হাজরে আসওয়াদ কে স্থাপন করেছিলেন বিস্তারিত জেনে নিন

হাজরে আসওয়াদ কে স্থাপন করেছিলেন সে প্রসঙ্গ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই থাকছে আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, হাজরে আসওয়াদ এর গুরুত্ব কি? সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সমূহ। তাই আমাদের আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন পাজরে আসওয়াদ এর সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
হাজরে-আসওয়াদ-কে-স্থাপন-করেছিলেন-বিস্তারিত-জেনে-নিন
মুসলমানদের আবেগ অনুভূতি এবং ইবাদতের প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে কাবা শরীফ। এখানে স্থাপন করা একটি পবিত্র পাথরের নাম হচ্ছে হাজরে আসওয়াদ। হয়তো এমন অনেকেই আছেন যারা এই পবিত্র পাথরটির নাম জানেন কিন্তু এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। তাই আজকের পোস্টের মাধ্যমে আমরা হাজরে আসওয়াদ কে স্থাপন করেছিলেন এবং এর সম্পর্কে আরো নানান বিষয় সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব। আশা করছি আপনারা ধৈর্য সহকারে আজকের পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন।

ভূমিকা

মুসলমানদের কাছে হাযরে আসওয়াদ হচ্ছে একটি মূল্যবান এবং অতি পবিত্র পাথর। এটি কাবা শরীফের দেয়ালে মর্যাদাপূর্ণ ভাবে স্থাপিত করা রয়েছে। এই পবিত্র পাথরটি সম্পর্কে এমন অনেক কিছু আছে যা হয়তো আমরা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানিনা। আজকের পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানবো হাজরে আসওয়াদ কি, হাজরে আসওয়াদ এর ইতিহাস, হাজরে আসওয়াদ এর গুরুত্ব কি, হাজরে আসওয়াদ পাথর চুরি, হাজরে আসওয়াদ কে স্থাপন করেছিলেন এবং হাজরে আসওয়াদ কেন স্থাপন করা হয়েছিল সে বিষয় সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্ত।

হাজরে আসওয়াদ কি

হাজরে আসওয়াদ মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের একটি পবিত্র কালো পাথরকে বলা হয়। পবিত্র কাবা হচ্ছে মুসলিমদের ইবাদতের এবং আবেগের প্রধান স্থান। এই কাবা ঘরের দেয়ালে মর্যাদাপূর্ণভাবে স্থাপন করা রয়েছে হাজরে আসওয়াদ বা পবিত্র সেই কালো পাথরটি। মূলত হাজরে আসওয়াদ এর অর্থ হচ্ছে কালো পাথর। এই পাথরটিকে জান্নাতি পাথর বলা হয়।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয় যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন হাজরে আসওয়াদ হচ্ছে জান্নাতের পাথর। এটি মুসলিমদের জন্য নির্দিষ্ট প্রতীক এবং ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি প্রথমে অনেক বেশি অর্থাৎ দুধের চাইতেও বেশি ধবধবে সাদা ছিল। যা পরবর্তীতে মানুষের গুনাহ এর কারণে কালো হয়ে গিয়েছে। (তিরমিজি, হাদিস: ৮৭৮)

হাজরে আসওয়াদ এর ইতিহাস

হাজরে আসওয়াদ বা জান্নাতি পাথরটি পৃথিবীতে আসার বিষয়ে একটি ইতিহাস রয়েছে, যা অনেকেরই জানা নেই। তাফসীরে মাযহারীতে এ বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে বা বর্ণিত রয়েছে, হযরত আদম (আঃ) জান্নাত থেকে পৃথিবীতে অবতরণ করেন, তখন আল্লাহ তায়ালা বায়তুল মাকদাসের অনুরূপ একটি স্থান, যা বাইতুল মামুর নামে পরিচিত সেটি পৃথিবীতে নামিয়ে আনেন। 

এটি কাবা ঘরের পূর্বে কেবলার স্থান হিসেবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন তাফসির ও ঐতিহ্যের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, হাজরে আসওয়াদ এবং কাবার গুরুত্ব ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। এর মাধ্যমে মুসলমানগণ তাদের একীভূত ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক চেতনা প্রতিফলিত করে থাকেন। হাজরে আসওয়াদ এবং কাবা শরীফ ইসলামের সর্বজনীন সংহতির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

হাজরে আসওয়াদ এবং কাবাঘরঃ

কাবাঘরকে পৃথিবীর প্রথম মসজিদ বলা হয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, আদম ও হাওয়া (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে কাবাঘরের আকৃতি ও অবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ) কাবাঘর পুনর্নির্মাণ করেছিলেন। হাজরে আসওয়াদকে কাবাঘরের একটি অংশ হিসেবে স্থাপন করা হয়।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং হাজরে আসওয়াদঃ

হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা বিজয়ের পর কাবাঘরকে মূর্তিপূজা থেকে শুদ্ধ করেছিলেন এবং আবারও তা এক আল্লাহর ইবাদতের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। কাবাঘর পুনর্নির্মাণের সময় হাজরে আসওয়াদকে কাবাঘরের কোণে স্থাপন করার বিষয়ে কুরাইশদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। 

প্রত্যেকেই চেয়েছিলেন নিজের হাতে হাজরে আসওয়াদকে স্থাপন করার। হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই সমস্যার সমাধান করেছিলেন। তিনি একটি চাদরের উপর হাজরে আসওয়াদ রেখে কুরাইশদের প্রতিনিধিদেরকে চাদরটি ধরে তুলে কাবাঘরে স্থাপন করতে বলেছিলেন।

হাজরে আসওয়াদ এর গুরুত্ব কি

আপনারা যারা হাজরে আসওয়াদ এর গুরুত্ব কি এই সম্পর্কে জানতে এসেছেন তাদের জন্যই আজকে আমি এ বিষয়টি সঠিকভাবে এই অংশে তুলে ধরেছি। আমাদের মধ্যে অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাইয়েরা রয়েছে যারা হজ ও ওমরাহ পালন করতে হজে যেয়ে থাকেন। এই হজে গিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলিম ভাইয়েরা হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করে থাকেন। 

কারণ এই পাথরটি অনেক পবিত্র একটি পাথর যেখানে হজের সকল প্রাণপ্রিয় মুসলমান ভাইদের স্পর্শ করা সুন্নত। এইখানে স্পর্শ করলে অনেক বেশি সওয়াব পাওয়া যায় এবং এটির মেইন কারণ হচ্ছে আল্লাহর সাথে বন্ধুত্ব অর্জন করা। আল্লাহর প্রতি আগত হওয়া এবং আল্লাহ তাআলার ও নবী রাসুলের ইবাদত করা। 

ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই ও বোনেরা বিশ্বাস করেন, এই পাথর তাদের পাপ মোচনে সহায়ক। তাই এই পাথরটির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। আশা করি হাজরে আসওয়াদ এর গুরুত্ব কি এই বিষয়ে সঠিকভাবে জানতে পেরেছেন।

হাজরে আসওয়াদ পাথর চুরি

হাজরে আসওয়াদ একবার চুরি হয়েছিল বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে। ৯৩০ খ্রিস্টাব্দে কাতারাইট নামে একটি বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী, যারা কারমাথীয় সম্প্রদায়ের সদস্য ছিল, মক্কায় আক্রমণ চালিয়ে হাজরে আসওয়াদ চুরি করে নিয়ে যায়। এই গোষ্ঠী এটি নিয়ে ২২ বছর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল এবং ইসলামের পবিত্র এই নিদর্শনটি ফিরিয়ে দেয়নি। অবশেষে ৯৫১ খ্রিস্টাব্দে তারা পাথরটি কাবায় ফিরিয়ে দেয়, তবে ততদিনে এটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

চুরির প্রভাব ও মুসলিম উম্মাহর প্রতিক্রিয়াঃ

হাজরে আসওয়াদ চুরির এই ঘটনা মুসলিম উম্মাহকে অত্যন্ত মর্মাহত করেছিল। এই চুরি ইসলামের জন্য একটি বড় আঘাত ছিল, কারণ কাবা শরিফের এই পবিত্র নিদর্শনটি মুসলমানদের জন্য অমূল্য। শুধু তাই নয় প্রতিবছর বিভিন্ন দেশ থেকে যে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাই ও বোনেরা হজ পালন করতে যান তারা সকলেই সেই পাথরে স্পর্শ করে তাদের পাপ মুক্ত করে। 

হাজরে আসওয়াদ পাথর চুরি ঘটনা খুবই ভয়াবহ এবং মুসলমান ভাইদের জন্য খুবই দুঃখের বিষয় ছিল। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে এই পাথরটি সেই গোষ্ঠীর কাছ থেকে কাবাই ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়। এই ঘটনাটি ইসলামের পবিত্র স্থানগুলির সুরক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য মুসলিমদের সতর্কতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। 

আজও হাজরে আসওয়াদকে সুরক্ষিত রাখা হয়, এবং এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতীক হিসেবে শ্রদ্ধার সঙ্গে কাবা শরিফে রাখা আছে। এবার আমরা জেনে নেব হাজরে আসওয়াদ কে স্থাপন করেছিলেন এই বিষয়ে।

হাজরে আসওয়াদ কে স্থাপন করেছিলেন

হাজরে আসওয়াদ বা "কালো পাথর" ইসলাম ধর্মের অন্যতম পবিত্র পাথর, যা মক্কার পবিত্র কাবা শরীফে স্থাপিত আছে। ইসলামের ইতিহাসে এটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি নবী ইব্রাহিম (আ.) এবং তার পুত্র ইসমাইল (আ.) দ্বারা কাবা নির্মাণের সময় স্থাপিত হয়েছিল।

মহান আল্লাহর নির্দেশে নবী ইব্রাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.) কাবা নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় পাথর সংগ্রহ করছিলেন। তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ পাথর তাঁদের কাছে পাঠানো হয়, যা হাজরে আসওয়াদ নামে পরিচিত। পাথরটি তখন ছিল একদম দুধের মত সাদা, কিন্তু আদমদের সন্তানদের পাপের কারণে তা কালো হয়ে গেছে। (তিরমিজি)

একবার কাবা পুনর্নির্মাণের সময় বিভিন্ন গোত্রের লোকেরা এই পাথরটি পুনরায় স্থাপনের অধিকার নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে, নবী মুহাম্মদ (সা.) সকলের সম্মতি নিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্থাপনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। 

তিনি নিজ হাতে এটি তুলে কাবায় স্থাপন করেন, যা আজও কাবা শরীফের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে রয়ে গেছে। হাজরে আসওয়াদ শুধু ইসলাম ধর্মে নয়, মানব ইতিহাসেও একটি মূল্যবান প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এটি মুসলমানদের আল্লাহর প্রতি গভীর শ্রদ্ধার প্রতীক।

হাজরে আসওয়াদ কেন স্থাপন করা হয়েছিল

ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, এটি জান্নাত থেকে আগত একটি বিশেষ পাথর, যা প্রথমে সাদা ছিল কিন্তু মানুষের পাপের কারণে কালো হয়ে যায়। হাজরে আসওয়াদ কাবা শরিফের পূর্ব কোণে অবস্থিত, এবং এটি তাওয়াফের সময় মুসলিমরা হাত বা চুম্বন দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

ইসলামি ইতিহাস অনুসারে, কাবা নির্মাণের সময় নবী ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ.) এই পবিত্র পাথরটি স্থাপন করেন। হাজরে আসওয়াদের মূল উদ্দেশ্য ছিল মুসলিমদের জন্য তাওয়াফের সূচনা ও শেষের নির্দিষ্ট চিহ্ন হিসেবে কাজ করা। এই এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য ঐক্য এবং শ্রদ্ধার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। 

কারণ হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করা বা চুম্বন করা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একটি সুন্নাহ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হাজরে আসওয়াদ মুসলিমদের জন্য একটি গভীর আধ্যাত্মিক তাত্পর্য বহন করে। ইসলামের এই পবিত্র নিদর্শনটির মাধ্যমে মুসলিমরা তাদের ঈমানের দৃঢ়তা এবং আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্যের প্রকাশ ঘটায়।

লেখকের মন্তব্য | হাজরে আসওয়াদ কে স্থাপন করেছিলেন

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা সকলে হাজরে আসওয়াদ কে স্থাপন করেছিলেন তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মতামত আমাদের জানানোর থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ার করার মাধ্যমে আপনার পরিবার এবং পরিজনের সকলকে হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যগুলো জানার সুযোগ করে দিন। (ধন্যবাদ)

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url