পেটের মেদ কমাতে টক দই এর ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানুন

পেটের মেদ কমাতে টক দই এর ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়বস্তু নিয়েই আমাদের আজকের মূল আলোচনা। সাথেই আপনাদের জন্য আরও থাকছে ওজন কমাতে টক দই কখন খেতে হয় বিস্তারিত তথ্য। তাই আজকের পোস্টটি অবশ্যই সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়ুন যেন এর সম্পর্কে বিশদ তথ্য পেতে পারেন। 
পেটের-মেদ-কমাতে-টক-দই-এর-ব্যবহারের-নিয়ম-সম্পর্কে-জানুন
টক দই চিনে না এমন মানুষ পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু এই টক দই দিয়ে যে সকল উপকার পাওয়া যায় তা সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানে না। তাই আজকের পোস্টে টক দই সম্পর্কে এবং পেটের মেদ কমাতে টক দই এর ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিশদভাবে সকল তথ্য আপনাদেরকে জানানোর চেষ্টা করব।

ভূমিকা

সাধারণতঃ আমরা দই বলতে মিষ্টি দই এর কথায় মনে করে থাকি। আর টক দই কে রান্নায় ব্যবহার করার একটি উপকরণ মাত্রই মনে করে থাকি। এই টক দইতে রয়েছে নানা উপকারী গুণ। আজকের পোস্টে আমরা জানব, টক দই এর পুষ্টিগুণ, ওজন কমাতে টক দই এর উপকারিতা, ওজন কমাতে টক দই কখন খেতে হয়, টক দই খাওয়ার উপযুক্ত সময়, পেটের মেদ কমাতে টক দই এবং টক দই এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

টক দই কি

এক প্রকারের দুগ্ধজাত খাদ্যই হচ্ছে টকদই যা মূলত দুধের মধ্যে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়ার গ্যাস থেকে তৈরি করা হয়। দইয়ের রং, স্বাদ এবং একটি উপযুক্ত গন্ধ তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে ল্যাকটিক এসিড মূলত এটি ল্যাক্টোজের গ্যাসের মাধ্যমে দুধের প্রোটিনের ওপর কাজ করে থাকে।

এটি একটি স্বাস্থ্যসম্মত সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে পুরো পৃথিবীতেই পরিচিতি লাভ করেছে। এটি শুধুমাত্র একটি সুস্বাদু খাবারই নয় বরং পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি খাদ্য যা অনেক অনেক বছর আগের থেকেই মানুষ তৈরি করে চলেছে এবং এই খাবারটি সকালে অথবা বিকালে অথবা নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোন সময় যেকোনো খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

টক দই এর পুষ্টিগুণ

টক দই এর সাথে কমবেশি আমরা সবাই পরিচিত। মূলত এটি অনেক বেশি পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং একটি উপকারী ডায়েট হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন যদি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার দিয়ে দিনের শুরুটা করা যায় তাহলে এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী সাব্যস্ত হয় এবং এই স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের মধ্যে রাখা যেতে পারে টক দই যা স্বাদের পাশাপাশি শরীরে পুষ্টিও যোগাতে সাহায্য করবে।

যেহেতু এটি একটি দুগ্ধজাত খাবার এবং দুধের মতই সমানপুষ্টিগুণ সম্পন্ন তাই চিকিৎসকগণ প্রায় সব সময় টক দই খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যদিও বা কিছু কিছু চিকিৎসকদের মতে, টক দই দুধের তুলনায় বেশি পুষ্টিকর। অর্থাৎ পুষ্টি গুণের দিক থেকে এটিকে দুধের তুলনাতে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়ে থাকে। সাথেই পেটের মেদ কমাতে টক দই এর ব্যবহারও বেশি দেখা যায়। তাহলে চলুন এবার জেনে নেয়া যাক এতে কি কি পুষ্টিগুণ রয়েছে। নিম্নে টক দই এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে উল্লেখ করা হলো।

  • ক্যালসিয়াম
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • ভিটামিন বি ৬
  • ভিটামিন ১২
  • প্রোটিন
  • ফসফরাস
  • পটাশিয়াম
  • এবং রাইবোফ্ল্যাভিন।

টক দই এর উপকারিতা

এটি একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উন্নত মানের খাদ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এতে থাকা বিভিন্ন রকমের পুষ্টি আমাদের শরীরের জন্য নিয়ে আসতে পারে অনেক রকমের সুফল। তবে এই সুফল পেতে হলে একজন ব্যক্তির অবশ্যই সারাদিনে ৩০০ থেকে ৫০০ গ্রাম দই খাওয়া উচিত। তাহলে চলুন বহু গুণসম্পন্ন এই টক দই আমাদের শরীরের জন্য কি কি উপকারিতা ডেকে আনতে পারে তা জেনে নেই। টক দই এর উপকারিতা নিম্নরূপ।

  • ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে এবং পেটের মেদ কমাতে টক দই অনেক বেশি সাহায্য করে। টক দই খেলে অতিরিক্ত খাবার ইচ্ছেটা থাকে না যার কারণে ওজন কমানো অনেক সহজ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছে না থাকার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় এতে থাকা প্রোটিনকে। তবে মনে রাখতে হবে ওজন কমাতে টক দই কখন খেতে হয় এবং সঠিক পরিমাণ জানা খুব বেশি প্রয়োজন যেন এর থেকে লাভজনক একটি পরিনাম আসে।
  • নিয়মিত টক দই খেলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। তাছাড়া পরিবারে যদি কারো কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ এর ইতিহাস থাকে তাহলে অবশ্যই বাধ্যতামূলকভাবে টক দই খেতে হবে।
  • এটি হাড় গঠণে সহায়তা করে হাড়কে মজবুত করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিনের সকালের নাস্তায় অন্ততঃপক্ষে এক কাপ টক দই খেলে এর থেকে প্রায় ২৭৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম পাওয়া যেতে পারে। যা হাড় গঠণে সাহায্য করে থাকে।
  • টক দই যে শুধুমাত্র শরীরের ভেতরের অংশে নিজের পুষ্টিগুণ বিস্তার করে রোগ প্রতিরোধ করে তা কিন্তু নয়। এটি চুলের যত্নে এবং ত্বকের যত্নেও অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • নিয়মিত টক দই খেলে পেটের সমস্যা থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব হয়। পেট ফোলা অথবা ডায়রিয়ার মত সমস্যা থেকেও টক দই খেলে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
  • শরীরের সৃষ্টিকারী রোগ জীবাণুর সাথে লড়াই করে শরীরকে সুস্থ রাখতে বা রোগ মুক্ত রাখতে সাহায্য করে। সাথে টক দইয়ে থাকা ম্যাগনেসিয়াম জিংক এবং সেলেনিয়ামের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক গুণ বেড়ে যায়।
  • যে সকল ব্যক্তিদের মুখে আলসার রয়েছে তারা চাইলে এই টক দই ব্যবহার করে মুখের ঘা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। এর জন্য সমপরিমাণ টক দই এবং মধু সমপরিমাণে মিশ্রিত করে সারাদিনে দুবার অথবা তিনবার মুখের ভিতরে লাগাতে পারেন।
  • টক দই মূলত প্রোবায়োটিক এর কাজ করে শরীরের হজম প্রক্রিয়া এবং অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
  • রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে।

ওজন কমাতে টক দই কখন খেতে হয়

মূলত টক দই খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় বেঁধে দেয়া নেই। তারপরও যদি কিছু নিয়ম মেনে এই পুষ্টিকর খাবারটি খাওয়া যায় তবে আশা করি অবশ্যই এর সুফল পাওয়া যাবে। নিম্নে টক দই খাওয়ার সঠিক সময় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

  • পুষ্টিবিদদের মতে, বাড়িতে তৈরি করার টক দই যদি প্রতিদিন নিয়ম অনুযায়ী কম করে এক বাটি খাওয়া উচিত। এতে করে আমাদের শারীরিক সমস্যাগুলি সমূহ সারা জীবনের জন্য আমাদের কাছ থেকে দূরে রাখা সম্ভব।
  • তাছাড়াও দুপুরের খাবারের পর টক দই খাওয়া প্রতিটি ব্যক্তির শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
  • চাইলে রাতেও টক দই খাওয়া যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে, ঠান্ডা জনিত সমস্যা থাকলে অবশ্যই এটিকে রাতে খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
  • তাছাড়াও ওজন কমাতে এবং পেটের মেদ কমাতে টক দই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেলে সবচাইতে বেশি উপকার পাওয়া যায় বলে জানান একদল গবেষকরা।
  • কিছু কিছু গুরুপদ খাদ্য রয়েছে, যেমন- মাছ ও মাংস এ সকল খাদ্যের সাথে টক দই খাওয়া একেবারেই উচিত না। কারণ আয়ুর্বেদ অনুযায়ী জানা যায় এতে হজমের সমস্যা হয়ে শরীরে টক্সিন তৈরি হয় যা পরবর্তীতে বিভিন্ন রকম রোগের নির্মাণ করে থাকে।

উপরোক্ত আলোচনার নিমিত্তে আমরা জানলাম ওজন কমাতে টক দই কখন খেতে হয় কিন্তু কতটুকু খেতে হবে সেই পরিমাণটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।

টক দই খাওয়ার উপায়

সাধারণত টক দই অনেকভাবেই খাওয়া যেতে পারে। যেহেতু এটি একটি দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য সেহেতু এর খাওয়ার ধরণে ভিন্নতা হওয়া স্বাভাবিক। নিম্নে টক দই খাওয়ার উপায় সমূহ সম্পর্কে কিছু ধরণ উল্লেখ করা হলো।

চিয়া বীজ দিয়ে দইঃ চিয়া বীজ নিজের মধ্যেই একটি অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি বীজ জাতীয় খাদ্য। এটি ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও অনেক বেশি উপকারী একটি খাদ্য। টক দই এবং চিয়া বীজকে একত্রে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে এরমধ্যে বিভিন্ন রকম ফল দুধ এবং দই দিয়ে স্মুদি তৈরি করে খাওয়া যায়।

সবজির রায়তাঃ বেশি করে টক দই এর সাথে টমেটো এবং পেঁয়াজ কুচি করে এতে কাঁচামরিচের কুচি, জিরা গুড়া এবং চাট মসলা একসাথে মিশিয়ে দিলেই হয়ে গেল সবজির রাইতা প্রস্তুত। ওজন কমানোর জন্য এভাবে সবজির রাইতা তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।

বাদামের সঙ্গে দইঃ টক দইয়ের সঙ্গে আখরোট খেজুর এবং অন্যান্য ড্রাই ফ্রুটস একত্রিত করে খাওয়া যায় যা ওজন কমানোতে অনেক কার্যকরী।

ওটস এর সঙ্গে টক দইঃ ওজন কমানোর জন্য ওটস এর ভূমিকা সম্পর্কে প্রায় সবাই জানে। তাই ওজন কমানোর জন্য টক দই এবং ওটস একসঙ্গে করে খাওয়া যেতে পারে।

ফলের সাথে টক দইঃ ওজন কমানোর সঙ্গেই স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও ফল অনেক উপকারী। যার কারণে টক দইয়ের গুণাবলী এবং ফলের গুণাবলী একত্রিত হয়ে আরো বেশি পুষ্টি তৈরি করে। তবে ওজন কমানোর জন্য পেয়ারা, আপেল, কলা, কিউই, ডালিম এবং তরমুজ এর সঙ্গে টক দই কি মিশ্রিত করে খাওয়া যায়।

পেটের মেদ কমাতে টক দই

টক দই ওজন কমানোর দিক থেকে একটি অন্যতম খাদ্য। তাছাড়া এটিতে থাকা কম ক্যালরির মাত্রা উচ্চ প্রোটিন সামগ্রী এবং প্রবায়োটিক পেটের চর্বি কমাতে সহায়তা করে থাকে। সাথেই পেটের চর্বি কমাতে গ্র্যানলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যার কারণে পেটের চর্বি কমে যায়। তাই গ্রানলা এবং টক দই একত্রে মিশ্রণ তৈরি করে খেলে এটি পেটের চর্বি বা মেদ কমাতে সহায়তা করে।

টক দই এর ক্ষতিকর দিক

টক দই এর তেমন কোন ক্ষতিকর দিক না থাকলেও অতিরিক্ত কোন কিছুই খাওয়া শরীরের জন্য কোন না কোন দিক থেকে ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই প্রতিটি খাদ্য অবশ্যই পরিমাণ অনুযায়ী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। নিম্নে এটি খাওয়ার কিছু ক্ষতির কারণ উল্লেখ করা হলো।

  • টক দই যেকোনো সময় খেলে তেমন কোন সমস্যা হয় না। তবে ঠান্ডা জনিত সমস্যা থেকে থাকলে রাতের বেলা টক দই খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। এবং যদি ঠান্ডা জনিত কোন সমস্যা না থাকে তাহলে রাতে খেলেও সমস্যা হয় না বলে ধারণা করা হয়।
  • অনেকেই হয়তো জানেন না টক দইয়ের সাথে কখনোই চিনি মিশ্রিত করে বা মিশিয়ে খাওয়া খাওয়া উচিত না।
  • তাছাড়া কিছু কিছু রোগী আছেন যাদের এই টক দই খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া উচিত। সাধারণত যে সকল রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শর প্রয়োজন হয় তা হলো- হাঁপানি এসিডিটির সমস্যা লিউকোরিয়া, বাত এবং কিডনি।
  • শরীরে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম থেকে থাকে সেই ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টক দই খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের সৃষ্টি হতে পারে। যা আমাদের শরীরের জন্য কোন দিক থেকেই স্বাস্থ্যকর নয় বা ভালো নয়। কারণ অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম আমাদের শরীরে বিভিন্ন রকম জটিলতা তৈরি করতে পারে যা থেকে রোগের রোগের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পেতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

আশা করি আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আপনারা পেটের মেদ কমাতে টক দই এর ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে পেরেছেন। উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন বা মতামত থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন এবং আমাদের পোস্টটি শেয়ারের মাধ্যমে অন্য সবাইকেও টক দই এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার সুযোগ করে দিন।
ধন্যবাদ

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url