বেরিবেরি রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয় তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বেরিবেরি রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয় তার সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে বেরিবেরি রোগ প্রতিরোধ করে কোন খাবার এই প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর বা তথ্য। তাই আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন বেরিবেরি রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয় এ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন।
বেরিবেরি-রোগ-কোন-ভিটামিনের-অভাবে-হয়-তার-সম্পর্কে-বিস্তারিত-জানুন

আমরা অনেকেই অনেক ধরনের রোগের নাম সম্পর্কে অবগত কিন্তু এর মাঝেও কিছু রোগ এমন রয়েছে যার সম্পর্কে আমাদের ধারণা বিন্দুমাত্র নেই। এর মধ্যে বেরিবেরি রোগ অন্যতম একটি রোগ। এর সম্পর্কে অনেকেই তেমন কিছু জানেন না। তাই আজকের পোস্টে বেরিবেরি রোগ সম্পর্কে এবং বেরিবেরি রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয় তার সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।

ভূমিকা

সাধারণত যে কোন রোগই অপুষ্টি এবং জীবাণুর কারণে হয়। তাছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের শরীরের প্রতি অবহেলার কারণেও আমরা অনেক রোগের শিকার হয়ে থাকি তার মধ্যে বেরিবেরি অন্যতম। আজকের পোস্টে আমরা যা যা জানবো তা হল, বেরিবেরি রোগ কি, বেরিবেরি রোগ হলে কি হয়, বেরিবেরি রোগ প্রতিরোধ করে কোন খাবার, বেরিবেরি রোগ কেন হয়, বেরিবেরি রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয়, বেরিবেরি রোগের লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত।

বেরিবেরি রোগ কি

এই রোগের নামের সাথে আমরা অনেকেই অপরিচিত। বেরিবেরি রোগটি সাধারণত শরীরে পুষ্টির ঘাটতির কারণে হয়ে থাকে। এটি বিশেষত সে সকল জায়গায় দেখা দেয় যেখানে খাবারে থাকা প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং পুষ্টির অভাব থাকে। বেরিবেরি শব্দটি এসেছে সিংহলি শব্দ থেকে, এর অর্থ 'চরম দুর্বলতা'। এর অর্থ কে আরেক ভাবে বলা যায় যে, আমি পারিনা। কারণ এ রোগে আক্রান্ত রোগী ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে যার কারণে কোন কাজকর্ম কিছুই সে করতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে না।

বেরিবেরি রোগ হলে কি হয়

বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত রোগী অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজের কাজকর্ম অথবা কোন কিছুই সঠিকভাবে করতে পারেনা। এই রোগ সম্পর্কে জানতে হলে সর্বপ্রথম জানতে হবে এর লক্ষণ সম্পর্কে দ্বিতীয়ত বেরিবেরি রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয় এর বিষয়ে।

বেরিবেরি রোগ কেন হয়

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ক্যালরি যুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হয়। আবার পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার না খেলেও এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অর্থাৎ খাবারের নিয়মটি থাকতে হবে সব সময় স্বাভাবিক। যা আমাদের শরীরের পুষ্টি জোগাবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি জেনেটিক কারণেও হয়ে থাকে।

যদিও বা এটি বিরল তবুও যদি এটি জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে তবে এটি অনেক গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, যেসব জায়গায় অতিরিক্ত পালিশ করা চালকে প্রধান খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় বা গ্রহণ করা হয় সেসব জায়গায় এই রোগটি অধিক মাত্রায় হয়ে থাকে।

কারণ চালের বাইরের স্তর গুলিকে পালিশ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরিয়ে দেয়া হয় যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে থায়ামিন। এই থায়ামিন শরীরের জন্য অনেক প্রয়োজনীয়। শরীরে মূলত এর ঘাটতি হওয়ার কারণেই বেরিবেরি রোগ হয়ে থাকে।

বেরিবেরি রোগ প্রতিরোধ করে কোন খাবার

বেরিবেরি রোগ থেকে বাঁচার জন্য খাবারই একমাত্র উপায়। অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনের খাবারের পুষ্টির দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য বা এই রোগটিকে এড়ানোর জন্য। যে সকল খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে থায়ামিন রয়েছে সেই ধরনের খাদ্য অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে।

এবং যাদের থায়ামিনের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের জন্য স্থায়ামিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা অনেক অনেক বেশি জরুরি সাথে খেয়াল রাখতে হবে, মদ্যপান থেকে যেন তারা অবশ্যই দূরে থাকে। সাথেই বেরিবেরি রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয় তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা থাকলেও এই রোগের প্রতিরোধ করা সম্ভব। যে সকল খাদ্য থায়ামিনের অভাব পূরণ করে বেরিবেরি রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারবে বা বেরিবেরি রোগ প্রতিরোধ করে কোন খাবার তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

  • ক্ষুদি ভাত
  • ডাল
  • মুগ ডাল
  • তিলের তেল
  • গোল্ডেন রাইস
  • গরুর মাংস
  • চরবিহীন মাংস
  • গোটা শস্য
  • সিম
  • বাদাম
  • হাই প্রোটিন যুক্ত মাছ
  • ব্রকলি ইত্যাদি। 

বেরিবেরি রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয়

বেরিবেরি হচ্ছে এটি শোথ জাতীয় রোগ যা ভিটামিন 'ডি-১' বা থায়ামিনের অভাবে হয়ে থাকে। তাছাড়া জীবাণুর কারণেই সাধারণত যেকোনো ধরনের রোগ হয়ে থাকে। দেহের কোষসমূহ থায়ামিনের অভাব হলে দেহে গ্লুকুজ এর ব্যবহার সঠিকভাবে করতে পারেনা বা পরিচালনা করতে পারে না। যার কারনে অনেক ক্ষেত্রে স্নায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয় এবং হার্ড ফেইলিওর জনিত সমস্যা হতে পারে।

সাথে শরীরে পানি আসার মত সমস্যাও হতে পারে যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ইডিমা নামে পরিচিত। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বেরিবেরি রোগটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের ক্ষেত্রেই সাধারণত বেশি দেখা যায়। অনেকেরই হয়তো জানা নেই, বেরিবেরি একটি জেনেটিক্যাল রোগ। জেনেটিক্যাল রোগ হওয়ার কারণে খাদ্য থেকে থায়ামিন শোষণ করা সম্ভব হয় না।

তাছাড়াও এটি ডায়েট ফলো করা ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়, যারা নিজেদের ডায়েটে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাদা ভাত এবং অত্যন্ত পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট থাকে এমন খাবার গ্রহণ করে থাকেন। বেরিবেরি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। বেরিবেরি চার প্রকারের হয়ে থাকে। এই চার ধরণের বেরিবেরি মধ্যে রয়েছে শুকনো বেরিবেরি, ভেজা বেরিবেরি, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বেরিবেরি এবং ইনফ্যান্টাইল বেরিবেরি।

বেরি বেরি রোগে আক্রান্ত হয় কোন অঙ্গ

এটি মূলত থায়ামিনের অভাবজনিত রোগ বা ভিটামিন বি-১ এর অভাবে হয়ে থাকে। এটি প্রায় শরীরের প্রতিটি অঙ্গেই কম-বেশি প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু রোগীর পায়ের নিচের দিকে তুলনামূলকভাবে একটু বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটি দুর্বলতার সৃষ্টি করার সাথেই পানি জমে শোথের  সৃষ্টি করে।

বেরিবেরি রোগের লক্ষণ

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানলাম, বেরিবেরি রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয় তার সম্পর্কে বিস্তারিত সব কিছুই এবার আলোচনা করব এর লক্ষণ সম্পর্কে। থায়ামিনের অভাবে হওয়া বেরিবেরি রোগটি এশিয়া মহাদেশে বর্তমানে নেই বললেই চলে। তবে শুধু এশিয়া মহাদেশ নয়  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও থায়ামিন এর অভাবজনিত রোগ খুব একটা দৃশ্যমান নয়।

কিছু কিছু সময় থায়ামিনের অভাবজনিত রোগ অর্থাৎ বেরিবেরি রোগটি মানুষের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। তাই এর সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু জেনে রাখা উত্তম। রোগ উপরোক্ত আলোচনায় আমরা জানলাম   এই নিম্নে বেরিবেরি রোগের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।

  • দুর্বলতা
  • ওজন কমে যাওয়া
  • হৃদস্পন্দনের অনিয়মিত সময়কাল
  • প্রতিবন্ধী সংবেদনশীলতা
  • মানসিক অস্থিরতা
  • শরীরে ব্যথা

শুকনো বেরিবেরিঃ এই ধরণের বেরিবেরি রোগকে এন্ডেমিক নিউরাইটিস বলা হয়। এর প্রভাব মূলত পেশী তন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপরে হয়ে থাকে। শুকনো বেরি বেরিতে আক্রান্ত হলে তারও কিছু লক্ষণ বর্তমান রয়েছে যা আপনাদের সুবিধার্থে নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

  • টেন্ডন রিফ্লেক্সের ক্ষতি
  • কথাবার্তার অসুবিধা
  • হাঁটতে কষ্ট হওয়া
  • মানসিক বিভ্রান্তির সৃষ্টি হওয়া
  • ব্যথা
  • হাত এবং পায়ে শিহরণ তৈরি হওয়া
  • বমি
  • অনিচ্ছাকৃত চোখের নাড়াচাড়া
  • শরীরে স্পর্শকাতরতা তৈরি হওয়া

ভেজা বেরিবেরিঃ মূলত কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকে ভেজা বেরিবেরি প্রভাবিত করে থাকে। এটি হৃদপিন্ডের ব্যথা এবং শরীরের কৈশিক দেয়াল গুলোকে দুর্বল করে ব্যক্তির জন্য মারাত্মক রুপ ধারণ করতে পারে। কারণ বেরিবেরি রোগ হার্ট এবং সংবহনতন্ত্রকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে থাকে। নিম্নে ভেজা বেরিবেরি রোগের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।

  • পরিশ্রমের সময় শ্বাসকষ্ট হাওয়া
  • হৃদস্পন্দনের বৃদ্ধি হওয়া
  • রাতের বেলাতে শ্বাসকষ্টের বৃদ্ধি হওয়া
  • উচ্চতর জগুলার শিরাস্থ চাপ অনুভব করা
  • পায়ের নিচের অংশ ফুলে যাওয়া
  • বুকের ব্যথা উঠে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল বেরিবেরিঃ এর মূল লক্ষণ হচ্ছে পেটে ব্যথা তাছাড়া আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।

  • পেটে ব্যথা
  • বমি
  • বমি বমি ভাব
  • ল্যাকটিক অ্যাসিডোসিস

ইনফ্যান্টাইল বেরিবেরিঃ এই ধরণের বেরিবেরি রোগে সাধারণত দুই থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। কারণ এ সকল শিশুরা নিজের মায়ের কাছ থেকে গর্ভাবস্থায় থাকা কালীন সময়ে অপর্যাপ্ত পরিমাণে থায়ামিন গ্রহণ করে যার ফলস্বরূপ এই রোগের আক্রান্ত হয়। এটি ভেজা বেরিবেরি অথবা শুকনো বেরিবেরির মতো করেও হতে পারে। নিম্নে এই রোগের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।

  • ডায়রিয়া
  • মেজাজ খারাপ
  • বমি হওয়া
  • চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
  • কর্কশতা
  • কোন শব্দ বের না করেই শিশুর কান্না করা
  • মাঝেমধ্যে টার্মিনাল পর্যায়ে খিচুনি হওয়া
  • দিন দিন ওজন কমে যাওয়া
  • দ্রুত হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া

এ সকল লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। এর চিকিৎসায় প্রায় সময় শিরায় থায়ামিন নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক বেশি গুরুতর অবস্থা হলে সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজনও হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা বেরিবেরি রোগ কোন ভিটামিনের অভাবে হয় এবং বেরিবেরি রোগ প্রতিরোধ করে কোন খাবার তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। তবে আপনার অথবা আপনার পরিবারের বা পরিচিত কারো যদি ওভারি সিস্ট হয়ে থাকে তবে সর্বপ্রথম অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ারের মাধ্যমে অন্য সবাইকেও বেরিবেরি রোগ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url