প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত - আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত তার সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে, আমলকির ক্ষতিকর দিক এর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য। তাই আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন এর সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন। 
প্রতিদিন-কয়টা-আমলকি-খাওয়া-উচিত - আমলকি-খাওয়ার-উপকারিতা
আমাদের অনেকেরই ভিটামিন সি এর কথা উঠলেই মনে পড়ে আমলকির কথা, কারণ আমরা সবাই জানি আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। তবে এই আমলকির যে আরো অনেক গুণ রয়েছে তার বিষয়ে আমরা কতটুকুই বা জানতে পেরেছি। তাই আজকের পোস্টে আমরা আমলকির গুণাগুণ এবং প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত তার সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।

ভূমিকা

প্রকৃতি আমাদেরকে কত কিছু দিয়েছে তার মধ্যে আরও একটি উপহার হচ্ছে এই আমলকি। এটি এমন একটি ফল যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভেষজ গুণ। আজকে আমরা জানবো এই আমলকি সম্পর্কে বিস্তারিত যেমন-আমলকির পুষ্টিগুণ, আমলকি খাওয়ার উপকারিতা, আমলকির ক্ষতিকর দিক, শুকনো আমলকি খেলে কি হয়, আমলকি কখন খাওয়া উচিত এবং প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত এর সম্পর্কে।

আমলকির পুষ্টিগুণ

আমলকি ফলটি হচ্ছে এক ধরণের ভেষজ ফল। এতে অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। দেশীয় এবং পুষ্টিকর ফল হিসেবে আমলকি সবার কাছে জনপ্রিয় একটি ফল। এই ফলটি মূলত সহজেই সব জায়গাতেই এবং স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায়। এর মধ্যে থাকা পুষ্টিগুণ শুধুমাত্র রোগ নিবারণ করে না বরং রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও গড়ে তুলতে সাহায্য করে থাকে।

আমলকি গাছ সাধারণত ৮ থেকে ১৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলেই আমলকির গাছ এবং ফল পাওয়া যায়। এটি শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই কম বেশি দেখতে পাওয়া যায়। তবে এর মধ্যে সবচাইতে বেশি পাওয়া যায় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সিরিয়া সহ আরো দেশগুলোতে কারণ এ সকল দেশে আমলকির চাষ করা হয়ে থাকে।

কিছু কিছু জায়গায় আমলকি গাছ ভেষজ গুণসম্পন্ন হওয়ার কারণে নয় বরং প্রকৃতির অথবা বাগানের সৌন্দর্য বর্ধণের জন্যেও এই গাছ লাগানো হয়ে থাকে। আমলকির গাছ, পাতা, ফল সবকিছুতেই রয়েছে নানান ধরণের ভেষজ গুণ। আমলকি মূলতঃ একটি রসালো ফল হওয়ার কারণে এতে পানির পরিমাণ অনেক বেশি পাওয়া যায়। গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি অন্যান্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের তুলনায় পরিমাণের দিক থেকে অনেক বেশি।

যেমন- কমলালেবুর তুলনায় ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, কলার তুলনায় ৬০ গুণ বেশি, পেয়ারার তুলনায় তিনগুণ বেশি, আপেলের তুলনায় ১২০ গুণ বেশি, কাগজি লেবুর তুলনায় দশগুণ বেশি এবং আমের তুলনায় ২৪ গুন বেশি ভিটামিন সি আমলকিতে পাওয়া যায়। হিসাব মতো প্রতিদিন অন্ততঃপক্ষে ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরে প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবে প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত সে সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। এবার নিম্নে প্রতি ১০০ গ্রাম আমলকিতে থাকা পুষ্টিগুণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

  • ৬০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি
  • ০.০১ মিলি গ্রাম রিবোফ্লেভিন
  • ২০ মিলিগ্রাম ফসফরাস
  • ৯ মাইক্রগ্রাম ক্যারোটিন
  • ৬০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম
  • ০.০৩ মিলিগ্রাম থায়ামিন
  • ১.২ মিলিগ্রাম লৌহ।

আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

যেহেতু আমলকি একটি ভেষজ ফল তাই প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদে এর ব্যবহার সবচাইতে বেশি প্রচলিত ছিল। কারণ এটি এমন একটি ভেষজ ফল যা ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্যের উপর সমানভাবে কাজ করে থাকে। প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মূলতঃ রেডিকেল থেকে সেল অক্সিডেশন প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।

তাছাড়া আমলকি মাধ্যমে আমাদের শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কারণ এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকমের রোগের মহাঔষধ হিসেবে কাজ করে। নিম্নে এই মহা ঔষধ অর্থাৎ আমলকি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।

  • আমলকিতে থাকা ফাইটো কেমিক্যাল চোখের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এই কেমিক্যাল চোখের সঙ্গে থাকা ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে অনেক সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রতিদিন আমলকির রস এবং মধু একসঙ্গে মিশিয়ে পান করলে দৃষ্টিশক্তি শক্তিশালী হয়। অর্থাৎ চোখের ছানি দূর করে এবং দূরের জিনিস দেখতে পারে।
  • এটি রাতের অন্ধত্ব অথবা রাতকানা রোগ নির্মূল করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকেন।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আমলকি অনেক বেশি কার্যকরী।
  • মহিলাদের মাসিক অথবা ঋতুচক্রের অনিয়মিতা সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে আমলকিতে থাকা কিছু খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিন অনেক বেশি উপকারী।
  • বুকের মধ্যে জমে থাকা কফ বের করতেও আমলকি সহায়তা করে থাকে। তবে এর জন্য  প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত তা আগে জানতে হবে।
  • পেটের গন্ডগোল, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং পাইলসের মতো কঠিন রোগের সমস্যা দূর করতেও আমলকির জুড়ি নেই।
  • নিয়মিত আ হবে যে, মলকি গ্রহণ করার ফলে দেহে বয়সের ছাপ পরেনা। এটি ত্বকের বলিরেখা এবং বয়সের ছাপ দুটোই দূর করতে সহায়তা করে।
  • টনিক হিসেবে চুলে আমলকির রস ব্যবহার করার পাশাপাশি এটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলেও চুলের জন্য মিলবে অনেক উপকার। আমলকি চুলের গোড়াকে ভিতর থেকে মজবুত করে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • আবার শুধুমাত্র চুল মজবুত করাই নয় চুলের খুশকির সমস্যা থেকে সমাধান পেতেও আমলকি অনেক উপকারী।
  • নিয়মিত আমলকি খেলে চুল পাকার সমস্যাও এড়ানো সম্ভব হয়ে উঠে।
  • হৃদপিন্ডের বেশি কে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে আমলকি।
  • আমলকি রক্তের কোলেস্টরেল কমিয়ে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে থাকে।

আমলকির ক্ষতিকর দিক

অতিরিক্ত কোন কিছুই গ্রহণ করা উচিত না। কারণ প্রতিটি জিনিসেরই রয়েছে একটি মাত্রা বা সীমানা। এই সীমানাটি অতিক্রম করলেই হতে পারে বিপদ। ঠিক একই ভাবে অতিরিক্ত আমলকি গ্রহণ করলে উপকারের সাথে সাথে অনেক ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি অথবা অপকারও হয়ে যেতে পারে। নিম্নে আমলকির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।

  • যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের আমলকি খাওয়া এড়ানো উচিত। কারণ রক্তচাপ বেড়ে গিয়ে বা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে এখান থেকেই শুরু হবে নতুন একটি রোগের। আরে নতুন রোগটি হচ্ছে হৃদরোগের সমস্যা যার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকার ফলে হতে পারে।
  • অতিরিক্ত আমলকি সেবনের ফলে হতে পারে কিডনিতে পাথরের সমস্যা। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অক্সলেট জাকির নিতে পাথরের সৃষ্টি করে থাকে।
  • তাছাড়া ডায়রিয়া, বদহজম এবং পেট ফাঁপার মত সমস্যাও হতে পারে এর অতিরিক্ত ব্যবহারে।
  • আবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও হতে পারে।

এসকল ক্ষতি এড়াতে প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত এবং কতটুকু খাওয়া উচিত তার বিষয়েও জানতে হবে। যেন আমরা নিজেদের উপকার করতে গিয়ে কোনো রকম ক্ষতি না করে ফেলি সেজন্য।

শুকনো আমলকি খেলে কি হয়

আমলকিতে এমন অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে অনেকেই আছেন যারা কাঁচা আমলকি খেতে অপছন্দ করেন বিধায় তাদের মনে এই প্রশ্নটি থেকে যায় যে, শুকনো আমলকি খেলে কি কোন উপকার পাওয়া যাবে? তাই আজকে আমরা এই প্রশ্নের উত্তরটাই খুজবো এবং জানবো।

যেহেতু আমলকি কাঁচা এবং শুকনো দুভাবেই আমাদের জন্য শুধুমাত্র উপকারী নিয়ে আসছে তাই এটি যেভাবেই খাওয়া হোক না কেন এটি শরীরের উপকারের জন্যই কাজ করবে। তাছাড়া শুকনো আমলকি এবং কাঁচা আমলকির উপকারিতা গুলো প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে। তারপরও কিছুটা এমনও উপকারিতা আছে যা শুধুমাত্র শুকনো আমলকি খেলে পাওয়া যায়। নিম্নে শুকনো আমলকির এই সকল উপকারিতাগুলো উল্লেখ করা হলো।

  • প্রতিদিন যদি শুকনো আমলকি খাওয়া যায় তবে এতে করে বন্ধ্যাত্ব দূরীকরণ সম্ভব হয়ে ওঠে।
  • সর্দি কাশির সমস্যাতেও শুকনা আমলকির উপকারিতার তুলনা হয় না।
  • অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় মুখ থেকে প্রচুর পরিমাণে দুর্গন্ধ বের হয় কেবলমাত্র দাঁত এবং মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার না হওয়ার কারণে। এর ফলে আপনার সাথে সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে থাকা মানুষটির আপনার প্রতি একটি খারাপ দৃষ্টিকোণ সৃষ্টি হয়। এর হাত থেকে বাঁচাতে পারে একমাত্র শুকনো আমলকি। এই ক্ষেত্রে মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে শুকনো আমলকি চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে মুখের দুর্গন্ধ তোর হয়ে মুখে থেকে আসবে সজীবতার নিঃশ্বাস।

আমলকি কখন খাওয়া উচিত

মূলত যে কোন খাবার পুষ্টি উপাদান যোগানোর জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় এর প্রয়োজন পড়ে না। তারপরও কিছু কিছু খাদ্য একটি বাধা ধরার সময় খেতে তার থেকে আমরা একটু বেশি পরিমাণে উপকার গ্রহণ করতে পারবো। সকালবেলাতে ঘুম থেকে উঠার পর পেটের মধ্যে কোন খাবার না থাকার কারণে যেকোনো পুষ্টিকর খাবার সে সময় খেলে তা একটু বেশি ফলদায়ক হয়ে থাকে। কারণ সেই সময় পেটের ভেতর পুষ্টি গ্রহণ করার জন্য বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অন্য কোন খাবার থাকে না। তাই বলা চলে যে, আমলকি খাওয়ার উচিত সময় হচ্ছে সকালবেলা খালি পেটে।

প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত

দেশীয় ফলের মধ্যে আমলকি ফলটি হচ্ছে অন্যতম যা একাই একশ গুণসম্পন্ন বলা চলে। তাই আমলকির গুন সম্পর্কে যতই বলা হবে ততই কম। দেশীয় ফল হওয়ার কারণে এটি একটি সহজলভ্য এবং অল্প মূল্যে পাওয়া যায় এমন একটি ফল। অন্যান্য ফলের তুলনায় আমলকিতে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার মত ক্ষমতা রয়েছে দ্বিগুণ পরিমাণে।

তাই ভিন্ন ভিন্ন ধরনের রোগের বিরুদ্ধেও আমলকি একাই শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন দুটো করেও যদি আমলকি একজন ব্যক্তি গ্রহণ করে তবে ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি শরীরে তৈরি করা সম্ভব যা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শরীরের প্রতিদিনের চাহিদা বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অর্থাৎ একজন ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন অন্ততপক্ষে দুটি আমলকি অবশ্যই খাওয়া উচিত।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ারের মাধ্যমে অন্য সবাইকেও আমলকি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url