বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উপায়

বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উপায় এর প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, রেমিট্যান্স পাঠানোর নিয়ম সম্পর্কিত বিস্তারিত সব তথ্য সমূহ। তাই আমাদের আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন রেমিট্যান্স সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
বাংলাদেশে-রেমিট্যান্স-প্রবাহ-বৃদ্ধির-উপায়
আমাদের আশেপাশে অনেকেই রয়েছে যারা দেশের বাইরে থেকে কঠোর পরিশ্রম করে দেশে অর্থ পাঠায়। এ প্রক্রিয়াটিকে কি বলা হয় সেটা কি আমরা কেউ জানি? তাই আজকের পোস্টে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আপনারা ধৈর্য সহকারে আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

ভূমিকা

প্রবাসী বাঙালিরা তাদের কষ্টে অর্জিত অর্থ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশে প্রেরণ করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট স্থান দখল করে আছে।ফরেন রেমিটেন্সের এক বিরাট অংশ তাদের দখলে।সেজন্যই আজকের পোষ্টে আমরা জানব রেমিট্যান্স মানে কি, রেমিটেন্স কত প্রকার ও কি কি, রেমিট্যান্স পাঠানোর নিয়ম, রেমিট্যান্স থেকে সরকারের আয়, রেমিট্যান্স কিভাবে কাজ করে, বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উপায়, রেমিট্যান্স অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২৪ এর বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য সমূহ।

রেমিট্যান্স মানে কি

রেমিট্যান্স (Remittance) অর্থ হল প্রেরণ,প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ। বিদেশ থেকে আসা প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থকে রেমিটেন্স বলে। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, রেমিট্যান্স হল একটি প্রবাসী কর্মী বা বিদেশে কর্মরত আত্মীয়ের মাধ্যমে স্বদেশে অর্থের একটি অ-বাণিজ্যিক স্থানান্তর, যা পারিবারিক আয়ের উৎস। যেমন-এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে রেমিটেন্স স্থানান্তর, টেলিগ্রাফ, কারেন্সি বা ব্যাংক নোট হিসেবে, ব্যাংক ড্রাফেটের মাধ্যমে, মেল ট্রান্সফার,অন্যান্য মানি ট্রান্সফার মাধ্যমে প্রেরিত ফরেন এক্সচেঞ্জ।বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম মূল চালিকাশক্তি বলা যায় প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের অর্থ।

রেমিটেন্স কত প্রকার ও কি কি

রেমিটেন্স কি তার ধারণা আমরা পেয়েছি।এবার জেনে নেওয়া যাক, এই রেমিটেন্স কত ধরনের হয়?লেনদেনের উপর ভিত্তি করে রেমিট্যান্সকে দুইটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। এর শ্রেণী বিভাগ নিম্নে দেয়া হলো।

আরো পড়ুনঃ ইতালি স্টূুডেন্ট ভিসা যোগ্যতা ২০২৪

অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স: অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্স হল দেশের অভ্যন্তরে অর্থ স্থানান্তর। একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে, বিদেশে পড়াশোনা কিংবা কর্মরত ব্যক্তি যদি তার আয়ের থেকে যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেশে প্রেরণ করে তার পরিবার-পরিজনদের কাছে ,তা অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্স হিসেবে বিবেচিত হয়।
বহির্মুখী রেমিট্যান্স: দেশের বাইরে অর্থের স্থানান্তর হল বহির্মুখী স্থানান্তর ।পরিবারের লোকজন দেশ থেকে বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিকে যে অর্থ পাঠায় তবে তা বহির্মুখী রেমিটেন্সের উদাহরণ।

রেমিট্যান্স পাঠানোর নিয়ম

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গার্মেন্ট শিল্পের বিকাশ এবং রেমিট্যান্সের বৃদ্ধি প্রধান ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশে এবং মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশের প্রবাসীদের মধ্যে বেশিরভাগই দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন।

এটি অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য সহায়তা প্রদান করছে, বিশেষ করে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। কখনো কারো যদি রেমিটেন্স পাঠানোর প্রয়োজন হয় তবে অবশ্যই তাকে সঠিক নিয়মগুলি জেনে পাঠানো উচিত তা না হলে তার কষ্টের টাকা বিফলে চলে যেতে পারে। সেজন্যই আমাদেরকে সঠিকভাবে রেমিট্যান্স পাঠানোর নিয়মাবলী জানতে হবে।

একটি রেমিট্যান্স দেশের ভিতরে বা বাইরে এক পক্ষের দ্বারা অন্য পক্ষের কাছে অর্থ পাঠানো হয়। প্রবাসী প্রেরক নগদ অর্থ, চেক, মানি অর্ডার, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড বা ই-মেইল, ফোন, বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডেবিট নির্দেশনার সাহায্যে প্রেরক এজেন্টের কাছে রেমিট্যান্স পাঠান। প্রেরণকারী সংস্থা তারপর প্রাপকের দেশে অবস্থিত তার এজেন্টকে রেমিট্যান্স বিতরণের নির্দেশ দেয়।

রেমিট্যান্স থেকে সরকারের আয়

বিদেশ থেকে দেশে অর্থ স্থানান্তরের মাধ্যমে দেশের সরকারের অর্থনীতির অনেক উন্নয়নের পথে এগিয়েছে। সরকারের রাজস্ব খাতের উন্নয়নে রেমিটেন্স এর অবদান অনেক বেশি।বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে সচেতন থাকার ফলে, মাথাপিছু আয় এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। জাতীয় আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী-প্রেরিত অর্থ একটি দেশের রাজস্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি প্রধান চালিকাশক্তি।

তাই সরকার কালো বাজার থেকে এটিকে মুক্ত করতে প্রতি ১০০ টাকা রেমিট্যান্সে ২ টাকা অতিরিক্ত প্রণোদনা প্রদান করছে। গবেষণায় পাওয়া গেছে,২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশে মোট ২,৩৯২ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রেমিট্যান্স এসেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ২ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ।এর আগে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে, যা ছিল ২,৪৭৭ কোটি মার্কিন ডলার।

আরো পড়ুনঃ ইতালি স্টূুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং

রেমিট্যান্সই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রধান উৎস, যা আমদানির বিপরীতে বৈদেশিক দেনা পরিশোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসীরা মোট ২,৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এই সময়ে রেমিট্যান্স খাতে ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। বিশেষ করে করোনাকালীন বিগত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের ভূমিকা

প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। প্রতি বছর প্রায় ১৭-১৮ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গার্মেন্টস শিল্প থেকেও বৈদেশিক মুদ্রা আসে, তবে আমদানি খরচ বাদ দিলে প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের প্রকৃত অবদান অনেক বেশি।

প্রবাসীদের পাঠানো ফরেন এক্সচেঞ্জ শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে নয়, বরং অনেক বিলাস সামগ্রী, গাড়ি এবং উচ্চমানের আবাসন প্রকল্পেও ব্যবহৃত হয়। শহরের উন্নত জীবনযাত্রার জন্য প্রবাসীদের অর্থায়ন একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়া, বিদেশে চিকিৎসা ও পর্যটনের জন্য ব্যবহৃত বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রার বেশিরভাগ অংশও প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ থেকে আসে।

গ্রামীণ অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের প্রভাবঃ প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের কারণে গ্রামাঞ্চলেও আর্থিক সচ্ছলতার ছোঁয়া লেগেছে।একসময়ের দারিদ্র্যপীড়িত জনপদে এখন টেলিভিশন, ফ্রিজ, ওভেন, এবং মোবাইল ফোন পৌঁছে গেছে। রেমিট্যান্স পাঠানোর নিয়ম ফলে, দারিদ্র্যসীমা সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে এবং গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই উন্নত হয়েছে।

রিজার্ভের ভূমিকাঃ প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের কল্যাণে বাংলাদেশ বর্তমানে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রেখেছে। এর ফলে খাদ্য সংকট বা অন্যান্য আমদানি ঘাটতি মেটাতে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়।

সার্বিকভাবে, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে একটি প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।এটা বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম।

রেমিট্যান্স কিভাবে কাজ করে

প্রবাসীরা বিদেশ থেকে অনুমোদিত ও তালিকাভুক্ত ব্যাংক, মানি ট্রান্সফার অর্গানাইজেশন (এমটিও) এবং মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর মাধ্যমে বৈধ উপায়ে দেশে প্রিয়জনের বিকাশ একাউন্টে নিরাপদে ও সহজে আনলিমিটেড পরিমাণে টাকা পাঠাতে পারবেন। এর সাথে প্রাপক পাবেন ২.৫% সরকারি প্রণোদনা। প্রবাসীরা সাধারণত বিদেশ থেকে বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠান বিভিন্ন ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ কোম্পানির মাধ্যমে।

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো বিদেশে অবস্থিত এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বিশেষ চুক্তি করেছে, যার ফলে প্রবাসীরা সহজেই টাকা পাঠাতে পারেন। বিদেশি ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের টাকা ব্যাংক ড্রাফট বা টেলিগ্রাফিক ট্রান্সফারের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে পাঠায়। প্রাপ্ত অর্থ বাংলাদেশি মুদ্রায় রূপান্তর করে সরাসরি প্রাপকের কাছে হস্তান্তর করা হয় বা তার অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।

যদি প্রেরকের বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে ফরেন এক্সচেঞ্জ অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে প্রেরিত অর্থ সরাসরি সেই একাউন্টে জমা করা হয়। প্রেরক বা তার মনোনীত ব্যক্তি প্রয়োজনমতো সেই অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় রূপান্তর করতে পারেন বা বিদেশে বিশেষ অনুমোদিত কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করতে পারেন।

ডলার ডিপোজিট ও রেমিট্যান্স প্রক্রিয়া

বিদেশি ব্যাংক ও এক্সচেঞ্জ কোম্পানিগুলো প্রেরিত অর্থের সমপরিমাণ ডলার, সাধারণত লন্ডন, সিঙ্গাপুর বা নিউইয়র্কের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে। বিশেষ করে আরব দেশগুলো থেকে এভাবে রেমিট্যান্স পাঠানো হয়। ইউরোপ ও আমেরিকার কিছু ব্যাংক যারা বাংলাদেশি ব্যাংকগুলোর সাথে সরাসরি চুক্তিবদ্ধ নয়, তাদের মাধ্যমেও প্রবাসীরা ব্যাংক ড্রাফট বা ক্যাশিয়ার চেক পাঠাতে পারেন। এ প্রক্রিয়াকে ওপেন ড্রাফট বলা হয়, যা যে কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে প্রাপকের পরিচয় নিশ্চিত করার পর ভাঙানো যায়। তবে, এতে কিছু অতিরিক্ত চার্জ কাটা হয় কারণ ড্রাফট কালেকশন করতে সময় ও করণিক কাজের প্রয়োজন হয়।

ডাক বিভাগের মাধ্যমে রেমিট্যান্সঃ ব্রিটেন, কুয়েত এবং অন্যান্য কয়েকটি দেশের ডাক বিভাগের সাথে বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের চুক্তির আওতায় প্রবাসীরা সহজেই টাকা পাঠাতে পারেন। বাংলাদেশ পোস্ট অফিস দ্রুততম সময়ে প্রাপকের কাছে এ অর্থ পৌঁছে দিতে বিশেষ স্কিম চালু করেছে।

প্রবাসীদের নগদ অর্থ ও চেক আনার পদ্ধতিঃ প্রবাসীরা দেশে আসার সময় ব্যাংক ড্রাফট, ক্যাশিয়ার চেক, ট্রাভেলার্স চেক এবং নগদ ফরেন কারেন্সি নিয়ে আসতে পারেন। তারা এসব অর্থ তাদের ফরেন কারেন্সি একাউন্টে জমা করতে পারেন বা বাংলাদেশি মুদ্রায় রূপান্তর করতে পারেন। প্রধান মুদ্রা যেমন ডলার, পাউন্ড, ইউরো, রিয়াল, দিনার, এবং ইয়েন ব্যাংক ও মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো বিনা বাক্য বিনিময়ে কিনে নেয়। অন্য কম প্রচলিত মুদ্রাগুলো অনেক ব্যাংক কালেকশন ভিত্তিতে গ্রহণ করে এবং বিদেশে রূপান্তরের জন্য পাঠায়।

হুন্ডি এবং সরকারি প্রণোদনাঃ প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের একটি বড় অংশ হুন্ডির মাধ্যমে আসে। ধারণা করা হয়, প্রবাসীদের পাঠানো মোট অর্থের প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসে। সরকার এই প্রবণতা কমাতে প্রতি ডলারে অতিরিক্ত প্রণোদনা প্রদান করছে, যাতে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করতে উৎসাহিত হন। তবে, হুন্ডির মাধ্যমে আসা অর্থও অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক কল্যাণে অবদান রাখে।

বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উপায়

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রেমিট্যান্স একটি প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। সরকার রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তদারকি ও কার্যকর নীতি গ্রহণের ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বাড়ানোর জন্য আরও কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিম্নে উল্লেখিত সুপারিশসমূহ বিশ্লেষণ করা হলো।

হুন্ডি ব্যবসা প্রতিরোধঃ হুন্ডি অবৈধ অর্থ লেনদেনের একটি বড় চ্যানেল, যা বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উপায় ত্বরান্বিত করনে বাধা সৃষ্টি করে। হুন্ডি বন্ধ করতে প্রবাসীদের অফিসিয়াল চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহিত করতে হবে। বিশেষ করে যেখানে অধিকসংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসী বসবাস করেন, সেই শহরগুলোতে স্বল্প খরচে এক্সচেঞ্জ হাউজ স্থাপন করা যেতে পারে।

এক্সচেঞ্জ হাউজ শক্তিশালীকরণঃ বিদেশে ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠিত এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর কার্যকারিতা ও সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে। প্রতিটি এক্সচেঞ্জ হাউজের কার্যক্রম নিয়মিত পরিদর্শন এবং কর্মদক্ষতা অনুযায়ী পুরস্কার ও শাস্তির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

লিফলেট ও ফ্লায়ার বিতরণঃ প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎসাহিত করতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে লিফলেট ও ফ্লায়ার বিতরণ করা যেতে পারে, যাতে অফিসিয়াল চ্যানেলের সুফল তুলে ধরা হয়।

টেলিফোনের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধকরণঃ প্রবাসীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে অফিসিয়াল চ্যানেল ব্যবহারের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো প্রবাসীদের ফোন করে কুশলাদি বিনিময় ও অর্থ প্রেরণের সুবিধা সম্পর্কে জানাতে পারে।

ডোর টু ডোর প্রচারণাঃ এক্সচেঞ্জ হাউজের ম্যানেজারদের প্রবাসীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের অফিসিয়াল চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

দ্রুত ও সহজ সেবা প্রদানঃ প্রবাসীরা যেন বিদেশে বসেই দেশের ব্যাংকগুলোতে দ্রুত সেভিংস একাউন্ট এবং ফরেন কারেন্সি একাউন্ট খুলতে পারেন, সে ব্যবস্থা করতে হবে।এটা এক ধরনের বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উপায়।

প্রণোদনার ব্যবস্থাঃ যারা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠাবেন, তাদের জন্য বিশেষ ইনসেনটিভ দেওয়া যেতে পারে। যেমন, ছাড়কৃত ফি, পুরস্কার বা বিশেষ সুবিধা প্রদান করা।

IPO তে প্রবাসীদের জন্য কোটার ব্যবস্থাঃ বৈধ উপায়ে অর্থ পাঠানোর উৎসাহ দেওয়ার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য দেশের বিভিন্ন কোম্পানির প্রাথমিক শেয়ারের ক্ষেত্রে বিশেষ কোটার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।

শুল্কমুক্ত কাস্টম সুবিধাঃ বছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যক্তিদের জন্য দেশে আসার সময় বিমানবন্দরে শুল্কমুক্ত কাস্টম সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে।

সেবার মান ও গতি বৃদ্ধিঃ দেশে রেমিট্যান্স বিতরণকারী ব্যাংক শাখাগুলোর সেবার মান ও গতি বাড়াতে নিয়মিত মনিটরিং ও পরিদর্শন প্রয়োজন। বিলম্বিত সেবা প্রদানকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মানি এক্সচেঞ্জ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণঃ দেশে লাইসেন্সধারী মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে যাতে তারা নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসরণ করে।

দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধিঃ দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব। এজন্য নতুন নতুন বাজার সন্ধান করতে হবে এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাঃ প্রবাসীদের আর্থিক কল্যাণে একটি আলাদা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এটি রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা প্রদান করবে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি করতে হলে প্রবাসীদের আরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং তাদের জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা ও সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে এই খাতের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির উপায় এর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে রেমিট্যান্স সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url