সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালা

সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালা সে প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, সরকারি চাকরিজীবীদের ভিসা করার নিয়ম সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ। তাই আমাদের আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা, বিদেশ ভ্রমণ ভাতা এবং সরকারি পাসপোর্টের সুবিধা সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
সরকারি-চাকরিজীবীদের-বিদেশ-ভ্রমণ-নীতিমালা
কোনো কাজের উদ্দেশ্যে বা চিকিৎসার জন্য বা বিদেশ ভ্রমণের প্রয়োজন হলে সরকারি চাকরিজীবীদের অনেক বিধি নিষেধ ও নিয়ম মেনে চলতে হয়। তাই আজকের পোস্টে সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালা সেই বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আপনারা ধৈর্য সহকারে আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন। 

ভূমিকা

সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ কার্যক্রম দেশের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ নিশ্চিত করার জন্য একটি সুসংগঠিত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, যাতে সরকারি চাকরিজীবীরা সুবিধাজনকভাবে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারেন। আমাদের আজকের পোস্টে আমরা যা কিছু জানবো তা হল-  ভ্রমণ ভাতা নীতিমালা, সরকারি চাকরিজীবীদের ভিসা করার নিয়ম, এবং সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ ভাতা ও নীতিমালা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে সহায়ক, পাশাপাশি সরকারি পাসপোর্ট ব্যবহারের সুবিধা এ সকল বিষয়ের তথ্য সম্পর্কে।

কম খরচে বিদেশ ভ্রমণ

বিদেশ ভ্রমণ এখন কেবল ধনীদের জন্য নয়, ভ্রমণপ্রেমীরা ডলারের এবং দ্রব্যমূল্যের চাপে থেমে থাকেন না। বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য ৪২টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে, যা খরচ সাশ্রয়ের বড় সুযোগ। এর মধ্যে রয়েছে এশিয়ার ৬টি, আফ্রিকার ১৬টি, ওশেনিয়া এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলের বেশ কিছু দেশ।

কম খরচে ভ্রমণের প্রথম শর্ত হলো আগে থেকেই পরিকল্পনা করা। বিমান টিকিট যত আগে কাটবেন, ভাড়া তত কম হবে। কানেক্টিং ফ্লাইট ব্যবহার করলে টিকিটের খরচ আরও সাশ্রয়ী হতে পারে, যদিও যাত্রা দীর্ঘ হবে। খরচ কমানোর আরেকটি উপায় অমৌসুমে ভ্রমণ। বিভিন্ন দেশে পর্যটনের নির্দিষ্ট মৌসুম থাকে, সেই সময় বাইরে গেলে টিকিট ও হোটেল ভাড়ায় ছাড় পাওয়া যায়।
আরো পড়ুনঃ কম খরচে ইউরোপ ভিসা
যেমন থাইল্যান্ডে এপ্রিল থেকে অক্টোবর, মালদ্বীপে মে থেকে আগস্ট, এবং দুবাইয়ে রমজান মাসে খরচ তুলনামূলক কম। থাকার জন্য ব্যাকপ্যাকারস হোস্টেল বা এয়ারবিএনবির মতো সাশ্রয়ী বিকল্প বেছে নিতে পারেন। শহরের কেন্দ্রস্থলে না থেকে কিছুটা দূরে থাকলে হোটেলের ভাড়া কমে যায়। সরাসরি হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেও দাম কমানো সম্ভব।

স্থানীয় গণপরিবহন ব্যবহার করে ভ্রমণ আরও সাশ্রয়ী করা যায়। সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার মতো দেশে পরিবহন পাস কিনে বাস বা ট্রেনে সহজে চলাফেরা করা যায়। স্কুটার ভাড়া নেওয়া থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া বা শ্রীলঙ্কায় জনপ্রিয়। বেশি দিনের জন্য স্কুটার ভাড়া নিলে খরচ আরও কম হয়। তবে আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে।

সাশ্রয়ী ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ যেমন ক্লুক ব্যবহার করুন। এগুলো দর্শনীয় স্থান বা আকর্ষণের টিকিট কম খরচে পেতে সাহায্য করে। তবে যেকোনো অফার গ্রহণের আগে যাচাই-বাছাই জরুরি। সবশেষে, ভালো রিসার্চ ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ভ্রমণ শুধু সাশ্রয়ী নয়, আরও স্মরণীয় হয়ে ওঠে।

সরকারি চাকরিজীবীদের ভিসা করার নিয়ম

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ভিসা করার প্রক্রিয়া অন্যান্য পেশাজীবীদের তুলনায় কিছুটা আলাদা ও সংবিধিবদ্ধ নিয়মের অধীন। তাদেরকে অবশ্যই সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালা  সম্পর্কে জানতে হবে। সরকারি কর্মচারীরা বিদেশে ভ্রমণ, প্রশিক্ষণ, উচ্চশিক্ষা বা চিকিৎসার জন্য ভিসা করতে চাইলে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে সরকারি চাকরিজীবীদের ভিসা করার নিয়মাবলী বর্ণনা করা হলো।
আরো পড়ুনঃ ইউরোপ ভিসার ধরন ও প্রয়োজনীয়তা
অগ্রাধিকারমূলক অনুমতি সংগ্রহঃ সরকারি চাকরিজীবীদের ব্যক্তিগত বা পেশাগত কারণে ভিসার আবেদন করার আগে তাদের নিজস্ব দপ্তর বা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে, আবেদনকারীর সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি লিখিত আবেদন জমা দিতে হয় যেখানে ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সময়কাল এবং অনুমতিপত্রের প্রয়োজনীয়তার বিষয় উল্লেখ থাকে।

নো অবজেকশন সার্টিফিকেটঃ সরকারি চাকরিজীবীদের ভিসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি হলো নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC)। এই সনদপত্রে উল্লেখ থাকে যে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী নির্ধারিত সময়ে বিদেশে ভ্রমণ করতে পারবেন এবং তার অনুপস্থিতি দপ্তরের কার্যক্রমে কোনো সমস্যা তৈরি করবে না। এনওসি জারি করতে হলে অনুমোদনকারী কর্মকর্তার স্বাক্ষর প্রয়োজন।

পাসপোর্ট আপডেট ও সরকারি স্ট্যাটাসঃ সরকারি চাকরিজীবীদের সরকারি বা ব্যক্তিগত পাসপোর্ট থাকতে পারে। ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য সাধারণ পাসপোর্ট যথেষ্ট, তবে সরকারি কাজ বা প্রতিনিধিত্বমূলক ভ্রমণের ক্ষেত্রে অফিসিয়াল বা ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট প্রয়োজন হয়। পাসপোর্টে চাকরির বর্তমান তথ্য আপডেট করা জরুরি।

ভিসার আবেদন প্রক্রিয়াঃ সরকারি চাকরিজীবীদের ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী ভিসার জন্য আবেদন করার সময় সাধারণত নিম্নলিখিত নথি জমা দিতে হয়। 
  • এনওসি
  • পাসপোর্টের ফটোকপি
  • ভ্রমণের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে পাওয়া অনুমোদনপত্র
  • প্রয়োজনীয় ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট বা ভ্রমণ ব্যয় বহনের প্রমাণ
  • অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথি (যেমন আমন্ত্রণপত্র বা প্রশিক্ষণ/শিক্ষার সনদ)
মন্ত্রণালয়ের সুপারিশঃ অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সরকারি কাজে ভ্রমণের জন্য ভিসা করতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ প্রয়োজন হয়। এ সুপারিশপত্র সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে জমা দিতে হয়।

দূতাবাসের প্রক্রিয়াঃ সব নথি প্রস্তুত করার পর সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে ভিসার আবেদন জমা দিতে হয়। দূতাবাস প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করে এবং অনুমোদন দেয়।

সরকারি চাকরিজীবীরা ভিসার জন্য আবেদন করার আগে তাদের দপ্তরের নিয়ম-কানুন এবং মন্ত্রণালয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত হয়ে নিতে হবে। সঠিক নথি প্রস্তুত ও যথাসময়ে জমা দিলে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ ও সময়সাশ্রয়ী হয়।

ভ্রমণ ভাতা নীতিমালা

সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে ভ্রমণের প্রয়োজন হতে পারে। তাদের ভ্রমণ ব্যয় বহনের জন্য সরকার নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যা ভ্রমণ ভাতা নীতিমালা নামে পরিচিত। সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালা ভ্রমণ সংক্রান্ত খরচ সুষ্ঠুভাবে ব্যবস্থাপনার নির্দেশনা প্রদান করে। এটি শুধু অর্থনৈতিক সুশাসন নিশ্চিত করে না, বরং কর্মচারীদের উৎসাহিত করতেও কার্যকর ভূমিকা রাখে।

ভ্রমণ ভাতার শ্রেণীবিভাগঃ ভ্রমণ ভাতা কর্মচারীদের পদমর্যাদা, ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং গন্তব্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। সাধারণত ভাতা নিম্নলিখিত ক্যাটাগরিতে বিভক্ত।
  • স্থানীয় ভ্রমণ ভাতা: দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণের জন্য প্রযোজ্য।
  • বিদেশ ভ্রমণ ভাতা: আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য প্রযোজ্য।
  • দৈনিক ভাতা (Daily Allowance): খাবার, যাতায়াত ও অন্যান্য দৈনন্দিন খরচের জন্য।
  • আবাসন ভাতা: হোটেল বা থাকার খরচ।
কাদের জন্য প্রযোজ্যঃ ভ্রমণ ভাতা মূলত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রযোজ্য, যারা অফিসের নির্দেশে দাপ্তরিক কাজে ভ্রমণ করেন। কর্মকর্তার পদমর্যাদা ও ভ্রমণের প্রকৃতি অনুযায়ী ভাতার হার পরিবর্তিত হয়।

ভ্রমণ ব্যয়ের অনুমোদন প্রক্রিয়াঃ ভ্রমণের পূর্বে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য একটি ট্রাভেল অর্ডার বা ভ্রমণ আদেশ তৈরি করতে হয়, যেখানে ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সময়কাল, এবং প্রস্তাবিত খরচ উল্লেখ থাকে।
আরো পড়ুনঃ ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা 
ব্যয়ের সীমা ও নিয়মাবলীঃ প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তার জন্য ভ্রমণ ভাতার নির্ধারিত সীমা থাকে। ভ্রমণ ব্যয়ের খাতগুলো যেমন বিমান ভাড়া, আবাসন, এবং দৈনিক ব্যয়ের হিসাব সুনির্দিষ্টভাবে নীতিমালায় বর্ণিত। অতিরিক্ত ব্যয় ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হয়।

প্রতিবেদন জমাঃ ভ্রমণ শেষে কর্মকর্তাকে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে হয়, যেখানে তার ব্যয়ের বিবরণ ও ভ্রমণের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়।

সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ ভাতা

সরকারি কর্মচারীরা প্রশিক্ষণ, সেমিনার, কর্মশালা, সরকারি সফর, উচ্চশিক্ষা বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণ করলে তারা সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত কিছু ভাতা পাওয়ার অধিকারী হন। ভ্রমণ ভাতার বিধি-বিধান স্পষ্টভাবে নির্ধারিত থাকে এবং তা সরকারি চাকরিজীবীদের অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত করে। নিচে বিদেশ ভ্রমণ ভাতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরা হলো।

ভ্রমণ ভাতার ধরনঃ সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ ভাতা কয়েকটি ধাপে বিভক্ত।
  • বিমান ভাড়াঃ আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য বিমান ভাড়া পুরোপুরি সরকার বহন করে। ভ্রমণ শ্রেণি নির্ধারিত হয় কর্মকর্তার পদমর্যাদার ভিত্তিতে।
  • দৈনিক ভাতা (Daily Allowance)ঃ বিদেশে অবস্থানের সময় খাবার, যাতায়াত, এবং দৈনন্দিন খরচের জন্য এই ভাতা প্রদান করা হয়। এর পরিমাণ দেশভেদে এবং কর্মকর্তার পদমর্যাদার ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়।
  • আবাসন খরচঃ কর্মকর্তাদের জন্য হোটেল ভাড়া বা থাকার খরচ নির্দিষ্ট হারে প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকলে তারা সাধারণত ফাইভ স্টার বা সমমানের হোটেলে থাকতে পারেন।
  • প্রশিক্ষণ বা শিক্ষার ফিঃ বিদেশে প্রশিক্ষণ বা শিক্ষার জন্য ভ্রমণ করলে সংশ্লিষ্ট কোর্স বা সেমিনারের খরচ সরকার বহন করে।
আবেদন প্রক্রিয়াঃ বিদেশ ভ্রমণ ভাতা পেতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ।
  • সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ে ভ্রমণের আবেদন জমা দিতে হয়।
  • ভ্রমণ অনুমোদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ভাতা অনুমোদন করে।
  • ভ্রমণের পর খরচের প্রমাণাদি জমা দিয়ে চূড়ান্ত হিসাব সমন্বয় করতে হয়।
ভ্রমণ ভাতার সীমাবদ্ধতাঃ সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ ভাতা কিছু নির্ধারিত সীমার মধ্যে প্রদান করা হয়।
আরো পড়ুনঃ ইউরোপে কর্মী পাঠানোর সুযোগ ও ঝুঁকি
ভ্রমণ ভাতার গুরুত্বঃ এই ভাতা সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে দক্ষতা উন্নয়ন, দেশের প্রতিনিধিত্ব, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করে। এটি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ সহজ ও ঝামেলামুক্ত করে, যার মাধ্যমে তারা নির্ধারিত কার্যক্রমে মনোযোগ দিতে পারেন।

সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালা

সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ দেশের সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় পরিচালিত হয়। এই নীতিমালার লক্ষ্য হচ্ছে সরকারি কাজে স্বচ্ছতা, সুশাসন ও সঠিক অর্থব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশিক্ষণ, সেমিনার, উচ্চশিক্ষা, চিকিৎসা বা অন্য কোনো কারণে বিদেশ সফর করলে তাদের এই নীতিমালার নিয়ম মেনে চলতে হয়। নিচে এই নীতিমালার মূল দিকগুলো তুলে ধরা হলো।

ভ্রমণের অনুমোদনঃ সরকারি চাকরিজীবীদের ভিসা করার নিয়ম অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা দপ্তরের অনুমোদন আবশ্যক। ভ্রমণের আবেদনপত্রে ভ্রমণের উদ্দেশ্য, সময়কাল, ভ্রমণ ব্যয়ের উৎস এবং বিদেশে অবস্থানকালীন কার্যক্রমের বিবরণ থাকতে হয়। অনুমোদন পাওয়ার পর কর্মকর্তারা ভ্রমণের প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যাওয়ার নিয়ম
নো অবজেকশন সার্টিফিকেটঃ বিদেশ ভ্রমণের জন্য নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC) সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সংগ্রহ অপরিহার্য। এনওসি পাওয়ার পরই দূতাবাসে ভিসার জন্য আবেদন করা সম্ভব।

ব্যয় ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়নঃ সরকারি ভ্রমণের ব্যয় সরকারি তহবিল, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা অন্যান্য উৎস থেকে যথাযথ বাজেট অনুমোদন এবং সংশ্লিষ্ট খাত থেকে অর্থ ছাড়ের প্রয়োজন হয়। ব্যক্তিগত খরচ বহন করতে হলে সেটিও উল্লেখ করতে হয়।

পাসপোর্ট ও ভিসার নিয়মঃ সরকারি কাজে ভ্রমণের জন্য সরকারি পাসপোর্ট (Official Passport) প্রস্তুত করার সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হয়। সরকারি বা অফিসিয়াল পাসপোর্ট নীল রঙ্গের হয়। ভিসার জন্য নির্ধারিত নিয়মে আবেদন করে দূতাবাসের অনুমোদন নিতে হয়।

প্রতিবেদন জমাঃ বিদেশ ভ্রমণ শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ভ্রমণ সংক্রান্ত কার্যক্রমের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তার দপ্তরে জমা দিতে হয়।
আরো পড়ুনঃ কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়
সীমাবদ্ধতা ও নিয়মিত তদারকিঃ সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালা অনুযায়ী ভ্রমণের সময়সীমা, খরচের সীমা এবং কার্যক্রমের ধরণ নির্ধারিত থাকে। কোনো কর্মকর্তার ভ্রমণ এই সীমার বাইরে হলে মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন।

সরকারি পাসপোর্টের সুবিধা

সরকারি পাসপোর্ট একটি বিশেষ ধরণের পাসপোর্ট যা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণের জন্য প্রদান করা হয়। এটি সাধারণ পাসপোর্ট থেকে আলাদা এবং এর কিছু অতিরিক্ত সুবিধা রয়েছে। সরকারি পাসপোর্টের মাধ্যমে কর্মকর্তারা সরকারি দায়িত্ব পালনে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ করতে পারেন। নিচে সরকারি পাসপোর্টের সুবিধাগুলো তুলে ধরা হলো।
  • সরকারি পাসপোর্ট শুধুমাত্র সরকারি কাজে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত। এটি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে গ্রহণযোগ্য এবং এর মাধ্যমে সরকার-সমর্থিত ভ্রমণকারীদের পরিচয় সহজে নিশ্চিত করা যায়। এর ফলে ভিসা প্রাপ্তি প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে সহজ হয়।
  • অনেক দেশ সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। নির্দিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি থাকলে, সরকারি পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন বা দ্রুত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিসা পান।
  • সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালা থেকে জানা যায়, সরকারি পাসপোর্টধারীরা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সময় বিশেষ মর্যাদা এবং নিরাপত্তা পান।
  • সরকারি পাসপোর্ট শুধুমাত্র সরকারি উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত হওয়ায় এটি ব্যক্তিগত পাসপোর্টের মতো সাধারণ ভ্রমণের জন্য নয়।
  • সরকারি কাজে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমান ভাড়া, আবাসন এবং অন্যান্য খরচ সরকার বহন করে এবং তা নির্দিষ্ট দপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সুসংহত থাকে।
  • অনেক ক্ষেত্রে সরকারি পাসপোর্টধারীদের নির্দিষ্ট এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ, আলাদা চেক-ইন সুবিধা এবং দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার সুবিধা প্রদান করা হয়।
সঠিক নিয়ম মেনে সরকারি পাসপোর্ট ব্যবহার করলে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সহজ ও কার্যকর হয়। তাদের দায়িত্ব পালনে আরো স্বচ্ছন্দ্যবোধ ও সুশৃঙ্খলতাবোধ করেন।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালা তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে বিদেশ ভ্রমণের জন্য সরকারি চাকরিজীবীদের নীতিমালা, বিদেশ ভ্রমণ ভাতা এবং সরকারি পাসপোর্ট সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url