অ্যালগরিদম তৈরির শর্ত বা নিয়ম সম্পর্কে জানুন
অ্যালগরিদম তৈরির শর্ত বা নিয়ম সে প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, অ্যালগরিদম কাকে বলে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ। তাই আমাদের আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন অ্যালগরিদম, এর ব্যবহার, প্রয়োজনীয়তা এবং তৈরির শর্তাবলী ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
সাধারণত কোন সময়ে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট নিয়মাবলী বা অ্যালগরিদমের প্রয়োজন হয়। তাই আজকের পোস্টে অ্যালগরিদম তৈরির শর্ত বা নিয়ম সেই বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আপনারা ধৈর্য সহকারে আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।
ভূমিকা
অ্যালগরিদম হলো একটি সুসংহত প্রক্রিয়া বা ধাপসমূহের সমষ্টি, যা কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য নির্ধারিত নিয়ম বা শর্ত অনুসারে পরিচালিত হয়। অ্যালগরিদম কাকে বলে তা সহজে বোঝার জন্য বলা যায়, এটি হলো এমন এক কাঠামো যা স্পষ্ট নির্দেশনা দেয় কিভাবে একটি নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করতে হবে। এর বৈশিষ্ট্য, অ্যালগরিদম তৈরির শর্ত বা নিয়ম, কাজ, ব্যবহার, সুবিধা এবং এর প্রয়োজনীয়তা প্রতিটি ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যালগরিদমের সাহায্যে আমরা জটিল সমস্যা সমাধান করতে পারি সহজে ও দ্রুত।
অ্যালগরিদম কাকে বলে
অ্যালগরিদম একটি গাণিতিক বা প্রোগ্রামিং পদ্ধতি যা কোনো নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য নির্ধারিত নিয়মাবলী অনুসরণ করে। এটি একটি নির্দিষ্ট শুরু এবং শেষের ধারা নিয়ে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, রান্নার রেসিপি একটি সাধারণ অ্যালগরিদম; যেখানে একাধিক ধাপ একত্রে কাজ করে একটি নির্দিষ্ট ফলাফল আনে।
অন্য কথায়, নিয়মের একটি সেট, যা সঠিকভাবে ক্রিয়াকলাপের একটি ক্রমকে সংজ্ঞায়িত করে। এই অ্যালগরিদম তৈরির শর্ত বা নিয়ম কম্পিউটার প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে নির্ধারিত আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি বা রান্নার বইয়ের রেসিপি পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। এমনকি এমন প্রোগ্রামও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, যা সাংখ্যিক গণনা করে না। অ্যালগরিদম অনেক ধরনের হতে পারে যেমন: Sorting algorithms, Hashing algorithms, Basic Data Structures ইত্যাদি।
সাধারণত, একটি প্রোগ্রামকে অ্যালগরিদম বলা যায় তখনই, যখন এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎকার্যক্রম সম্পন্ন করে এবং থেমে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে, যেমন নির্দিষ্ট ধরনের সিস্টেমে অসীম লুপ পছন্দনীয় হতে পারে। অ্যালগরিদমের একটি পরিচিত উদাহরণ হলো ইউক্লিডীয় অ্যালগরিদম, যা দুটি পূর্ণসংখ্যার সর্বাধিক সাধারণ ভাজক (Greatest Common Divisor, GCD) নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়।
এটি একটি নির্দিষ্ট নিয়ম ও পদ্ধতির মাধ্যমে ফলাফল প্রদান করে। অ্যালগরিদমের মূল উদ্দেশ্য হলো সমস্যার সমাধান। এটি এমন একটি কাঠামো সরবরাহ করে যা কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ায় কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, গুগল সার্চ ইঞ্জিনে যেভাবে ফলাফল দেখানো হয়, তা একটি অ্যালগরিদমের ওপর নির্ভরশীল।
অ্যালগরিদম এর বৈশিষ্ট্য
অ্যালগরিদম একটি সুসংগঠিত পদ্ধতি, যা কোন নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য ধাপে ধাপে নির্দেশনা প্রদান করে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এটি নির্ভুল এবং কার্যকর করে তোলে।
- সুস্পষ্টতা (Definiteness): প্রতিটি ধাপ বা নির্দেশ সুস্পষ্ট এবং নির্ভুলভাবে সংজ্ঞায়িত হয়। অ্যালগরিদমের প্রতিটি ধাপ এমনভাবে লেখা হয়, যাতে তা কোনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে এবং সহজে অনুসরণযোগ্য হয়।
- সীমাবদ্ধতা (Finiteness): অ্যালগরিদমের কার্যপ্রক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হতে হবে। অর্থাৎ, এটি অনন্তকাল ধরে চলতে পারে না। সঠিকভাবে ডিজাইন করা অ্যালগরিদম সর্বদা নির্দিষ্ট সংখ্যক ধাপের মধ্যেই শেষ হয়।
- ইনপুট ও আউটপুট (Input and Output): প্রতিটি অ্যালগরিদম একটি বা একাধিক ইনপুট গ্রহণ করে এবং অন্তত একটি আউটপুট প্রদান করে। ইনপুট হচ্ছে সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক উপাত্ত এবং আউটপুট হলো সমাধানের ফলাফল।
- কার্যকারিতা (Effectiveness): একটি কার্যকর অ্যালগরিদম সর্বদা নির্ভুল ফলাফল প্রদান করে। এর প্রতিটি ধাপ সম্পাদনের জন্য সহজ নির্দেশনা এবং সীমিত সময় লাগে। অ্যালগরিদমের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য ধাপগুলো সঠিকভাবে সংগঠিত থাকতে হয়।
- তর্কযোগ্যতা (Logical Correctness): প্রতিটি ধাপ যৌক্তিকভাবে সঠিক এবং নির্ভুল হওয়া আবশ্যক। তর্কযোগ্যতার মাধ্যমে নিশ্চিত হয় যে, অ্যালগরিদমের কাজগুলো নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকর।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো নিশ্চিত করে যে, অ্যালগরিদম তৈরির শর্ত বা নিয়ম এবং এর কাঠামো অনুসরণ করে কাজ সম্পন্ন করবে এবং বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে এটি জটিল সমস্যার সমাধান সহজতর এবং নির্ভুলভাবে করতে পারে।
অ্যালগরিদম এর কাজ কি
আমরা আগে, অ্যালগরিদম কাকে বলে? প্রশ্নের উত্তর থেকে জানতে পেরেছি, অ্যালগরিদম হলো একটি নির্দিষ্ট ধারা বা প্রক্রিয়া যা সমস্যার সমাধান, তথ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং কার্য সম্পাদনে ব্যবহৃত হয়। এটি এমন একটি কাঠামো, যা যৌক্তিক ধাপে বিভক্ত হয়ে নির্ধারিত নিয়ম ও নির্দেশনা অনুসরণ করে কাজ সম্পন্ন করে। অ্যালগরিদম মূলত বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর সমাধান প্রদান করে এবং সিস্টেমের কার্যকারিতা উন্নত করে।
- তথ্য প্রক্রিয়াকরণ অ্যালগরিদমের অন্যতম কাজ হলো তথ্য বিশ্লেষণ এবং প্রাসঙ্গিক তথ্য বের করা। উদাহরণস্বরূপ, বড় ডেটা সেট থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শনাক্ত করা বা ছাঁটাই করার জন্য অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়। যেমন, একটি ই-কমার্স সাইটে অ্যালগরিদম ব্যবহার করে গ্রাহকের পছন্দ অনুযায়ী প্রস্তাবিত পণ্য দেখানো হয়।
- অ্যালগরিদম সমস্যা সমাধানের একটি প্রক্রিয়া। উদাহরণস্বরূপ, একটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রতিটি ধাপ নির্দিষ্ট ও যৌক্তিক নিয়ম মেনে অনুসরণ করতে হয়। প্রতিটি ধাপে অ্যালগরিদম এমনভাবে কাজ করে, যাতে এটি সঠিক এবং কার্যকর সমাধানে পৌঁছায়।
- অ্যালগরিদম বিভিন্ন কাজ সম্পাদনে দক্ষ। উদাহরণস্বরূপ, কোনো নির্দিষ্ট সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কীভাবে ব্যবহারকারীর ডেটা প্রক্রিয়া করবে, তা নির্ধারণ করার জন্য অ্যালগরিদম ব্যবহৃত হয়। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যে, প্রতিটি ধাপ কার্যকর এবং সময়োপযোগী হয়।
- অ্যালগরিদমের প্রতিটি ধাপে স্পষ্টতা থাকা জরুরি। প্রতিটি নির্দেশ সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত থাকে, যাতে তা সহজে অনুসরণযোগ্য হয়। একইসঙ্গে এটি কার্যকর হতে হবে, অর্থাৎ অল্প সময়ে সঠিক সমাধান প্রদান করতে হবে।
- একটি পরিচিত উদাহরণ হলো সার্চ অ্যালগরিদম, যা ইন্টারনেটে দ্রুত ও নির্ভুল ফলাফল দেখাতে সক্ষম। তাছাড়া, ইউক্লিডীয় অ্যালগরিদম দুটি সংখ্যার সর্বাধিক সাধারণ ভাজক (GCD) নির্ণয়ে ব্যবহৃত হয়।
- অ্যালগরিদম মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে শুরু করে উন্নত প্রযুক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি আমাদের কাজকে সহজ, কার্যকর এবং সঠিক করে তোলে।
অ্যালগরিদম কেন ব্যবহার করা হয়
অ্যালগরিদম হলো সুনির্দিষ্ট এবং ধারাবাহিক নির্দেশাবলীর একটি সীমিত ক্রম, অর্থাৎ অ্যালগরিদম তৈরির শর্ত বা নিয়ম যা সাধারণত নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান বা গণনা সম্পাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি গণিত এবং কম্পিউটার বিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা, যা বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সমাধান করতে ব্যবহৃত হয়। মূলত, অ্যালগরিদম ডেটা প্রক্রিয়াকরণ এবং গণনার নির্দিষ্টকরণ হিসেবে কাজ করে।
ধরুন, আপনি চা তৈরি করতে চান। চা তৈরির জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট ধাপ বা নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। যেমনঃ প্রথমে একটি পাত্রে পানি ঢেলে তা চুলায় রাখতে হবে এবং চুলায় আগুন দিতে হবে। পানি গরম হয়ে গেলে তাতে চা পাতা ও প্রয়োজনমতো চিনি যোগ করতে হবে। এরপর এই মিশ্রণ পরিবেশন করতে হবে। এই প্রতিটি ধাপ আসলে একটি চা তৈরির অ্যালগরিদম।
ঠিক এভাবেই, কম্পিউটার বিজ্ঞানে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অ্যালগরিদম প্রয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি সফটওয়্যারে ডেটা সাজানো, খোঁজ করা, বা জটিল গণিত সমাধান করতে হলে সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে কাজ করতে হয়। অ্যালগরিদম সেই নিয়মাবলীর কাঠামো দেয়। এটি কার্যকরী সমাধানের জন্য সময় ও সম্পদের অপচয় কমিয়ে আনে এবং সমস্যার দ্রুত ও নির্ভুল সমাধান নিশ্চিত করে।
অ্যালগরিদম শুধুমাত্র কম্পিউটার বিজ্ঞানে সীমাবদ্ধ নয়। দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজ, যেমন রান্না, কাজের পরিকল্পনা বা কোনো কাজের প্রক্রিয়া অনুসরণ করাও এক ধরনের অ্যালগরিদম। সুতরাং, এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর একটি মাধ্যম, যা সমস্যার সমাধানকে সহজ এবং কাঠামোগত করে।
অ্যালগরিদম এর সুবিধা সমূহ
অ্যালগরিদম এমন একটি পদ্ধতি, যা জটিল সমস্যার সমাধান দ্রুত এবং কার্যকরভাবে করতে সহায়তা করে। এটি নির্দিষ্ট নিয়ম ও যুক্তির ভিত্তিতে কাজ করে। অ্যালগরিদম তৈরির শর্ত বা নিয়ম মেনে তৈরি অ্যালগরিদম বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে, তাই এটি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনেক ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কিছু মূল কারণ নিচে তুলে ধরা হলোঃ
- অ্যালগরিদম বড় ও জটিল সমস্যাকে ছোট ধাপে ভাগ করে দ্রুত সমাধান প্রদান করে। এটি কার্যপ্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে এবং সময় সাশ্রয় করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সার্চ অ্যালগরিদম ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে বৃহৎ ডেটাসেট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করা যায়।
- অ্যালগরিদম কার্যক্রমে দক্ষতা এবং গতি বৃদ্ধি করে। এটি বড় কাজগুলোকে সুসংগঠিত পদ্ধতিতে সম্পন্ন করে, যার ফলে ব্যবহারকারীর সময় এবং প্রচেষ্টা উভয়ই বাঁচে। উদাহরণস্বরূপ, ই-কমার্স ওয়েবসাইটে প্রস্তাবিত পণ্য দেখানোর জন্য অ্যালগরিদম ব্যবহার করা হয়, যা গ্রাহকের অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে।
- অ্যালগরিদম কম্পিউটার সিস্টেমে বিভিন্ন কাজ সহজে সম্পন্ন করতে সহায়ক। এটি ডেটা প্রসেসিং, তথ্য বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য কার্যক্রমে প্রোগ্রামিং সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। উদাহরণস্বরূপ, ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে অ্যালগরিদম ব্যবহার করে দ্রুত তথ্য পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণ করা যায়।
- অ্যালগরিদম নির্ভুল ফলাফল প্রদানে সক্ষম। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়, যাতে পুনরাবৃত্তি বা একই কাজ বারবার করার প্রয়োজন না হয়। উদাহরণস্বরূপ, গাণিতিক সমস্যার সমাধানে অ্যালগরিদম সঠিক উত্তর প্রদান করে এবং কোনো ভুলের সম্ভাবনা থাকে না।
ব্যাংকিং সেক্টরে লেনদেন বিশ্লেষণ, স্বাস্থ্যসেবায় রোগ নির্ণয়, এবং ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনে তথ্য অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে অ্যালগরিদম ব্যবহৃত হয়। অ্যালগরিদম আমাদের দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে উন্নত প্রযুক্তিগত কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটির সঠিক প্রয়োগ জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতিতে সহায়ক।
অ্যালগরিদম তৈরির শর্ত বা নিয়ম
একটি কার্যকর অ্যালগরিদম তৈরির জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত ও নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শর্তগুলো নিশ্চিত করে যে অ্যালগরিদম সঠিক, কার্যকর এবং নির্ভুলভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। অ্যালগরিদম তৈরির প্রধান নিয়ম ও শর্তগুলো নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।
- প্রতিটি ধাপ স্পষ্ট, নির্ভুল এবং সহজবোধ্য হতে হবে। ধাপগুলো এমনভাবে সাজানো উচিত, যাতে ব্যবহারকারী বা কম্পিউটার সহজেই বুঝতে পারে এবং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে। ধাপগুলোর মধ্যে কোনো ধোঁয়াশা বা অস্পষ্টতা থাকলে অ্যালগরিদম সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হবে।
- অ্যালগরিদম অবশ্যই নির্ধারিত ইনপুট গ্রহণ করবে এবং একটি নির্দিষ্ট আউটপুট প্রদান করবে। ইনপুট ছাড়া অ্যালগরিদম কাজ শুরু করতে পারবে না, আর আউটপুট হলো কার্যক্রমের ফলাফল। উদাহরণস্বরূপ, একটি যোগফল নির্ণয়ের অ্যালগরিদমে দুটি সংখ্যা (ইনপুট) দেওয়া হয় এবং এর যোগফল (আউটপুট) প্রদান করা হয়।
- অ্যালগরিদমকে দ্রুত এবং কার্যকরভাবে কাজ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। এটি সময় ও সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি অ্যালগরিদম খুব বেশি সময় নেয়, তবে সেটি ব্যবহারকারী বা সিস্টেমের জন্য অকার্যকর হতে পারে।
- একটি কার্যকর অ্যালগরিদম অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট সময়ে তার কার্যক্রম শেষ করতে সক্ষম হতে হবে। সীমাহীন সময় ধরে কাজ করা অ্যালগরিদম ব্যবহারযোগ্য নয়। এটি একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ধাপে সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।
- অ্যালগরিদম যেকোনো পরিবেশে সঠিকভাবে কাজ করার উপযোগী হতে হবে। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা উচিত, যাতে কোনো নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ না হলেও এটি ত্রুটি ছাড়াই কাজ করতে পারে।
অ্যালগরিদম তৈরির এই শর্ত বা নিয়মগুলো মেনে চললে এটি কার্যকর, নির্ভুল এবং সঠিকভাবে কাজ করার ক্ষমতা রাখে। একটি ভালো অ্যালগরিদম তৈরি করা মানে সমস্যার সমাধান দ্রুত ও সহজতর করা এবং প্রযুক্তিগত কার্যক্রমকে আরও উন্নত করা।
অ্যালগরিদম এর প্রয়োজনীয়তা
অ্যালগরিদম কেবল একটি পদ্ধতি নয়, এটি আধুনিক যুগের প্রযুক্তি নির্ভরতার ভিত্তি। এটি ডেটা বিশ্লেষণ, প্রোগ্রামিং, এবং জটিল সমস্যার সমাধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।অ্যালগরিদম কোন নির্দিষ্ট কিছুর নাম নয়, এটা একটা প্রক্রিয়া। কোন একটি গাণিতিক সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়ার নাম অ্যালগরিদম। গাণিতিক সমস্যা যেমন অনেক হতে পারে তেমনি প্রতিটা সমস্যার সমাধানও অনেক রকম হতে পারে, তাই এলগরিদমও অনেক হতে পারে।
যেমন কোন একটি সংখ্যার লিস্টকে ছোট থেকে বড় সাজানোর অনেকগুলো পদ্ধতি আছে, যেমন কুইকসর্ট পদ্ধতি, বাবল সর্ট পদ্ধতি, মার্জ সর্ট পদ্ধতি ইত্যাদি। প্রতিটা পদ্ধতিই এক একটি অ্যালগরিদম অর্থাৎ কুইকসর্ট অ্যালগরিদম, বাবল সর্ট অ্যালগরিদম, মার্জ সর্ট অ্যালগরিদম ইত্যাদি। তাই আপনি যদি বলেন অ্যালগরিদম এর উপকারিতা কি তাহলে হবেনা, বলতে হবে অমুক অ্যালগরিদম এর উপকারিতা কি।
অ্যালগরিদম তৈরির শর্ত বা নিয়ম মেনে চলা অ্যালগরিদমগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবন সহজতর করার পাশাপাশি প্রযুক্তির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখে। অ্যালগরিদম কাকে বলে এবং তৈরির শর্ত জানা থাকলে কোন সমস্যার সমাধান করা সহজ হয়। কারন ঐ সমস্যা সমাধানের অ্যালগরিদমগুলো বছরের পর বছর ধরে অসংখ্য বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরীক্ষিত সুতরাং নিজে নিজে চিন্তা করে সমস্যা সমাধান না করে অ্যালগরিদম ব্যবহার করলে কাজ করা সহজ হয়ে যায় এবং অন্যদেরকেও সহজে বোঝানো যায়।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে অ্যালগরিদম তৈরির শর্ত বা নিয়ম তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে অ্যালগরিদমের বৈশিষ্ট্য, কাজ, গুরুত্ব, তৈরির নিয়মাবলী এবং অন্যান্য যাবতীয় বিষয় সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ
মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url