ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ

ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত হাদিস সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ। তাই আমাদের আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন ইলমে দ্বীন শিক্ষা সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
ইলমে-দ্বীন-শিক্ষা-করা-প্রত্যেক-মুসলমানের-উপর-ফরজ
কোন কাজ বা দায়িত্ব যথাযথ পালন করতে হলে সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকতে হয়, যাতে কোন অবশ্যই পালনীয় কাজে যেন তার কোন ভুল না হয়। তাই আজকের পোস্টে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ সেই বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আপনারা ধৈর্য সহকারে আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

ভূমিকা

মানুষ হলো জ্ঞানপিপাসু আর সকল বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার ইচ্ছাই তাকে আরো জ্ঞানী করে তোলে একজন প্রকৃত মুসলমানকে অবশ্যই ধর্মের সঠিক পথ সম্পর্কে জানতে যথাযথ ইলম গ্রহণ করতে হবেআজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানবো ইলম কি, ইলম কত প্রকার ও কি কি, ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত হাদিস, ইলম অর্জন করা ফরজ কেন, ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ, ইলম অর্জনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য সমূহ।

ইলম কি

ইলম ( علم) একটি আরবি শব্দ (বহুবচনে উলুমুন)। যার অর্থ জ্ঞান, বিদ্যা, জানা,অবগত হওয়া, الفهم, المعرفة ইত্যাদি। বাংলা ভাষায় এলেম শব্দটি দ্বারাও কখনো কখনো একে বোঝানো হয়। ইসলামী পরিভাষায়, ইলম হচ্ছে কোন বস্তুর প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করা। আবার, 'ইলম সাধারণত ধর্মীয় জ্ঞানকে বোঝায়।

আরো পড়ুনঃ  ইসলাম শান্তির ধর্ম

কুরআন মাজীদে, "ইলম" শব্দটি দ্বারা সৃষ্টিকর্তার নিজস্ব জ্ঞানকে বোঝায়, যা অস্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ এবং অন্তর্নিহিত দিককে অন্তর্ভুক্ত করে। কুরআনে আলোকে বলা যায়, সমস্ত মানবজাতি এমনকি ফেরেশতারাও সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত নির্দেশনার আলোকে জ্ঞান অর্জন করে।

ইলম কত প্রকার ও কি কি

বিভিন্ন ক্ষেত্র ও প্রকৃতির ওপর ভিত্তি করে ইলমকে বিভিন্নভাবে প্রকারভেদ করা হয়েছে। ইলম প্রধানতঃ দুই প্রকার। যথা: (ক) দ্বীনি ইলম বা ধর্মীয় জ্ঞান ও (খ) দুনিয়াবি ইলম বা পার্থিব জ্ঞান। সাধারণত ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞানকে দ্বীনি ইলম বা ধর্মীয় জ্ঞান বলে। যেমন- হাদিস, ফিকহ, তাফসির, কুরআন ইত্যাদির জ্ঞান।

শুধু পার্থিব উন্নতির সাথে সম্পৃক্ত জ্ঞানকে দুনিয়াবি ইলম বলে। যেমন-  বিজ্ঞান, গণিত, সাহিত্য, ভূগোল, পদার্থ, রসায়ন ইত্যাদির জ্ঞান। আবার, গ্রহণীয়তার ভিত্তিতে ইলম দুভাগে বিভক্ত। যথা: (ক) গ্রহণীয় জ্ঞান (খ) বর্জনীয় জ্ঞান। ইহকাল ও পরকালে মানুষের কল্যাণে যা আসে তা গ্রহণীয় জ্ঞান। যেমন— নৈতিক জ্ঞান, প্রকৌশল, পদার্থ-রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞানসহ সকল কল্যাণকর জ্ঞান।

আরো পড়ুনঃ  ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা ও পরিপূর্ণ জীবন বিধান

আর যে জ্ঞান মানুষের কোনো কল্যাণে আসে না , ইহকাল ও পরকালে অকল্যাণ ঘটে তাকে বর্জনীয় জ্ঞান বলে। যেমন-চুরি, ডাকাতি, অন্যায়, জুলুম, অনৈতিক জ্ঞান , সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ ইত্যাদির জ্ঞান। আরেক দৃষ্টিকোণ থেকে, ইলম দুই প্রকার। যথা-

العلم الضروري - বাধ্যগত ইলমঃ এটি সেই জ্ঞান, যা জানা মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক। উদাহরণস্বরূপ: কোনো কিছুর পূর্ণতা তার আংশিক অংশের চেয়ে বৃহত্তর, আগুনের গরম হওয়া, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল—এগুলো জানা।

العلم النظري - চিন্তা-গবেষণা নির্ভর ইলমঃ এই ইলম অর্জন করতে দলীল, প্রমাণ ও চিন্তা-গবেষণার প্রয়োজন হয়। একে العلم النظري বা চিন্তা-গবেষণামূলক ইলম বলা হয়। যেমন: জানা যে, সালাতের ক্ষেত্রে নিয়ত করা ফরজ। এই ধরনের ইলম সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে জ্ঞানী সবাই জানে। এটি কেউ অস্বীকার করলে সে কাফির হয়ে যাবে। যেমন- আল্লাহর একত্ববাদ, সালাতের ফরজিয়ত, সুদ, মদ, এবং জিনা প্রভৃতি হারাম হওয়া ইত্যাদি।

ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত হাদিস

ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ তাই এটি ইসলাম ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিসীম একটি অঙ্গ। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে ইলমের বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। ইসলামী জীবনাদর্শের মূল ভিত্তি হলো সঠিক জ্ঞান বা ইলমের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। ইসলামের প্রথম বার্তা "اِقْرَاْ" অর্থাৎ "পড়", যা ইলম অর্জনের প্রতি সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়।

ইসলাম ও ইলম একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ইসলামের প্রতিটি দিকেই ইলমের উপস্থিতি রয়েছে এবং ইলম ছাড়া ইসলামকে সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব নয়। ইলম ছাড়া ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের কোনো ক্ষেত্রেই প্রকৃত ইসলাম পালন করা যায় না। ইসলামে ইলমকে এতটাই মূল্যায়ন করা হয়েছে যে, প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ”।

জ্ঞান চর্চা কেবল ধর্মীয় বিষয়েই সীমাবদ্ধ নয়; দুনিয়াবি ও আখেরাতের জ্ঞানের ভারসাম্য বজায় রাখার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কুরআনের সূরা মুজাদালার ১১ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ “আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও জ্ঞান অর্জন করেছে তাদের মর্যাদা বহু গুণে উন্নীত করবেন।” এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, জ্ঞান অর্জনকারীদের জন্য আল্লাহ বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা রাখেন।

হাদিসেও ইলমের গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেন: “যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” এই হাদিস থেকে বুঝা যায়, ইলমের পথে চলা মানে জান্নাতের পথে দুনিয়ার জ্ঞান শুধুমাত্র প্রথাগত শিক্ষার জন্য প্রয়োজন কিন্তু আখেরাতের জ্ঞান মানুষকে প্রকৃত সৎ ও আল্লাহর প্রিয় বান্দা বানায়।

ইলমের মাধ্যমে একজন মুসলিম শুধু নিজের জীবনকেই আলোকিত করে না বরং সমাজকেও সঠিক পথে পরিচালিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আজকের সমাজে অনেকেই সন্তানদের শুধু দুনিয়াবি শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রতি মনোযোগ দেন, অথচ ইলমের আসল ফজিলত হচ্ছে আখেরাতের সফলতা।

তাই, প্রতিটি অভিভাবকের কর্তব্য হলো সন্তানদের দুনিয়াবি শিক্ষার পাশাপাশি দ্বীনি ইলমে শিক্ষিত করা, যাতে তারা প্রকৃতভাবে একজন আল্লাহভীরু ও সৎ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। ইলমের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীতে মর্যাদা অর্জন করতে পারি এবং আখেরাতে আল্লাহর কাছে সম্মানিত হতে পারি। তাই ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত হাদিস আমাদের জীবনে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে।

ইলমের ব্যাপারে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ.

প্রত্যেক মুসলিমের উপর ইলম অর্জন করা ফরয। মুসনাদে আবু হানীফা (হাছকাফী), হাদীস ১, ২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২২৪
তাবেয়ী (সাহাবীদের পরবর্তী প্রজন্ম) উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহ.) বলেছেন-

من عمل على غير علم كان ما يفسد أكثر مما يصلح.

অর্থাৎ, "যে ব্যক্তি ইলম ছাড়া কোনো কাজ করে, সে যতটুকু সঠিকভাবে করবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করবে।" (তারীখে তাবারী, ৬/৫৭২)

দ্বীনি ইলমের বিভিন্ন স্তর ও শ্রেণি রয়েছে।: ফরযে আইন এবং ফরযে কেফায়া। ফরযে আইন হলো সেই জ্ঞান যা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক, যেমন দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় দ্বীনি শিক্ষা। ফরযে কেফায়া হলো সেই জ্ঞান, যা কিছু মুসলিম অর্জন করলে পুরো সম্প্রদায় উপকৃত হয়, যেমন চিকিৎসা, আইন ইত্যাদি

সুতরাং, ইসলাম ধর্মে ইলম অর্জন কেবল ব্যক্তিগত উন্নতির জন্যই নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতির জন্যও অপরিহার্য। কুরআন ও সুন্নাহতে ইলম অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যার কারণে ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। কুরআনের প্রতিটি অংশই ইলমের একটি মন্ত্র, যা আমাদের সঠিক পথ অনুসরণের জন্য প্রয়োজনীয়।

আল্লাহ তাআলা কুরআন নাযিল করেছেন যাতে আমরা এর ইলম অর্জন করি এবং তার আলোকে আমাদের জীবন পরিচালনা করি। কুরআনে বলা হয়েছে, "আমি তোমার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের কাছে এটি স্পষ্টভাবে পৌঁছে দিতে পারো..." (সূরা নাহল ১৬:৪৪)। এছাড়া, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কুরআনের তালীম এবং শিক্ষা দেওয়ার জন্যই প্রেরিত করা হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা নবীকে "আমার ইলম বৃদ্ধি করে দাও" (সূরা ত্ব-হা ২০:১১৪)

এছাড়া, কুরআনে মুমিনদের ইলম অর্জনের জন্য প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে কিছু অংশকে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (সূরা তাওবা ৯:১২২)। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইলম অর্জনকে ফরজ ও অত্যন্ত সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য করেছেন। সুতরাং, আমাদের উচিত কুরআন ও সুন্নাহর ইলম হাসিল করা, যাতে সঠিকভাবে দ্বীনের অনুসরণ করতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

ইলমে দ্বীনের ফযীলত

ইলমের গুরুত্ব কুরআন ও হাদীসে একাধিকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কারণ ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। কুরআনে সর্বপ্রথম যে আয়াতটি ইলমের গুরুত্ব তুলে ধরে তা হলো:
"পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন- সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে। পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না।" (সূরা আলাক, ৯৬: ১-৫)

আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে,
"তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে ইলম দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় উন্নত করবেন।"

(সূরা মুজাদালাহ, ৫৮: ১১)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন,
"যে ব্যক্তি ইলমের জন্য পথে বের হয়, আল্লাহ তাকে জান্নাতের পথ সহজ করে দেবেন।" (সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯৯)

তিনি আরো বলেছেন,
"তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে ব্যক্তি, যে কুরআন শিখে এবং তা অন্যকে শেখায়।" (সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০২৭) তাই এখন দ্বীনী ইলমের গুরুত্ব এবং এর উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সঠিক নিয়ত করা অত্যন্ত জরুরি। ইলম শিক্ষা ও তার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাইলে নিয়তের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে।

ইলম অর্জন করা ফরজ কেন

ইসলামে ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত হাদিস অত্যন্ত অপরিসীম। মুসলিমের প্রতি ইসলামের প্রথম বার্তা ছিল "اِقْرَاْ" - অর্থাৎ "পড়ো" বা ইলম অর্জন করো। ইসলামকে ইলম থেকে পৃথক করা অসম্ভব, কারণ ইসলামের প্রতিটি দিকেই ইলমের উপস্থিতি বিদ্যমান। ইলম ছাড়া ইসলামের সঠিক অনুসরণ করা সম্ভব নয়। ইলমের অভাবে ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এবং রাষ্ট্রীয় জীবন-কোনো ক্ষেত্রেই প্রকৃত ইসলাম পালন করা সম্ভব নয়।

তাবেয়ী উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহ. বলেন:
"যে ব্যক্তি ইলম ছাড়া আমল করবে, সে সঠিকভাবে যতটুকু করতে পারে, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করবে।" (তারীখে তাবারী ৬/৫৭২)

আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার জন্য প্রত্যেক মুসলমানের ওপর প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। হাদিসে এসেছে, "ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।" (ইবনে মাজা: ২২৪)। এর মধ্যে অজু, গোসল, নামাজ ও রোজা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা অন্তর্ভুক্ত। যাদের নেসাব পরিমাণ মাল আছে, তাদের জন্য জাকাতের জ্ঞান অর্জন করা ফরজ।

যে ব্যক্তির হজ ফরজ, তার জন্য হজের বিধান জানা ফরজ। ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসা সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করা ফরজ, যাতে তারা লেনদেনের মধ্যে হারাম বা নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে পারে। একইভাবে, প্রতিটি পেশাজীবীর জন্য তার পেশা সম্পর্কিত শরীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। ইসলামের ৫টি মৌলিক স্তম্ভের জ্ঞান অর্জন করা, ইখলাস সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করা এবং হালাল-হারাম বিষয় সম্পর্কে জানাও ফরজ।

কারণ ইখলাসের ওপর আমল কবুল হওয়া নির্ভরশীল। রিয়া বা লৌকিকতা সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা জরুরি, কারণ রিয়া মানুষের আমলকে ধ্বংস করে দেয়। হিংসা ও অহংকারের সম্পর্কিত বিধান জানাও আবশ্যক, কারণ এ দুটি গুণ আমলকে ধ্বংস করে দেয়, যেমন আগুন কাঠ পুড়িয়ে দেয়। যে ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় বা বিবাহ করতে চায়, তার জন্য এসব সম্পর্কিত হুকুম জানাও ফরজ।হারাম ও কুফরি বাক্য সম্পর্কিত জ্ঞান থাকা ফরজ।

ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, তিন প্রকার ইলম শিক্ষা করা ফরজ—১. ইলমুত তাওহিদ, ২. ইলমুস সীরাত, ৩. ইলমুশ শরিয়াহ। অর্থাৎ তাওহিদ সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান অর্জন করা ফরজ, যা দ্বীনের মূল। আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি, যেমন—তিনি জীবিত, সবকিছুর ওপর ক্ষমতাশালী, সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী, তাঁর কোনো শরিক নেই এবং তিনি সব গুণে গুণান্বিত। হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসূল।

দ্বিতীয়ত, ইলমুস সীরাতের উদ্দেশ্য হলো অন্তরকে নিষিদ্ধ বিষয় থেকে পবিত্র করা এবং কাম্য বস্তু দিয়ে পূর্ণ করা, যেমন ইখলাস, নিয়ত, আমলের সঠিকতা ইত্যাদি। আর ইলমুশ শরিয়ত বলতে উদ্দেশ্য হলো- ব্যক্তির জন্য যা কিছু ফরজ, তার জ্ঞান অর্জন করা। (মিনহাজুল আবেদিন ইলা জান্নাতি রাব্বিল আলামিন, ইমাম গাযালি: ৪৮-৪৯)

অতএব, আমাদের পার্থিব জীবনকে সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও শরিয়তসম্মতভাবে পরিচালনা করার জন্য ফরজ পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ফরজ পরিমাণ জ্ঞান অর্জন করে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ

ইলমে দ্বীন (ধর্মীয় জ্ঞান) অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। ইসলামে ইলমের গুরুত্ব অত্যন্ত অপরিসীম, এবং হাদিসে উল্লেখ আছে, "প্রতিটি মুসলমানের ওপর ইলম শিক্ষা করা ফরজ" (ইবনে মাজা: ২২৪)। দ্বীনি জ্ঞান ছাড়া সঠিকভাবে ইসলাম পালন করা সম্ভব নয়। মুসলিমদের জন্য অজু, নামাজ, রোজা, জাকাত, হজ এবং অন্যান্য ধর্মীয় বিধান সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা অপরিহার্য।
মহান আল্লাহ বলেন-

فَلَوْلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرْقَةٍ مِّنْهُمْ طَائِفَةٌ لِيَتَفَقَهُوا فِي الدِّينِ وَلِيُنذِرُوا قَوْمَهُمْ إِذَا رَجَعُوا إِلَيْهِمُ

অর্থ : “তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ বের হয় না কেন, যাতে তারা দীন সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে, যখন তারা তাদের নিকট ফিরে আসবে ।” (সূরা আত তাওবা আয়াত ১২২)

এছাড়া, ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলোর জ্ঞান যেমন তাওহিদ, ইখলাস, ও হালাল-হারাম সম্পর্কে সচেতনতা ফরজ। ব্যবসা বা অন্যান্য পেশায় শরয়ি জ্ঞান অর্জন করাও জরুরি দ্বীনি ইলমের মাধ্যমে মানুষ তার ধর্মীয় কর্তব্য পালন করতে পারে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। তাই, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা ফরজ, যা তাকে ইসলামিক জীবনদর্শন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে সহায়তা করে।

ইলম অর্জনের উদ্দেশ্য

ইলম অর্জনের উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালিত করা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। ইসলামে ইলম বা জ্ঞান অর্জনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, কারণ ইলম ছাড়া একজন মুসলমান সঠিকভাবে ইসলাম পালন করতে সক্ষম হবে না। আল্লাহ তায়ালা তাঁর কুরআনে ইলম অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং হাদিসে ইলম অর্জনকে ফরজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ইলম অর্জনের মাধ্যমে একজন মুসলমান তার ধর্মীয় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে সক্ষম হয়। যেমন—নামাজ, রোজা, হজ, জাকাতের নিয়মকানুন জানলে সেগুলোর সঠিকভাবে পালন করা যায়। এছাড়া, ইলম অর্জনের মাধ্যমে ব্যক্তি তার আচার-ব্যবহার, চরিত্র এবং সমাজে নিজের ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে, যা তাকে নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত করে।

এছাড়া, ইলম অর্জন করে ব্যক্তি সমাজে সঠিক বিচার এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে পারে। ব্যবসা বা পেশাগত জীবনে শরয়ি জ্ঞান অর্জন করে হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে। ইলমের মাধ্যমে রিয়া (লৌকিকতা), অহংকার, হিংসা ও অন্যান্য ক্ষতিকর প্রবণতা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য পাওয়া যায়। সর্বোপরি, ইলম অর্জনের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নির্দেশনায় জীবন পরিচালনা করা এবং আখিরাতে সফলতা লাভ করা।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলেই ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে ইলমে দ্বীন শিক্ষা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url