মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় সে প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, মানসিক অবসাদের লক্ষণ কি সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ। তাই আমাদের আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন মানসিক অবসাদ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
মানসিক-অবসাদ-থেকে-মুক্তির-উপায়
মানসিক অবসাদের (Depression) কারণগুলো জটিল এবং বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়ে ঘটে। এগুলো মানুষভেদে ভিন্ন হতে পারে। তাই আজকের পোস্টে মানসিক অবসাদ সম্পর্কে এবং মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আপনারা ধৈর্য সহকারে আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

ভূমিকা

মানসিক অবসাদ (Depression) হলো একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা মানুষের অনুভূতি, চিন্তাভাবনা এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা যা কিছু জানবো তা হল- মানসিক অবসাদ কি, মানসিক অবসাদের লক্ষণ কি, মানসিক অবসাদের কারণ, মানসিক অবসাদ কি ভালো হয়, মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায়, মানসিক অবসাদের চিকিৎসা এ সকল বিষয়ের তথ্য সম্পর্কে।

মানসিক অবসাদ কি

মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশন হলো এক ধরনের জটিল মানসিক সমস্যা। এটি একটি সাধারণ কিন্তু জটিল অবস্থা, যার মাধ্যমে মানুষ দীর্ঘস্থায়ী মনখারাপ, আগ্রহ হারানো, এবং শক্তিহীনতার মতো লক্ষণ অনুভব করতে পারে। মানসিক অবসাদগ্রস্ত হলে মানুষ খুব ব্যস্ত জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং একাকীত্ব বোধ করে।

ব্যক্তিজীবনে নানা রকমের বিচ্ছিন্ন ঘটনা আমাদেরকে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত করে তুলতে পারে। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জন্য ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন দুর্ঘটনা বা এমন কোন ঘটনা যা আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে যায় কিংবা আমাদের ইন্দ্রগ্রাহী নয়এগুলো আমাদের মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ এবং অবসন্ন করে তোলে।

মানসিক অবসাদ এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্যতম হলো দুশ্চিন্তা এবং চাপ বা স্ট্রেস। আমরা কেহই দুশ্চিন্তা মুক্ত এবং চাপবিহীন জীবন যাপন করতে সমর্থ্য নাই বর্তমান সময়ে দাঁড়ালে আমরা প্রায় প্রত্যেকটা মানুষই বিভিন্ন রকম চাপ এবং দুশ্চিন্তার সম্মুখীন হয়ে জীবন যাপন করি তাই মানসিক অবসাদগ্রস্থ ব্যক্তির জন্য মানসিক চিকিৎসা এবং মানসিক শান্তি ওসুরক্ষা প্রদান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

মানসিক অবসাদের লক্ষণ কি

মানসিক অবসাদের লক্ষণ হল সেই সমস্ত লক্ষণ বা চিহ্ন বা বৈশিষ্ট্য যা দেখলে আমরা বুঝতে পারি যে ব্যক্তি মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত। মানসিক অবসাদের কারণে ব্যক্তির আচরণগত এবং শারীরিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। এছাড়াও ব্যক্তি সমাজ ও জীবন থেকে অনেকটা নিভৃতে চলে যায়। একাকিত্ব বোধ করে এবং নিঃসঙ্গতায় ভোগে। মানসিকভাবে হত বিহ্বল হয়ে পড়ে এবং বিভ্রান্তিতে ভুগতে থাকে। এছাড়াও মানসিক অবসাদের কিছু সাধারণ লক্ষণ চলুন জেনে নেই।
  • দীর্ঘস্থায়ী মন খারাপ বা দুঃখ অনুভব।
  • আগ্রহ বা আনন্দ হারিয়ে ফেলা।
  • ক্লান্তি বা শক্তিহীনতা।
  • ঘুমের সমস্যা (অতিরিক্ত ঘুমানো বা ঘুম কম হওয়া)।
  • আত্মবিশ্বাস বা নিজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাব।
  • অতিরিক্ত চিন্তা বা অপরাধবোধ।
  • মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে অসুবিধা।
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া।
  • মৃত্যু বা আত্মহত্যার চিন্তা।

মানসিক অবসাদের কারণ

মানসিক অবসাদ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় একটি অন্যরকম বড় বাধা। ব্যক্তির অবসাদগ্রস্থ হওয়ার জন্য বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। এ কারণগুলো আমি জেনে নেওয়া আমাদের প্রত্যেকটা ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আবশ্যক। আমাদের আশেপাশে কোন মানুষ যদি এরকম থাকে যিনি মানসিক অবসাদে ভুগছেন এবং মানসিক অবসাদের পরবর্তী প্রতিকারমূলক অবস্থা কিংবা প্রতিরোধমূলক অবস্থার জন্য আমাদের মানসিক অবসাদ এর কারণ সেগুলো আমাদের জেনে নেওয়া উচিত। প্রধান কারণগুলো নিচে তুলে ধরা হলো।
  • মস্তিষ্কে সেরোটোনিন, ডোপামিন বা নোরএপিনেফ্রিনের মতো রাসায়নিকের পরিমাণ কমে গেলে মানসিক অবসাদ হতে পারে।
  • যদি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ মানসিক অবসাদে ভুগে থাকেন, তবে এর ঝুঁকি বাড়ে।
  • যেমন প্রসব পরবর্তী সময়ে (Postpartum Depression) বা মেনোপজের সময়।
  • দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে অক্ষম বা মূল্যহীন মনে করা।
  • অতিরিক্ত অপরাধবোধ বা আত্মসমালোচনা।
  • মানসিক আঘাত পেলে অর্থাৎ শৈশবের ট্রমা, অবহেলা বা নির্যাতনের অভিজ্ঞতা।
  • পরিবার বা সঙ্গীর সাথে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো অবসাদের কারণ হতে পারে।
  • সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, একাকীত্ব বা বন্ধু-বান্ধবের অভাব।
  • অর্থনৈতিক চাপ অর্থাৎ দারিদ্র্য বা আর্থিক সমস্যার কারণে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ।
  • একঘেয়ে জীবনযাপন যেমন কাজের ব্যস্ততা, বিশ্রামের অভাব বা অবসরহীনতা।
  • দীর্ঘদিন ধরে ঘুম কম হওয়া বা অতিরিক্ত ঘুমানো।
  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বা অপুষ্টি বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস।
  • কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ।
  • প্রিয়জনের মৃত্যু বা বড় ধরনের ব্যক্তিগত ক্ষতি।
  • সম্পর্ক বিচ্ছেদ বা বিবাহবিচ্ছেদ।
  • চাকরি হারানো বা ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা।
  • কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মানসিক অবসাদ ডেকে আনতে পারে।
  • দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক অসুস্থতা যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস বা হার্টের রোগ।
  • মাদকদ্রব্য বা অ্যালকোহল আসক্তি।
  • অতিরিক্ত ধূমপান বা ওষুধের অপব্যবহার।
এগুলো ছাড়াও অবসাদের কারণ ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন হতে পারে। তাই মানসিক অবসাদের কোনো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

মানসিক অবসাদ কি ভালো হয়

হ্যাঁ মানসিক অবসাদ ভালো হয়। মানসিক অবসাদ (Depression) ভালো হতে পারে, তবে এর জন্য সঠিক চিকিৎসা, মানসিক সমর্থন, এবং জীবনধারার পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক অবসাদ একটি চিকিৎসাযোগ্য অবস্থা, এবং এর নিরাময়ের পথ ব্যক্তি-ভেদে ভিন্ন হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করলে অবসাদ কাটিয়ে ওঠা সহজ হয়।

অনেক সময়েই আমরা মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিকে সেরকম একটা গুরুত্ব দিই না। বলা ভালো আমরা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যকেই তেমন একটা গুরুত্ব দেই না। অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তিকে অনেক সময় আমরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার কারণে তাকে সেভাবেই রেখে দিই কিংবা তার প্রতি পরোয়া হীন হয়ে উঠি। মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি আমাদের সহমর্মী হওয়া উচিত।

মানসিক অবসাদ ভালো হওয়ার জন্য অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি যত্নশীল এবং স্নেহশুলভ হওয়া উচিত ।একমাত্র যত্নও সমর্থনশীলতা এবং তার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করার মাধ্যম দিয়ে আমরা ব্যক্তিকে অবসাদ থেকে বের করে আনতে পারি। মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তির যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ বা বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যারা কাজ করে থাকেন তাদের শরণাপন্ন হয়ে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া উচিত।

মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট অথবা ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট অর্থাৎ রোগের ধরন অনুযায়ী বা মানসিক অবসাদের লক্ষণ কি তা জেনে রোগের জটিলতা অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণের জন্য যাওয়া উচিত। চিকিৎসকেরা যে পরামর্শ দিবেন সে পরামর্শ মোতাবেক রোগীর সাথে আচরণ করা উচিত।

রোগী যাতে কোনভাবেই কোনরকম কোন আত্মনিয়ন্ত্রণহীন কোন কাজ করে না ফেলে তার জন্য সজাগ থাকতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন রকমের থেরাপি এবং চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে বিভিন্ন রকমের থেরাপি এবং চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োগ করে থাকেন মানুষের রোগীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য এবং চিকিৎসা করার জন্য।

সব ধরনের মানসিক অবসাদ ভালো না হলেও অধিকাংশ মানসিক সমস্যা থেকে চিকিৎসার মাধ্যমে মুক্তি লাভ করা যায়। মানসিক রোগের চিকিৎসা মূলত দীর্ঘসময়ব্যাপী চিকিৎসা। মানসিক অবসাদ থেকে সেরে উঠতে সময় লাগতে পারে। ধৈর্য ধরে চিকিৎসা এবং অভ্যাস বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে বেশিরভাগ মানুষই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।

মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায়

মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে আমরা সবাই যে বিষয়গুলোতে লক্ষ্য রাখতে পারি এখন সেগুলো আলোচনা করব। মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় জানা আমাদের প্রত্যেকের জন্যই অত্যাবশ্যক। বর্তমান সময়ে আমরা সবাই না বিভিন্ন কারণে মানসিক অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ি। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়েস পর্যন্ত প্রত্যেকেই কোনো না কোনো কারণে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়তে পারে।

তাই মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় এটা আমাদের সবারই জানা উচিত। এছাড়াও সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য হলেও আমাদের মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় জানতে হবে। নিম্নলিখিত উপায়গুলো কার্যকর হতে পারে মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে।
  • মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শঃ এটি মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে অন্যতম এবং প্রধান উপায়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা অবসাদের মাত্রা বুঝে উপযুক্ত থেরাপি বা ওষুধ প্রদান করেন।
  • থেরাপিঃ কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি (CBT): নেতিবাচক চিন্তাভাবনা বদলাতে সাহায্য করে। মনোচিকিৎসা (Psychotherapy):মানসিক সমস্যা চিহ্নিত করে তা মোকাবিলা করার কৌশল শেখায়।
  • ওষুধঃ অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ মস্তিষ্কে রাসায়নিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সহায়ক
  • ব্যায়াম ও শরীরচর্চাঃ প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগব্যায়াম করুন। এটি এন্ডোরফিন (ভালো লাগার হরমোন) নিঃসরণ বাড়িয়ে মানসিক অবস্থা উন্নত করে।
  • নিয়মিত ঘুমঃ প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘুমের সময় নির্ধারিত রাখুন।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ সুষম খাবার গ্রহণ করুন। ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও ক্যাফেইন কমানোর চেষ্টা করুন।
  • মেডিটেশন বা ধ্যানঃ প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন করুন।
  • ডায়েরি লেখাঃ আপনার অনুভূতিগুলো লিখে রাখুন। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
  • প্রকৃতির সাথে সময় কাটানোঃ পার্কে হাঁটা বা খোলা বাতাসে সময় কাটানো।
  • সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানোঃ পরিবার, বন্ধু এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটান। সমস্যাগুলো বিশ্বস্ত কারো সঙ্গে শেয়ার করুন। নতুন বন্ধু তৈরি করার চেষ্টা করুন।
  • নিজেকে ব্যস্ত রাখুনঃ নতুন কিছু শেখা বা সৃজনশীল কাজে নিজেকে যুক্ত করুন (যেমন, আঁকা, গান, রান্না, বা বই পড়া)। নিজের জন্য ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং তা অর্জনের চেষ্টা করুন।
  • ইতিবাচক চিন্তাঃ প্রতিদিন ভালো দিকগুলো নিয়ে ভাবুন। সমস্যার সমাধান খুঁজুন, সমস্যাগুলোকে ছোট ছোট ধাপে বিভক্ত করে সমাধানের চেষ্টা করুন।
  • প্রযুক্তির ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবহারঃ সামাজিক মাধ্যম বা স্ক্রিনের সময় কমিয়ে দিন। নিজেকে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতায় যুক্ত করুন।
  • মাদক বা অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুনঃ এগুলো সাময়িক আরাম দিলেও দীর্ঘমেয়াদে অবসাদ বাড়াতে পারে।
মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে সময় লাগে। ধৈর্য ধরে সঠিক পদ্ধতিতে কাজ করলে আপনি ধীরে ধীরে ভালো বোধ করবেন। সবার জন্য একটি পদ্ধতি কার্যকর না-ও হতে পারে, তাই যা আপনার জন্য কার্যকর, তা অনুসরণ করুন।

মানসিক অবসাদের চিকিৎসা

মানসিক অবসাদের (Depression) চিকিৎসা মূলত ব্যক্তির অবসাদের মাত্রা, কারণ এবং ব্যক্তিগত চাহিদার উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। এর জন্য প্রধানত তিনটি ধাপে চিকিৎসা করা হয়: থেরাপি, ওষুধ, এবং জীবনধারার পরিবর্তন।
  • কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপিঃ নেতিবাচক চিন্তা বা আচরণ পরিবর্তন করে ইতিবাচক চিন্তা গড়ে তোলা।অনুশীলনের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস বাড়ানো হয়।
  • মনোচিকিৎসাঃ ব্যক্তি তার মানসিক সমস্যা ও উদ্বেগের কারণ নিয়ে কথা বলতে পারেন। সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা মোকাবিলার কৌশল শেখানো হয়।
  • ইন্টারপারসোনাল থেরাপিঃ সম্পর্কজনিত সমস্যা মোকাবিলায় সাহায্য করে।সম্পর্ক উন্নত করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর।
  • অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধঃ যেমন, SSRI (Selective Serotonin Reuptake Inhibitors) বা SNRI।এগুলো মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং অন্যান্য রাসায়নিক ভারসাম্য ঠিক করতে সহায়তা করে। (NB:ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়।)
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসঃ যেমন ফল, শাকসবজি, প্রোটিন এবং পুরো শস্য গ্রহণ করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ক্যাফেইন ও চিনি কমানোর চেষ্টা করুন।
  • নিয়মিত ব্যায়ামঃ প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম মানসিক চাপ কমায়। যোগব্যায়াম এবং ধ্যান মানসিক প্রশান্তি আনে।
  • ঘুমের রুটিনঃ প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।ঘুমানোর আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না করা ভালো।
  • সামাজিক সংযোগঃ পরিবারের সাথে সময় কাটান। বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেলামেশা করুন। কোনো ক্লাব বা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।
  • সহায়ক কার্যক্রমঃ মেডিটেশন বা প্রার্থনা। নিজের অনুভূতি প্রকাশের জন্য ডায়েরি লেখা। প্রিয় শখ যেমন আঁকা, গান শোনা, বা বই পড়ায় মনোযোগ দিন।
  • গুরুতর ক্ষেত্রেঃ ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ECT)যখন ওষুধ বা থেরাপি কাজ করে না, তখন এটি ব্যবহার করা হয়।
  • মাদক বা অ্যালকোহল নির্ভরতা কমানোঃ মাদক বা অ্যালকোহল মানসিক অবসাদকে বাড়াতে পারে। এগুলো থেকে মুক্তি পেতে পেশাদার সাহায্য নিন।
  • জরুরি অবস্থায়ঃ যদি কেউ আত্মঘাতী চিন্তা করেন, তবে তাৎক্ষণিকভাবে পেশাদার সাহায্য নিন। হেল্পলাইন বা মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।
  • দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারের প্রভাব নিয়মিত ডাক্তার দেখিয়ে পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
  • ট্রান্সক্র্যানিয়াল ম্যাগনেটিক স্টিমুলেশন (TMS)মস্তিষ্কে চৌম্বক তরঙ্গ প্রেরণের মাধ্যমে কাজ করে।
মানসিক অবসাদের চিকিৎসায় ধৈর্য এবং নিয়মিত যত্নের প্রয়োজন। সময়মতো এবং সঠিক চিকিৎসা নিলে বেশিরভাগ মানুষ সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারেন।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে মানসিক অবসাদের লক্ষণ কি এবং মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে মানসিক অবসাদ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url