গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। তাই আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন এর সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
অনেক গুণে গুণান্বিত হওয়ার কারণে একে সুপার ফুড বলা হয়ে থাকে। এই সুপার ফুডটি বিশেষ করে গর্ভবতীদের জন্য খুবই উপকারী। তাই আজকের পোস্টে গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।
ভূমিকা
চিয়া সিড হচ্ছে একটি শস্যজাতীয় উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। তবে আমরা অনেকেই হয়তো এর বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। তাই আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানব - চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ, চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ, চিয়া সিড খেলে কি বুকের দুধ বাড়ে, চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা, গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ
বর্তমান সময়ে মানুষদের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা একটু বেশি পরিমাণেই দেখা যায়। যার কারনে সুস্থ থাকার জন্য পুষ্টিকর খাবারের খোঁজে থাকেন সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ব্যক্তিরা। আর এই স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড সর্বপ্রথম স্থানে থাকে। সালফিয়া হিসপানিকা নামক মিন্ট প্রজাতির এক উদ্ভিদের বীজ হচ্ছে চিয়া সিড। এটি কালো এবং সাদা দুই রঙেরই হয়ে থাকে এবং এটি দেখতে অনেকটা তিলের মত ছোট আকৃতির হয়ে থাকে। নিম্নে প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ গুলো উল্লেখ করা হলো।
- কার্বোহাইড্রেট ৪২.১ গ্রাম
- গ্লুটেন ০%
- ক্যালোরি ৪৮৬
- ফাইবার বা খাদ্য আঁশ ৩৪.৪ গ্রাম
- ফ্যাট ৩০.৭ গ্রাম
- প্রোটিন ১৬.৫ গ্রাম
- পানি ৬%
- চিনি ০ গ্রাম
- পালং শাকের থেকে তিনগুণ বেশি আয়রন
- দুধের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম
- স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা - ৩
- কমলার চাইতে সাত গুণ বেশি ভিটামিন সি
- কলার তুলনায় দ্বিগুণ পটাশিয়াম
চিয়া সিড খাওয়ার পরিমাণ
চিয়া সিড আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি শস্যজাতীয় উদ্ভিদ। তবে যেকোনো কিছুর উপকার পেতে হলে অবশ্যই তা নিয়ম মেনে পরিমাণ মতোই গ্রহণ করা উচিত। তাই চিয়া সিড গ্রহণ করে উপকৃত হতে হলে অবশ্যই সঠিক পরিমাণ অনুযায়ী এটি সেবন করতে হবে। তাছাড়া শুধু স্বাভাবিক অবস্থাতেই নয়, গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কেও জেনে তারপরেই এটি গ্রহন করতে হবে। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে চিয়া সিড খাওয়া উচিত।
চিয়া সিড খেলে কি বুকের দুধ বাড়ে
ব্রেস্ট ফিডিং এর সময় অর্থাৎ শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর সময় চিয়া সিড মাত্রাতিরিক্ত উপকারী সাব্যস্ত হয়ে থাকে। কারণ একজন মায়ের দুধ উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন তার নিজ শরীরে অতিরিক্তভাবে প্রায় ৪৫০ থেকে ৫০০ ক্যালোরি প্রয়োজন। যেহেতু স্তন্যপানকারী শিশু মায়ের বুকের দুধ থেকেই পুষ্টিগুণ গ্রহণ করে থাকে সেহেতু বলা যায় চিয়া সিড খেলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় এর বৃদ্ধিতে অনেক বেশি পরিমাণে সুবিধা পাওয়া যায়।
চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা
চিয়া সিড এর বিদ্যমান পুষ্টির গুণাবলি অতুলনীয়। চিয়া সিড আমাদের মানব দেহে অনেক রকম উপকারিতা প্রদান করে থাকে। সু-স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং স্বাস্থ্যের উপকারী সকল দিকগুলো বিবেচনা করে আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে চিয়া সিডের ভূমিকা অনেকাংশ বিস্তৃত হয়ে রয়েছে।
চিয়া সিডে থাকা পুষ্টিকর উপাদান গুলো দেহে সরাসরি দুগ্ধ বা দুগ্ধজাত পণ্যের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি উপকারী গুণাবলী প্রদান করে থাকে। চিয়া সিডের মধ্যে থাকা উপকারী গুণগুলোর দৃষ্টান্ত রেখে একে পুষ্টির পাওয়ার হাউস হিসেবে অভিহিত করা হয়। চিয়া সিড খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
হ্রদ রোগে চিয়া সিডঃ হ্রদ রোগ থেকে দূরে থাকতে চিয়া সিডের ভূমিকা বেশ জানা শোনা একটি প্রশংসা। চিয়া সিডে থাকা উচ্চ পরিমাণে আঁশ জাতীয় উপাদান দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। ফলের হৃদ রোগের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। তাছাড়া এতে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান গুলো শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং হার্টের উন্নতি সাধনের সমান ভাবেই সাহায্য করে।
শরীরে পুষ্টি যোগানঃ উপরোক্ত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে এটিকে প্রচলিত কথায় পুষ্টির পাওয়ার হাউস মা শক্তিঘর বলা হয়। এটি এতো পরিমাণে পুষ্টিগুণের সমৃদ্ধ যে, চিয়া সিড সেবনে শরীরে অনেক রকম পুষ্টিগুণ লাভ করা সম্ভব। নিত্য দিনের খাদ্যাভাসে সামান্য পরিমাণে চিয়া সিড সংযুক্ত করলে এটি আমাদের সুষম খাদ্যের গুনাগুনকে আকর্ষণীয় ভাবে কয়েক গুনে ফুটিয়ে তোলে।
স্বাস্থ্যকর ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ ওজন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ওজন হ্রাস করার জন্য চিয়া সিড সার্বজনীন পছন্দ। ওজন নিয়ন্ত্রণের ডায়েটে চিয়া সিড যোগ করলে এতে থাকা ফাইবার, প্রোটিন এবং অন্যান্য উপাদান গুলো স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে অর্থাৎ ওজন ধরে রাখতে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ওজন কমাতে সাহায্য করে।
অম্লত্ব রোধেঃ নিয়মিত চিয়া সিড সেবন করলে শরীরের অম্লতা বা অ্যাসিডিটির উপদ্রব হ্রাস পেতে থাকে। গর্ভাবস্থায় এই সমস্যাটি সবচাইতে বেশি দেখা যায়। তাই গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম জানা থাকলে এবং সেই নিয়ম অনুযায়ী চিয়া সিড খেলে অম্লত্বের সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব।
অস্থিমজ্জা দৃঢ় করতেঃ চিয়া সিডে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ জাতীয় উপাদান গুলো আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ গঠনে ভূমিকা পালন করে। এটি হাড়কে দৃঢ় করে এবং এর খনিজ উপাদান গুলি হাড়ের সুস্বাস্থ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। চিয়া সিট খাওয়ার ফলে হারের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণেঃ চিয়া সিড শরীরের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে ভূমিকা প্রদান করে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে শরীরে নানা রকম জটিলতা যেমন ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয় যার কারণে দৈনন্দিন জীবন অনেকটা বাধা গ্রস্থ হয়। তাই নিয়মিত চিয়া সিড গ্রহণ করে রক্তে শর্করার পরিমাণ বজায় রাখা ভালো।
ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করেঃ চিয়া সিডে থাকা উপাদানগুলো আমাদের দেহের কোলন গুলোকে সাফ করার কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। এর কোলনগুলো পরিষ্কার থাকার ফলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তাই চিয়া সিড বিরাট এক ব্যাধির ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্যকারী।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত চিয়া সিড সেবনে এতে বিদ্যমান এন্টি অক্সিডেন্ট গুলোর উপস্থিতির কারণে শরীরের ইমিউন সিস্টেম বৃদ্ধি পেতে থাকে।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় তাদের স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ যত্ন দিতে হয়। গর্ভাবস্থায় নারীদের তাদের নিত্যদিনের খাবার এ ব্যাপারে সচেতনতার ভূমিকা রাখতে হয়। এক্ষেত্রে অনেক রকম খাবারের নিষেধ থাকা এবং কিছু খাবার খাওয়ার জন্য উপদেশ মূলক তথ্য প্রদান করা হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া উপযুক্ত কিনা সে বিষয়েও অনেক গর্ভবতী মায়েরা চিন্তিত থাকেন।
এ সকল দুশ্চিন্তার উত্তরে বলা যায়, গর্ভাবস্থায় চিয়া সিট খাওয়া খুবই নিরাপদ এবং উপকারী প্রমাণিত হলেও সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যকীয়। এটি পরিমিত সেবনে মা ওই শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ভুমিকা রাখে তাই গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।
- চিয়া সিডের নিজস্ব স্বাদ ফেকাসে হওয়ার কারণে যেকোনো খাদ্যের সাথে মিশিয়ে কিংবা বিকল্প হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
- স্যুপ, ডাল ইত্যাদি তরল জাতীয় খাদ্য ঘন করে খাওয়ার জন্য চিয়া সিড ব্যবহার করা যেতে পারে।
- চিয়া সিডকে মৌসুমী ফলের সাথে ব্লেন্ড করে ফলের জুস কিংবা স্মুদির ন্যায় সেবন করা যায়। এতে ফলের মিষ্টি চলে আসায় খেতেও দারুণ লাগে।
- সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তায় চিয়া সিড বিভিন্ন নাস্তার আইটেমের মধ্যে সংযোগ করে খাওয়া যায়।
- কিছু ক্ষেত্রে ভাতের সাথে চিয়া সিড যোগ করেও খাওয়া যায়।
- চিয়া সিড ডিমের অনুকল্প হিসেবে বেকিং এর খাবারে যোগ করে খাওয়া যায়।
চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা
চিয়া সিড আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপাকারি একটি খাদ্য। তবে নিয়ম এবং পরিমান অনুযায়ী যদি এটি খাওয়া না হয় সেক্ষেত্রে এর অপকারিতার সম্মুখীনও হতে পারেন। তাছাড়া যে কোনো খাদ্য পরিমানের তুলনায় অধিক গ্রহণ করলে তা মোটেও সুখকর হয় না। নিম্নে চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা বা ক্ষতিকারক দিক গুলো উল্লেখ করা হলো।
- মাত্রাতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে
- এক গবেষণায় জানা যায় যে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিয়া সিড খেলে স্তন ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
- পরিমাণের চাইতে বেশি অর্থাৎ মাত্রাতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমতে পারে যে ব্যক্তির জন্য মোটেও সুখকর নয়।
লেখকের মন্তব্য
আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনার গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। তবে আপনার অথবা আপনার পরিবারের বা পরিচিত কারো যদি গর্ভাবস্থায় খাদ্যের নিয়ম জানার প্রয়োজন হয়ে থাকে তবে সর্বপ্রথম অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ারের মাধ্যমে অন্য সবাইকেও এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন।
ধনবাদ।
মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url