাল হিসেবে উন্মোচিত হয় অনেক সাহিত্যিক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, অক্ষয় কুমার দত্ত, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, এবং রামমোহন রায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। যাদের কলমে বাংলার সমাজ সংস্কৃতির মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছিল। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস উনিশ ও বিশ শতক সময়ে অনেক সমৃদ্ধি লাভ করেছে, যা আমাদের বর্তমান সাহিত্যের উন্নয়নের পথে প্রদর্শক।

উনিশ শতকের নারী শিক্ষা বিস্তার

উনিশ শতক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিশেষত নারীদের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছিল। ঐ সময়কাল ছিল একটি গুরত্বপূর্ণ সময়, যখন ভারতবর্ষে নারী শিক্ষা বিস্তারের আন্দোলন শুরু হয়। ধর্মীয় ও সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তন করার জন্য সমাজে নারীদের শিক্ষার গুরুত্ব বাড়াতে নানা ধরনের আন্দোলন ও তত্ত্ব উপস্থাপিত হতে থাকে।

নারী শিক্ষা বিস্তারে উনিশ শতকে বিদ্যমান ছিল এক ধ্রুপদী সমস্যা। বিদ্যাসাগর, রামমোহন রায় এবং অন্যান্য প্রগতিশীল সমাজ সংস্কারকরা তাদের কাজের মাধ্যমে নারীদের শিক্ষার অধিকারের পক্ষে সংগ্রাম করেছিলেন। নারীদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা, হোম স্কুল এবং বিশেষভাবে মেয়েদের জন্য লেখাপড়ার পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা হয়।

নারী শিক্ষা বিস্তারের প্রক্রিয়াটি একটি নতুন সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করে, যেখানে নারীদের সমান অধিকার এবং সামাজিক স্তরে উচ্চতা পাওয়ার একটি প্রয়োজনীয় ভূমিকা ছিল। এ শতকের নারী শিক্ষা বিস্তার কেবলমাত্র নারী সমাজের জন্য নয় বরং সামগ্রিকভাবে ভারতীয় সমাজের জন্য একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা ছিল।

এছাড়া উনিশ শতকের নারী শিক্ষার প্রসারে বিশাল অবদান রেখেছিলেন মহারাষ্ট্রের 'লক্ষ্মীবাঈ' প্রমুখ নারীরা। তাঁদের সংগ্রাম এবং উদ্যোগের ফলে ভারতীয় নারী সমাজের মধ্যে শিক্ষার একটি নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। যা পরবর্তীকালে বিশ শতকের নারী সাহিত্যিকদের পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে।

বাংলা সাহিত্যের যুগ বিভাগ

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিভিন্ন যুগের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়, যা বাংলা সাহিত্যকে তার শেকড় থেকে আধুনিক রূপে গড়ে তুলেছে। বাংলা সাহিত্যকে প্রধানত চারটি যুগে বিভক্ত করা যায়- প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ, রোমান্টিক যুগ এবং আধুনিক যুগ। এই যুগগুলো সাহিত্যের ধারা, পরিবেশ এবং সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে।

প্রাচীন যুগ (৮০০-১২০০ খ্রিস্টাব্দ): প্রাচীন বাংলায় সাহিত্যের মূলধারা ছিল চারণকবির লেখা কবিতা, যা সাধারণ মানুষের জীবনের দুঃখ, সুখ এবং প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত। এই সময়ে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক কবিতার প্রভাব ছিল প্রবল।

মধ্যযুগ (১২০০-১৮০০ খ্রিস্টাব্দ): মধ্যযুগে মুসলিম শাসনামলে বাংলায় মঙ্গলকাব্য, ধর্মীয় সাহিত্য এবং আধ্যাত্মিক ভাবনা প্রসারিত হয়। কাব্য সাহিত্যের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম্য জীবন এবং ধর্মীয় মূল্যবোধও সাহিত্যের অংশ হয়ে ওঠে। এই সময়ে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রভাবও সাহিত্যকর্মকে সমৃদ্ধ করে।

উনিশ শতক ও রোমান্টিক যুগ (১৮০০-১৮৫০): উনিশ শতকে বাংলা সাহিত্যে রোমান্টিক যুগের সূচনা হয়। যেখানে সাহিত্যে কাব্য, নাটক এবং অন্যান্য উপাদানের মাধ্যমে প্রকৃতি, প্রেম এবং মানবিক অনুভূতির বিশেষ স্থান তৈরি হয়। এই সময়ে বাংলা সাহিত্যে নতুন চিন্তাভাবনা, সমাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং সংস্কৃতির পরিবর্তন শুরু হয়। এটি ছিল সাহিত্যের মুক্তি এবং স্বাধীনতার প্রাথমিক দিগন্ত।

বিশ শতক ও আধুনিক যুগ (১৮৫০-বর্তমান): বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস উনিশ ও বিশ শতক আধুনিক যুগের এক বিশেষ অধ্যায়। এই সময়ে সাহিত্যে সামাজিক বাস্তবতা, অধিকার, নারী আন্দোলন, এবং আধুনিক চিন্তাধারার প্রভাব দৃশ্যমান হয়।

এ সময়ে নতুন ধরনের সাহিত্য যেমন প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক এবং ছোটগল্প জনপ্রিয় হয়। বিশেষ করে উনিশ শতকের নারী শিক্ষা বিস্তার সাহিত্যের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে সহায়ক হয় এবং সমাজে শিক্ষা ও সংস্কৃতির গুরুত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। এই যুগভিত্তিক বিশ্লেষণ বাংলা সাহিত্যের বিকাশ এবং পরিবর্তনকে সুস্পষ্টভাবে চিত্রিত করে, যেখানে সাহিত্যের প্রতিটি অধ্যায় নতুন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক উন্মোচন করেছে।

উনিশ বিশ শতকে নারী সাহিত্যিক

উনিশ ও বিশ শতকের বাংলায় নারীদের সাহিত্যিক ভূমিকা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। একসময় যেখানে নারীদের লেখালেখির ব্যাপারে সমাজে নানান প্রতিবন্ধকতা ছিল, সেখানে এই সময়কালে অনেক নারীর সাহিত্যে অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছিল, তারা শুধু পরিবারেই নয়, সাহিত্যেও সমান অধিকারী। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস উনিশ ও বিশ শতক সময়ে নারী শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে নারীরা সাহিত্যে তাদের অবদান রাখতে পেরেছে।

উনিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে বিশ শতকের শুরুর দিকে, মহিলা লেখিকা সমাজের পরিবর্তন ও নারী অধিকারের জন্য লেখালেখি করছিলেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কাব্যকন্যা 'মাধবী', 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের' কাছের বন্ধু কবি 'সুভদ্রা দেবী এবং শ্রীশ্রী 'কল্পনা সেনগুপ্ত'। এছাড়া, বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের' লেখা কবিতা ও নাটক অনেক সময় নারীর বাস্তবতাকে অবলম্বন করে লেখা হয়েছিল, যা নারী সমাজের মানসিকতা ও তাদের সংগ্রামের বিষয়বস্তুকে তুলে ধরেছিল।

বিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে আরো অনেক নারী সাহিত্যিকেরা তাঁদের কলমে নারীর মনের গভীরতা এবং সংগ্রামকে স্থান দিয়েছেন। তাঁদের লেখায় সমাজের নানা সমস্যা, নারীদের অধিকার, এবং শিক্ষার গুরুত্ব উঠে এসেছে। এই সময়কার নারীরা সাহিত্যে স্বাধীনতা অর্জন করেন এবং সমাজে তাদের মুল্যায়ন বাড়ে।

উনিশ শতকের বাংলায় ধর্ম সংস্কার

উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যে ধর্ম সংস্কারের একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। এই সময়কালটি ছিল সাম্প্রদায়িক সমস্যা, ধর্মীয় উন্মাদনা এবং সামাজিক সংস্কারের প্রতিবাদী আন্দোলনের জন্য। হিন্দু ধর্মের মধ্যে বিশেষত রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, এবং অন্যান্য সমাজ সংস্কারকরা প্রচলিত ধর্মীয় আচার-আচরণ ও প্রথাগুলির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।

তারা নারীর অধিকার, শিক্ষা এবং সমাজের উন্নয়ন নিয়ে নতুন চিন্তা ভাবনা প্রকাশ করেন। রামমোহন রায়, যাকে বাংলা নবজাগরণের প্রবর্তক বলা হয়, তিনি ধর্মীয় সংস্কারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি বেদ, পুরাণ এবং অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থগুলির অন্ধ অনুসরণ এবং কুসংস্কার বিরোধী ছিলেন। তিনি হিন্দু সমাজের পুরানো প্রথাগুলির বিরুদ্ধে ছিলেন, যেমন, সতীদাহ প্রথা এবং বাচ্চাদের বিয়ে।

তার উদ্যোগে, তিনি ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন, যা ছিল ধর্মীয় ভাবনা এবং সংস্কারের নতুন পথ। বিদ্যাসাগরের কাজও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নারীর শিক্ষা প্রসারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তার প্রচেষ্টায় ১৮৫৬ সালে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণ আইন পাস হয়।

এছাড়াও, তিনি হিন্দু ধর্মে নারী অধিকার সংক্রান্ত নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন এবং মহিলাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। বিবাহ ও তালাকের মতো প্রতিষ্ঠিত ধর্মীয় প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সংস্কারকরা নতুন পথের সন্ধান করেন। এই সময়কালেই প্রচলিত সামাজিক কুসংস্কার, যেমন- সতীদাহ, বাচ্চাদের বিয়ে এবং নারীদের নিম্নতর অবস্থান এই বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে আন্দোলন শুরু হয়। এগুলির বিরুদ্ধে সাহিত্যের মাধ্যমে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

এছাড়া, এই সময়কালেই বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন রচনায় ধর্মীয় সংশোধন, সমাজ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা এবং পুরনো প্রথার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করার জন্য লেখা হয়। রামমোহন রায়ের কাজ ও বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টা বাংলা সমাজকে নতুন দৃষ্টিকোণে দেখতে সাহায্য করেছিল এবং ধর্মীয় সংস্কার ও সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে সহায়ক হয়েছিল।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস উনিশ ও বিশ শতক

বাংলা সাহিত্যে উনিশ ও বিশ শতক সমৃদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। এই সময়কাল বাংলায় এমন সব বিপ্লবী পরিবর্তন ঘটেছিল, যা শুধুমাত্র সাহিত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে নয় বরং সমাজ, রাজনীতি এবং সংস্কৃতির অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। এই সময়কালে সাহিত্য, সমাজ এবং সংস্কৃতির অঙ্গনে ব্যাপক এক অন্তর্দৃষ্টি ঘটেছিল যা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সাহিত্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।

উনিশ শতকের শুরুতে বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণের সূচনা হয়, যা বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতির পূর্ণ বিকাশের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। এই সময়কার সাহিত্যিকরা সমাজের নানা সমস্যার বিরুদ্ধে লিখে নতুন ধরনের চেতনা সৃষ্টি করেন। রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো ব্যক্তিত্ব বাংলা সাহিত্যের গতিপথ বদলে দেন।

তাদের রচনাগুলি শুধু সাহিত্যিক চিন্তা নয়, সামাজিক পরিবর্তনেরও সহায়ক হয়। যার ফলে উনিশ শতকের নারী শিক্ষা বিস্তার বৃদ্ধি পায় এবং নারীদের সামাজিক মর্যাদাও যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। বিশ শতকটি ছিল আধুনিকতার জোয়ার, যেখানে বাংলা সাহিত্যের নতুন ধারা গড়ে ওঠে। এই সময়কার সাহিত্যিকরা মূলত সমাজের বাস্তবতা, মুক্তি, অধিকার, নারী আন্দোলন ও আধুনিক চিন্তাধারার প্রভাব শিখেছিলেন।

সাহিত্যে উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ এবং নাটক ইত্যাদি নতুন ধারার প্রবৃদ্ধি ঘটে, যা বাংলা সাহিত্যের বৈচিত্র্যকে নতুন দিগন্তে পৌঁছায়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস উনিশ ও বিশ শতক সময়ের নারী লেখকদের ভূমিকা এবং তাদের আন্দোলন, সমাজ সংস্কারের ব্যাপক কাজ, বাংলা সাহিত্যের সাহসী এবং স্বাধীন ভাবনার পথপ্রদর্শক হয়ে উঠেছিল।

এই সময়কালে সাহিত্যের নানা শাখায় নারীর উপস্থিতি বাড়ে এবং সামাজিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তাদের চিন্তা ও কর্মের বিকাশ ঘটে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় নারী শিক্ষা প্রসারের সাথে সাথে নারীরা সাহিত্যে নিজের অবস্থান তৈরি করেন। বিশেষভাবে, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখনী নারী মুক্তির আন্দোলনকে শক্তিশালী করে।

এছাড়া, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং অন্নদাশঙ্কর রায় সহ অন্যান্য সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্ম নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করে। বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যে সাহিত্যিকদের চিন্তা ও রচনায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্ব পায়। ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন এবং দেশভাগের প্রভাব বাংলা সাহিত্যে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

নজরুল ইসলাম এবং অন্যান্য বিপ্লবী সাহিত্যিকরা তাদের রচনাবলী মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ এবং সমাজতান্ত্রিক চেতনার প্রচার করেন। এই সময়কার সাহিত্য সমাজের প্রতিটি স্তরে পরিবর্তনের আহ্বান জানায়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস উনিশ ও বিশ শতক পরবর্তী যুগের সাহিত্যকে শুধু উত্সাহিত করেনি, বরং সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক পর্যায় পৌঁছে দেয়।

সাহিত্যের এই রূপান্তর ও বিকাশ বাংলার জনগণের চিন্তা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমাজের কাঠামো পরিবর্তন করতে সহায়ক হয়, যা আজকের বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এই সময়টা ছিল এক ইতিহাসিক যুগ, যেখানে সাহিত্য, সমাজ, ধর্ম এবং সংস্কৃতির সংমিশ্রণে পরিবর্তন এবং নতুন চিন্তাভাবনা বিকশিত হয়েছিল।

এই সময়ে নারী শিক্ষা বিস্তার, ধর্ম সংস্কার এবং নারীদের সাহিত্যে অবদান নিশ্চিতভাবেই সমাজের প্রতি নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গির জন্ম দিয়েছিল। উনিশ ও বিশ শতকের বাংলা সাহিত্য আজও আমাদের সাহিত্যের অমূল্য রত্ন হয়ে আছে, যা আমাদের সমাজের পরিবর্তনশীল ইতিহাস এবং সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস উনিশ ও বিশ শতক তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে উনিশ ও বিশ শতক এবং এক্ষেত্রে নারীদের অবদান সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url