এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ

এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ এর প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, এয়ার হোস্টেস এর বেতন কত সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ। তাই আমাদের আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন এয়ার হোস্টেস সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
এয়ার-হোস্টেস-হওয়ার-যোগ্যতা-বাংলাদেশ
অনেকেরই স্বপ্ন থাকে বিমানবালা হবার কিন্তু তার জন্য পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে কি কি প্রয়োজন তা অনেকেই জানে না।যার ফলে স্বপ্ন থেকে অধরা। তাই আজকের পোস্টে এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ এর বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আপনারা ধৈর্য সহকারে আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

ভূমিকা

আকাশে ওড়ার হাতছানি সবারই থাকে আর সেই ডাকে সাড়া দিয়ে অনেকে বিমানবালা পেশার দিকে আকৃষ্ট হয়। বর্তমান যুগে অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি কাজ হলো এয়ার হোস্টেস। যার মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সহজেই উড়াল দেওয়া যায়। আর সাথে রয়েছে একটি নির্দিষ্ট মানের পারিশ্রমিক। সেজন্যই আজকের পোষ্টে আমরা জানব বিমানবালা মানে কি, এয়ার হোস্টেস এর বেতন কত, এয়ার হোস্টেস কোর্স, বিমানবালা হওয়ার উচ্চতা, এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ, এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং বাংলাদেশ এর বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য সমূহ।

এয়ার হোস্টেস মানে কি

বিমানের অন্যতম প্রয়োজনীয় কর্মী বাহিনী এয়ার হোস্টেস বা বিমানবালা। তারা কেবিন ক্রু নামেও পরিচিত। এয়ার হোস্টেসদের আবার ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টও বলা হয়। সাধারণভাবে এয়ার হোস্ট (পুংলিঙ্গ) বা হোস্টেস (স্ত্রীলিঙ্গ), নামে পরিচিত। বিমানে যাত্রীদের নিরাপত্তা ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিতে কাজ করেন এয়ার হোস্টেস।

বিমানে যাত্রীদের খাবার ও পানীয় পরিবেশন করাই এয়ার হোস্টেসের কাজ বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু এর পাশাপাশি আরও অনেক কাজ করেন তারা। অসুস্থ হয়ে পড়া যাত্রীদের সাহায্য করা, বিমানে জরুরি সরঞ্জাম আছে কিনা পরীক্ষা করা, যাত্রীরা নিরাপত্তা বিধান পুরোপুরি মেনেছেন কিনা তা নিশ্চিত করার কাজ করে থাকেন এয়ার হোস্টেস। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতিতে তিনি যাত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা তথ্য প্রদান করেন।

এয়ার হোস্টেস এর বেতন কত

এই পেশায় প্রবেশের পূর্বে বেতন সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। ক্যারিয়ারের শুরুতে এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ, এর সর্বনিম্ন বেতন প্রতি মাসে ১৭০০০-১50০০০ টাকা বা তার অধিক হতে পারে। যদি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ডিউটি করেন তবে তা ২- ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বার্ষিক ফি এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা হতে পারে।

অভিজ্ঞতার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে বেতনও। বিদেশি এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে শুরুতে বেতন হয়ে থাকে এক লাখ টাকার বেশি। ঢাকা বাংলাদেশে একজন কেবিন ক্রুর আনুমানিক মোট বেতন প্রতি মাসে 309,250 টাকা , যার গড় বেতন প্রতি মাসে 20,000 টাকা। বিভিন্ন দেশে পৌঁছানোর পর সেখানে থাকার জন্য পাঁচ তারকা হোটেলে থাকার সুযোগ পাবেন।

দীর্ঘদিন চাকরি এবং কাজের পারফর্মেন্স ভালো হলে মেলে প্রমোশন। সেক্ষেত্রে বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বেড়ে যায়। শুধু বিমানবালার নিজের জন্যই নয়, তার পরিবারের সদস্যদের জন্যও আছে নানা ধরনের সুবিধা। পরিবারসহ বিভিন্ন দেশে ট্যুর করার সুযোগও রয়েছে এই পেশায়। বিমানবালা হয়ে যত বেশি আকাশ ভ্রমণ করবেন, উপার্জন করার সুযোগ রয়েছে তত বেশি।

এয়ার হোস্টেস কোর্স

এয়ার হোস্টেস কোর্স হলো সেই বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া, যা একজন ব্যক্তি বিমানবালা বা এয়ার হোস্টেস হওয়ার জন্য গ্রহণ করে। এই কোর্সে শিক্ষার্থীরা বিমান সেবা, নিরাপত্তা, শারীরিক সুস্থতা, প্রাথমিক চিকিৎসা, এবং পেশাদারিত্বের অন্যান্য বিভিন্ন দিক শিখে থাকে। বিমানবালা হিসেবে যাত্রীদের সেবা, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং বিমান চলাচলে সহায়তা করা এই পেশার মূল কাজ। একটি ভালো এয়ার হোস্টেস কোর্স কেবল দক্ষতা বৃদ্ধি করতেই নয়, ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস এবং পেশাদারিত্বও উন্নত করে।

এয়ার হোস্টেস কোর্সের গুরুত্ব

এয়ার হোস্টেস কোর্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি শিক্ষার্থীদের আকাশপথে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করে। বিমানবালা বা এয়ার হোস্টেসদের কাছে রয়েছে যাত্রীদের সেবা, নিরাপত্তা, এবং উদ্বেগের সময় সংকট মোকাবেলার দক্ষতা। এই কোর্সটি একটি উচ্চমানের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, বিশেষ করে যখন আকাশপথে যাত্রী পরিবহন এবং আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।পরিশ্রম এবং সাধনার ফলে পাওয়া যায় উপযুক্ত এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ সেজন্যই ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেছে।

এয়ার হোস্টেস কোর্সের বিষয়বস্তু

ভাষাগত দক্ষতাঃ এয়ার হোস্টেসদের কাছে ইংরেজি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ভাষায় দক্ষতা থাকা আবশ্যক। এই কোর্সে ইংরেজি ভাষায় কথা বলা, লেখা এবং শোনা শেখানো হয়, যাতে আন্তর্জাতিক যাত্রীদের সাথে সহজে যোগাযোগ করা যায়।

নিরাপত্তা এবং জরুরি সেবাঃ বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এয়ার হোস্টেসদের জরুরি অবস্থায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হতে হয়। কোর্সে বিমানে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা, অগ্নি নির্বাপন, জরুরি অবতরণ, এবং উদ্ধার বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতিঃ বিমানবালাদের শারীরিক সুস্থতা এবং ভালো মানসিক অবস্থা থাকতে হয়। এয়ার হোস্টেস কোর্সের মধ্যে শারীরিক ফিটনেসের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যাতে তারা দীর্ঘসময় ধরে কাজ করতে পারে। মানসিক স্থিতিশীলতা, আস্থা এবং সেবামূলক মনোভাব তৈরি করাও কোর্সের অংশ।

পেশাদারিত্ব এবং সেবা মনোভাবঃ বিমানবালাদের পেশাদারিত্ব, সৌজন্যতা এবং যাত্রীদের প্রতি সহানুভূতি থাকতে হয়। তারা যাত্রীদের যেকোনো প্রয়োজনে সাহায্য করে, খাবার পরিবেশন, নির্দেশনা দেওয়া, এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সেবা প্রদান করে। কোর্সে এই সব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

শরীরের পরিচ্ছন্নতা এবং সজ্জাঃ বিমানবালাদের বিশেষভাবে নিজেদের উপস্থাপনা এবং শারীরিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হয়। মাথার চুল, হাত-পা, পোশাক এবং চেহারা সবকিছুই যেন সুবিন্যস্ত থাকে, সেটি শেখানো হয়। এই কোর্সের অংশ হিসেবে ব্যক্তিগত যত্ন, পোশাক এবং সাজসজ্জা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এয়ার হোস্টেস কোর্সের শর্তাবলী

এয়ার হোস্টেস কোর্সে ভর্তি হতে সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট শর্ত থাকে। প্রথমত, প্রার্থীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে। উচ্চতা এবং শারীরিক গঠনও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এয়ার হোস্টেসদের একদম আদর্শ উচ্চতা এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকতে হয়। প্রার্থীদের অবশ্যই উচ্চ মাধ্যমিক বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। তাছাড়া ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলার ক্ষমতা থাকতে হয়।

কোর্সের সময়কাল এবং খরচ

এয়ার হোস্টেস কোর্স সাধারণত ৩ থেকে ৬ মাসের হয়ে থাকে, তবে কিছু প্রতিষ্ঠান এই কোর্স দীর্ঘ সময়েও দিতে পারে। কোর্সের খরচ প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে, তবে সাধারণত বাংলাদেশে এই কোর্সের খরচ ৫০,০০০ টাকা থেকে ১,৫০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে কোর্সের খরচের মধ্যে প্রশিক্ষণ, uniform, এবং অন্যান্য খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।

এয়ার হোস্টেস কোর্সের পর চাকরির সুযোগ

এয়ার হোস্টেস কোর্স সম্পন্ন করার পর আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকে। বাংলাদেশে Biman Bangladesh Airlines, Air Asia, Emirates, Qatar Airways সহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থায় এয়ার হোস্টেসের চাকরি পাওয়া সম্ভব। এয়ার হোস্টেসরা শুধু বিমান চলাচলে কাজ করে না, তারা বিভিন্ন দেশের নানা শহরে ভ্রমণের সুযোগও পায়, যার কারণে এটি একটি আকর্ষণীয় পেশা হয়ে উঠেছে।

এয়ার হোস্টেস কোর্স হলো একটি সম্মানজনক এবং সুবিধাজনক পেশার অংশ। যারা আকাশে উড়াল দিয়ে পৃথিবী ভ্রমণের স্বপ্ন দেখেন, তাদের জন্য এই কোর্স একটি অসাধারণ সুযোগ। কোর্সের মাধ্যমে শিখে নিতে হয় একটি উন্নত এবং পেশাদার জীবনযাপন। এর ফলে আকাশপথে যাত্রীদের সেবা দেওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব উন্নতি এবং চাকরির সুযোগও বৃদ্ধি পায়।

বিমানবালা হওয়ার উচ্চতা

বিমানবালা পেশা হিসাবে বেছে নিচ্ছেন ? তাহলে জেনে নিন এই বিষয়গুলো। বাংলাদেশে বিমানবালা হওয়ার জন্য মেয়েদের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি আর ছেলেদের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতা প্রয়োজন। উচ্চতা নির্ধারণের কারণ হলো, বিমানে সঠিকভাবে চলাফেরা করা, দরজা ও যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা এবং বিমানটির অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য শারীরিক গঠন গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও, বিমানবালাদের জন্য সৌন্দর্য এবং প্রেজেন্স গুরুত্বপূর্ণ হলেও শারীরিক সক্ষমতা থাকতে হয়, যাতে তারা কঠিন পরিস্থিতিতেও দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে। এছাড়া, উচ্চতা ছাড়া অন্যান্য শারীরিক যোগ্যতার মধ্যে সঠিক ওজন, সুস্থতা এবং আকর্ষণীয় উপস্থিতি থাকতে হয়। এই কারণে, উচ্চতা নির্ধারণ বিমানবালা হওয়ার ক্ষেত্রে একটি মৌলিক শর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়, যা পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ

বিমানবালা হওয়ার স্বপ্ন অনেকেরই, কারণ এটি আকাশে উড়াল দেওয়ার, নতুন দেশ ভ্রমণ এবং আকর্ষণীয় বেতনের সুযোগ দেয়।চাকরি প্রত্যাশীদের আর এয়ার হোস্টেস এর বেতন কত তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। তবে, এই পেশায় যোগ দিতে হলে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং প্রস্তুতি প্রয়োজন। বিমানবালা হতে হলে শারীরিক এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াও ভাষাগত দক্ষতা, প্রশিক্ষণ এবং সাঁতার কাটার মতো দক্ষতা থাকতে হয়। এয়ার হোস্টেস বা বিমানবালা হিসেবে কাজ করতে এয়ারলাইন্সগুলো সাধারণত স্মার্ট, উদ্যমী এবং বন্ধুসুলভ ব্যক্তিদের খোঁজে। প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও শর্তাবলী নিম্নরূপ।
  • প্রার্থীর বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। অবিবাহিত প্রার্থীরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।
  • উচ্চতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ওজন থাকতে হবে। সাধারণত কমপক্ষে ৫ ফুট ২ ইঞ্চি (১৫৭ সেমি) উচ্চতা প্রয়োজন।
  • প্রার্থীকে সবসময় শারীরিকভাবে সুস্থ ও ফিট থাকতে হবে। বন্ধুসুলভ ও আনন্দময় মনোভাব থাকতে হবে।
  • চোখের দৃষ্টিশক্তি হতে হবে ৬/৬। চশমা বা কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করা যাবে না।
  • হাতে কাটা দাগ বা ট্যাটু থাকা যাবে না।
  • চুলের দৈর্ঘ্য কাঁধের উপরে থাকতে হবে, তবে লম্বা চুল হলে সেটি সঠিকভাবে বাঁধা আবশ্যক। চুলের রঙ স্বাভাবিক হওয়া চাই।
  • হাত ও পায়ের নখ সবসময় ছোট রাখতে হবে এবং পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।
  • বিমানবালাদের কমপক্ষে ২০ মিটার সাঁতার কাটার সক্ষমতা থাকতে হবে।
  • এই যোগ্যতাগুলো পূরণ করতে পারলেই একজন প্রার্থী বিমানবালা হিসেবে কাজ করার জন্য আবেদন করতে পারেন।
বিমানবালার শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
  • কমপক্ষে এইচএসসি বা এ-লেভেল পাস হতে হবে।
  • ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলা ও লেখার দক্ষতা আবশ্যক।
  • অতিরিক্ত ভাষা (যেমন ফরাসি, আরবি, চীনা) জানা থাকলে তা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে গণ্য হবে।
  • বিমানবালা হওয়ার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স (যেমন কেবিন ক্রু ট্রেনিং, এভিয়েশন হসপিটালিটি) করা থাকলে অগ্রাধিকার পাবেন।
  • যাদের দীর্ঘ প্রস্তুতি নেই, তারা কিছু স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করে দেশি ও বিদেশি এয়ারলাইন্সে চাকরির সুযোগ পেতে পারেন।

এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং বাংলাদেশ

এয়ার হোস্টেস বা বিমানবালা, এক বিশেষ ধরনের পেশা যা অনেকের জন্য আকাশে উড়াল দেওয়ার একটি স্বপ্নের মতো। এটি এমন একটি পেশা, যা যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিমানবালা বা এয়ার হোস্টেসের কাজ শুধু যাত্রীদের সেবা প্রদানই নয়, তাদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা বজায় রাখাও। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল ক্রমবর্ধমান, সেখানে এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং একটি জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসেবে উঠে এসেছে।সকল ধরনের এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ দেবার জন্য প্রত্যয় গ্রহণ করেছে।

এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং

এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং একটি বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একটি ব্যক্তি এয়ারলাইন্সের নিয়ম-কানুন, নিরাপত্তা নির্দেশনা, যাত্রী সেবা, পেশাদারিত্ব এবং শারীরিক সুস্থতা সম্পর্কে জানতে পারেন।এয়ার হোস্টেস এর বেতন কত তা সম্পর্কে জানতে পারেন। এ ট্রেনিংটি কেবল বিমানে যাত্রীদের সেবা দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করায় না, বরং তাদের মনের দক্ষতা এবং সংকট মোকাবেলার ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে।

বাংলাদেশে এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং শুরু হয়ে গেছে বেশ কিছু বছর আগেই। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেখানে মেয়েরা (অথবা ছেলে-মেয়েরা) বিশ্বের বড় বড় এয়ারলাইন্সে যোগদান করার জন্য প্রস্তুত হয়। এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সফল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, এয়ার হোস্টেস বা বিমানবালাদের চাহিদা দ্রুত বেড়েছে।

এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং-এর উপকারিতা

পেশাদারিত্ব ও আত্মবিশ্বাসঃ এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং একটি মেয়েকে পেশাদারিত্বের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ করে। বিমানবালা হিসেবে কাজ করতে গেলে নিজেকে একটি স্ট্যান্ডার্ডের মধ্যে রাখতে হয়। এটি তাদের আত্মবিশ্বাস এবং মানুষের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে সহায়ক হয়।

নিরাপত্তা এবং প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞানঃ বিমানবালা বা এয়ার হোস্টেসরা শুধু যাত্রীদের সেবা প্রদান করে না, তারা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন জরুরি পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়। এই ট্রেনিংয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা, আকাশপথে জরুরি উদ্ধার অভিযান, এবং আগুন নেভানোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা শেখানো হয়।

ভাষা এবং যোগাযোগ দক্ষতাঃ এয়ার হোস্টেসদের প্রধান দায়িত্ব হল যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং সেবা প্রদান করা। ভাষাগত দক্ষতা এবং সাবলীল কমিউনিকেশন এর জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়, যা তাদের যে কোন ভাষায় কথা বলার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।

এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানের পর্যালোচনা

বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেখানে সম্ভাব্য এয়ার হোস্টেসরা তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এসব প্রতিষ্ঠানে সাধারণত বিমান পরিবহন, সেবা ব্যবস্থা, নিরাপত্তা সেবা, পেশাদার আচরণ, এবং ক্রমবর্ধমান আকাশ পরিবহণ সংক্রান্ত অন্যান্য দিক শেখানো হয়।সবার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন
এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ এর জনসাধারণ যেন সহজে অর্জন করতে পারে সেজন্য ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করেছে।

বাংলাদেশে এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং দেওয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠান হল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং (BIAHT), যা উচ্চমানের প্রশিক্ষণ প্রদান করে। এখানে প্রশিক্ষণরত শিক্ষার্থীরা সেবা প্রদান, বিমান নিরাপত্তা, প্রথমিক চিকিৎসা, স্বচ্ছন্দতা বজায় রাখা, এবং যাত্রীদের মনোভাব বুঝে সঠিকভাবে পরিচালনার কৌশল শিখতে পারে। আরেকটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্সাল এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টার। এই প্রতিষ্ঠানেও বিমান পরিবহন, শারীরিক স্বাস্থ্য এবং দৃষ্টি, উপস্থাপনা, প্রাথমিক চিকিৎসা সহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং-এর ধাপসমূহ

শারীরিক শর্তাবলীঃ প্রথম ধাপের মধ্যে প্রার্থীদের শারীরিকভাবে সুস্থ এবং ফিট হতে হয়। এয়ার হোস্টেসদের জন্য উচ্চতা, শারীরিক গঠন এবং চেহারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভাষাগত দক্ষতাঃ ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা এবং বাংলাদেশি ভাষাগুলোর (বাংলা, হিন্দি ইত্যাদি) উপর জ্ঞান অর্জন করা হয়।

নিরাপত্তা প্রশিক্ষণঃ বিমান চলাচল সুরক্ষিত রাখতে নানা প্রকার প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, যেমন – জরুরি অবস্থায় কীভাবে যাত্রীদের উদ্ধার করা হবে, অগ্নিনির্বাপন, এবং আকাশপথে নিরাপত্তা বিধান।

বিমান সেবাঃ বিমানে যাত্রীদের সেবা প্রদান, খাবার পরিবেশন, যাত্রীদের সাহায্য করা এবং রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক কাজ শিখানো হয়।

প্রথমিক চিকিৎসাঃ বিমানে অসুস্থতা কিংবা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান, একে অপরকে সহায়তা করা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

অবস্থান এবং সুযোগ-সুবিধা
বাংলাদেশে এয়ার হোস্টেস ট্রেনিংয়ের সুযোগ শুধু ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সারা দেশে অনেক প্রদেশেও এই ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এই ট্রেনিং দেওয়া হয়। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সে চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এই ট্রেনিংটি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

সামগ্রিক পর্যালোচনা
এয়ার হোস্টেস ট্রেনিং বাংলাদেশে এক অনবদ্য পেশাগত সুযোগ। দক্ষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এয়ার হোস্টেসরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিমান সংস্থায় কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। বাংলাদেশে উচ্চমানের প্রশিক্ষণ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে এখন এয়ার হোস্টেস হওয়া একটি সাফল্য এবং গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। যারা আকাশে উড়াল দেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাদের জন্য এই ট্রেনিং একটি পথপ্রদর্শক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে এয়ার হোস্টেস হওয়ার যোগ্যতা বাংলাদেশ তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে এয়ার হোস্টেস সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url