ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় সে প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, গ্যাস্ট্রিক দূর করার দোয়া সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ। তাই আমাদের আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন গ্যাস্ট্রিক, আলসার রোগের লক্ষণ এবং গ্যাস হলে দূর করার ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
ঘরোয়া-পদ্ধতিতে-গ্যাস্ট্রিক-দূর-করার-উপায়
মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের খাবারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় এবং অন্যান্য কারণে অনেক সময় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। তাই আজকের পোস্টে ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় সেই বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আপনারা ধৈর্য সহকারে আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন। 

ভূমিকা

গ্যাস্ট্রিক সমস্যাটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অত্যন্ত সাধারণ, তবে এটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, তবে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা যা কিছু জানবো তা হল- গ্যাস্ট্রিক কি, গ্যাস্ট্রিক কত প্রকার, গ্যাস্ট্রিক দূর করার দোয়া, পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হলে করণীয় কি, গ্যাস্ট্রিক আলসার এর লক্ষণ, ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়, কোন কোন খাবার খেলে গ্যাস হয় এ সকল বিষয়ের তথ্য সম্পর্কে।

গ্যাস্ট্রিক কি

গ্যাস্ট্রিক হল পেটের ভেতরে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হওয়ার একটি প্রক্রিয়া, যা সাধারণত খাবার হজমের সময় ঘটে। যখন পাকস্থলীর এই অ্যাসিড স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন তা গ্যাস, পেটে ব্যথা, ঢেঁকুর ও অস্বস্তির কারণ হয়। এটি সাধারণত অনিয়মিত খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, মানসিক চাপ এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে ঘটে থাকে।

গ্যাস্ট্রিক কত প্রকার

গ্যাস্ট্রিক সাধারণত দুটি প্রধান ধরণে ভাগ করা হয়। তীব্র গ্যাস্ট্রিক এবং দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রিক। প্রতিটির লক্ষণ এবং কারণ আলাদা, যা শনাক্তকরণে সহায়ক।

তীব্র গ্যাস্ট্রিকঃ তীব্র গ্যাস্ট্রিক হঠাৎ শুরু হয় এবং অল্প সময়ের জন্য স্থায়ী হয়। এই গ্যাস্ট্রিক সৃষ্টির সাধারণ লক্ষণ গুলো হলো পেটে তীব্র ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, পেট ফোলা, ডায়রিয়া এবং জ্বর। এই গ্যাস্ট্রিক সৃষ্টির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে - সংক্রমণ, NSAIDs বা ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার, অতিরিক্ত মদ্যপান, মানসিক চাপ।

দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রিকঃ দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রিক ধীরে ধীরে শুরু হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে স্থায়ী হয়। এ ধরনের সমস্যা হলে পেটে ব্যথা, অম্বল বা বুক জ্বালাপোড়া, পেট ফোলা, বমি বমি ভাব, ক্ষুধা হ্রাস ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা যায়। এই গ্যাস্ট্রিক সৃষ্টির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে - এইচ. পাইলোরি (H. pylori) ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, অটোইমিউন রোগ (যেমন ক্রোন'স রোগ বা আলসারেটিভ কোলাইটিস) এবং NSAIDs এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার।

স্ট্রেস গ্যাস্ট্রিকঃ তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী গ্যাস্ট্রিক ছাড়াও আরও কিছু বিশেষ ধরনের গ্যাস্ট্রিক আছে, যা বিভিন্ন কারণের জন্য সৃষ্টি হয়। স্ট্রেস গ্যাস্ট্রিক মানসিক চাপের কারণে ঘটে, যেখানে শরীরের অতিরিক্ত টেনশনের প্রভাবে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দেখা দেয়।

অ্যালকোহলিক গ্যাস্ট্রিকঃ এটি অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে হয়, পেটে অস্বস্তি এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে। ঔষধ-প্ররোচিত গ্যাস্ট্রিক NSAIDs বা অন্য যেকোনো ওষুধের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার থেকে হয়, যা পেটে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া, H. pylori গ্যাস্ট্রিক H. pylori ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে হয়, যা পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে।

এই সব গ্যাস্ট্রিকের কারণ শনাক্ত করে সঠিক চিকিৎসা করা হলে, দ্রুত উপশম সম্ভব। কিছু কিছুর ক্ষেত্রে ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় রয়েছে। কারণ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়।

গ্যাস্ট্রিক দূর করার দোয়া

গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় এবং ধর্মীয় পন্থা অনুসরণ করা যায়। ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে, গ্যাস্ট্রিক সমস্যার জন্য দোয়া করা যেতে পারে। পবিত্র কোরআনে এবং হাদিসে শরীরের অসুস্থতা দূর করার জন্য দোয়ার উল্লেখ আছে। উদাহরণস্বরূপ, নিচের দোয়া পাঠ করা যেতে পারেঃ

"আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া মিন সাইয়্যিল আসকাম।"

এই দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা যায়। অতএব, ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় গুলো নিয়মিত মেনে চলুন এবং গ্যাস্ট্রিক দূর করার দোয়া পাঠ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন।

পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হলে করণীয় কি

পেটে অতিরিক্ত গ্যাস হওয়া একটি অস্বস্তিকর এবং বিরক্তিকর সমস্যা। এটি সাধারণত খাবার হজমে সমস্যা বা পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড উৎপাদনের ফলে ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক পদক্ষেপ নিলে দ্রুত স্বস্তি পাওয়া সম্ভব।
  • পেটে গ্যাসের সমস্যা দূর করতে গরম পানীয় অত্যন্ত কার্যকর। একটি গ্লাস গরম পানি ধীরে ধীরে পান করলে পাকস্থলীর অতিরিক্ত গ্যাস কমে যায়। এছাড়া আদা চা পান করলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং গ্যাস দ্রুত দূর হয়। আদার মধ্যে থাকা জিঞ্জারল উপাদান গ্যাস কমাতে সাহায্য করে।
  • যদি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হয়, তবে তেল-মসলা সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। মসলাযুক্ত খাবার পাকস্থলীতে অ্যাসিড বাড়ায় এবং হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই খাবারের তালিকায় সহজপাচ্য এবং স্বাস্থ্যকর খাবার রাখার অভ্যাস করা জরুরি।
  • লবঙ্গ একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা পেটে গ্যাস কমাতে সহায়ক। এতে থাকা ইউজেনল পাকস্থলীর অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অতিরিক্ত গ্যাস হলে ২-৩টি লবঙ্গ চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি পেটে আরাম এনে দেয় এবং গ্যাসের সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি দেয়।
  • পেটে গ্যাস হলে এক জায়গায় বসে থাকা বা শুয়ে থাকা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় হল এমন অবস্থায় হালকা হাঁটা বা ব্যায়াম করলে গ্যাস দ্রুত পাকস্থলী থেকে বের হয়ে যায়। এটি হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং পাকস্থলীর চাপ কমায়।
  • যোগব্যায়াম গ্যাসের সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকর। প্রণায়ামের মতো শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম পাকস্থলীর উপর চাপ কমায় এবং পেটের পেশিগুলোকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূরে থাকে।
  • অতিরিক্ত গ্যাস হলে এই পদক্ষেপগুলো দ্রুত প্রয়োগ করলে স্বস্তি পাওয়া যায়। তবে বারবার গ্যাসের সমস্যা হলে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। পেটে গ্যাস হওয়া এড়াতে সুষম খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

গ্যাস্ট্রিক আলসার এর লক্ষণ

গ্যাস্ট্রিক আলসার পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করার একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি সাধারণত পাকস্থলীর প্রাচীরের অভ্যন্তরে অ্যাসিডের প্রভাবে ঘটে। দীর্ঘমেয়াদি অম্লতা বা হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এর অন্যতম প্রধান কারণ। গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণগুলো দ্রুত শনাক্ত করা গেলে সময়মতো চিকিৎসা করা সম্ভব হয়।
  • গ্যাস্ট্রিক আলসারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো পেটে তীব্র জ্বালাপোড়া ও ব্যথা। সাধারণত খাবার খাওয়ার পর বা দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকার কারণে এই ব্যথা বাড়তে পারে। ব্যথাটি পাকস্থলীর অ্যাসিড ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে সরাসরি প্রভাব ফেলার কারণে হয়।
  • গ্যাস্ট্রিক আলসার থাকলে রোগী প্রায়ই বমি বা বমি বমি ভাব অনুভব করে। পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হওয়ার ফলে হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলস্বরূপ এই সমস্যা দেখা দেয়। বমির মাধ্যমে পাকস্থলীর অ্যাসিড বেরিয়ে যাওয়ায় সাময়িক স্বস্তি মিললেও এটি একটি গুরুতর লক্ষণ।
  • গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারণে খাবার খাওয়ার পর রোগীরা অস্বস্তি অনুভব করেন। পেট ফেঁপে ওঠা বা ভারী অনুভূতি সাধারণ একটি লক্ষণ। হজম প্রক্রিয়ার ব্যাঘাতের কারণে পাকস্থলীতে গ্যাস জমে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীরা প্রায়ই খাবার খাওয়ার প্রতি অনীহা প্রকাশ করেন, কারণ খাওয়ার পর ব্যথা ও অস্বস্তি বেড়ে যায়। ফলে খাদ্যগ্রহণ কমে যাওয়ায় শরীরের ওজন দ্রুত কমে যেতে পারে। এটি রোগীর শারীরিক দুর্বলতার অন্যতম কারণ।
  • গ্যাস্ট্রিক আলসারের সবচেয়ে বিপজ্জনক লক্ষণ হলো রক্তবমি বা কালো রঙের মল। পাকস্থলীর ক্ষত থেকে রক্তপাতের কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়। এটি প্রমাণ করে যে আলসারটি গুরুতর অবস্থায় পৌঁছেছে এবং তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন।
  • গ্যাস্ট্রিক আলসারের এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা না করলে পাকস্থলীর বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং চিকিৎসা মেনে চললে এই রোগ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়

গ্যাস্ট্রিক সমস্যাটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর এবং দৈনন্দিন জীবনে অনেকেই এর ভুক্তভোগী। এই সমস্যার জন্য প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন হতে পারে, তবে ঘরোয়া পদ্ধতিতেও গ্যাস্ট্রিক দূর করার কার্যকর উপায় রয়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাস্ট্রিক দূর করার দোয়া মানসিকভাবে প্রশান্তি দেয়। প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

আদার ব্যবহারঃ আদা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কমানোর জন্য একটি কার্যকর উপাদান। আদার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং পাকস্থলীর অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আদা চা বানিয়ে দিনে ২-৩ বার পান করলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সহজে দূর হয়।

লেবু পানিঃ লেবু পানির মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং হজমশক্তি বৃদ্ধির উপাদান। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে গ্যাস এবং অস্বস্তি থেকে মুক্তি মেলে। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিড লেভেল স্থিতিশীল রাখে।

তুলসী পাতাঃ তুলসী পাতা গ্যাস্ট্রিক দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পাকস্থলীর অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রতিদিন ২-৩টি তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে বা তুলসী চা পান করলে সমস্যা কমে।

লবঙ্গ ও এলাচঃ লবঙ্গ ও এলাচ একসঙ্গে চিবিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হ্রাস পায়। লবঙ্গ পাকস্থলীর অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং এলাচ হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এই দুটি উপাদান একত্রে ব্যবহার করলে গ্যাসের সমস্যা দ্রুত কমে।

মৌরিঃ মৌরি একটি হজমশক্তি বৃদ্ধিকারক উপাদান। খাবারের পরে মৌরি চিবিয়ে খেলে গ্যাস এবং ফোলাভাব কমে যায়। এটি পাকস্থলীর পেশিগুলোকে শান্ত করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

মধু ও দারুচিনিঃ মধু ও দারুচিনির মিশ্রণ গ্যাস্ট্রিক সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান। এক গ্লাস গরম পানিতে মধু ও দারুচিনি মিশিয়ে পান করলে গ্যাস দূর হয় এবং হজম ভালো হয়।

পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকর। পুদিনা চা পান করলে পাকস্থলীর চাপ কমে এবং গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।

ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়গুলো নিয়মিত মেনে চললে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার দীর্ঘমেয়াদী সমাধান দিতে পারে।

কোন কোন খাবার খেলে গ্যাস হয়

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা প্রতিরোধে খাবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে, যা পেটে অতিরিক্ত গ্যাস তৈরির কারণ হয়। এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চললে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা অনেকাংশে কমানো যায়। নিচে গ্যাস সৃষ্টিকারী কিছু প্রধান খাবার উল্লেখ করা হলো।
  • অতিরিক্ত তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। এই ধরনের খাবার হজমে সময় বেশি নেয় এবং পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি করে। ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত মশলাযুক্ত রান্না, এবং ফ্রাইড আইটেম পেটের অস্বস্তি বাড়ায় এবং গ্যাসের প্রধান কারণ হতে পারে।
  • কোমল পানীয় এবং সোডা জাতীয় পানীয় পেটে গ্যাসের সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে যেতে পারে। এতে থাকা কার্বন ডাইঅক্সাইড বুদবুদ পাকস্থলীতে জমে গ্যাসের চাপ বাড়ায়।
  • অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পেটের জন্য খুবই ক্ষতিকর। মসলা পাকস্থলীর অ্যাসিড বাড়িয়ে তোলে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে, গরম মসলা যেমন লাল মরিচ, গোলমরিচ, এবং জিরা অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
  • কিছু ডাল, বিশেষ করে মসুর ডাল এবং ছোলার ডাল, পাকস্থলীতে গ্যাস তৈরি করে। ডালের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক ফাইবার এবং শর্করা হজমে সময় বেশি নেয়, যা গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি করে। ডাল রান্নার সময় আদা বা হিং ব্যবহার করলে এই সমস্যা কিছুটা কমানো যায়।
  • ফাস্ট ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার পাকস্থলীতে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বার্গার, পিজ্জা, এবং চিপস জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় অনুসরণ করলে সমস্যার সমাধান সহজে সম্ভব। 
  • গ্যাস সৃষ্টিকারী এসব খাবার এড়িয়ে চললে পেটের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখা সম্ভব। পাশাপাশি, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে সুষম ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়ার অভ্যাস গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূরে রাখতে সহায়ক। যথাযথ খাদ্য নির্বাচন এবং নিয়মিত শরীরচর্চা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
  • গ্যাস্ট্রিক একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদি হলে চিকিৎসা প্রয়োজন। একইসঙ্গে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত জীবনযাপন গ্যাস্ট্রিক সমস্যা এড়াতে সাহায্য করে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায় তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে গ্যাস্ট্রিকজনিত বিভিন্ন রোগের লক্ষণ এবং তা দূরকরনের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url