লাউ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন

লাউ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন আমার এই পোস্টে। আমি আপনাদেরকে আগাম লাউ চাষের পদ্ধতি ও সারা বছরই কিভাবে লাউ চাষ করবেন এবং লাউ চাষ করে লাভবান হবেন তার বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করবো।
লাউ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানুন
লাউ এমন একটি সবজি যা সবজি জগতের মধ্যে উন্নতম। এতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে যা অনেকেই জানে না। এমনকি লাউয়ের কচি ডগাও শাক হিসেবে আমরা খেতে পারি এবং লাউচ চাষ করে অনেক টাকা আয়ও করা যায়। তাই লাউ চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

ভূমিকাঃ

লাউ চাষের বিস্তারিত তথ্য, লাউয়ের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং লাউয়ের মধ্যে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আরো জানুন লাউ চাষ করে কিভাবে প্রচুর অর্থ আয় করা যায় এবং এতে অনেক ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে যার ফলে দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত রাখে।

লাউ চাষ করার পূর্বে নিম্নোক্ত তথ্য গুলোর প্রতি মনোযোগ দিবেনঃ

  • আপনার জমি কি নিচু না উচু?
  • লাউ চাষের জন্য আপনার কতটুকু অভিজ্ঞতা রয়েছে?
  • আপনার এলাকায় আবহাওয়া কেমন?
  • লাউ চাষের জন্য আপনার এলাকা উপযোগী কিনা?
  • বিক্রয় ব্যবস্থা কেমন?
  • আপনি লাউ চাষ করে লাভবান হবেন কিনা?
  • কোন লাউয়ের চাহিদা বেশী গোল না কি লম্বা?
  • আপনার এলাকায় লাউ চাষের জন্য অভিজ্ঞ কোন চাষি আছে কিনা?
  • লাউ চাষের জন্য ভালো পরামর্শ কারো কাছ থেকে নিতে পারবেন কিনা?
উপরোক্ত তথ্যগুলোর মধ্যে কোন টা পজেটিভ আর কোনটা নেগেটিভ তা আপনি যাচাই করুন। যদি সবগুলি পজেটিভ হয় তাহলে আপনি লাউ চাষ শুরু করতে পারেন। 

মাটি নির্বাচনঃ

লাউ সব মাটিতেই চাষ হয়ে থাকে। তবে মনে রাখবেন যে মাটিতে পানি ধরে রাখার মত সেই মাটিতেই লাউ চাষের জন্য নির্বাচন করবেন। কেননা লাউ তৃষ্ণার্ত ও ক্ষুধার্ত উদ্ভিদ। তাই এঁটেল মাটি হলে ভালো এবং চাষের জমি উঁচু হতে হবে। খেয়াল রাখবেন লাউ গাছের গোড়ায় কখনও যেন পানি না জমে এরকম জমি নির্বাচন করবেন। 

জমি প্রস্তুতকরণঃ

যে জমিতে লাউ চাষ করবো সেই জমিতে  ৩/৪ টা গভীর করে চাষ করতে হবে। কেননা লাউয়ের শিকড় ২ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে থাকে। সে জন্য  শিকড় যেন অনেক দূর যেতে পারে তার জন্য গভীর ভাবে চাষ করতে হবে। মনে রাখবেন চাষ করার সময় গোবর বা জৈব সার বেশী পরিমাণে ছিটিয়ে দিবেন ফলে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে এবং লাউয়ের ফলন বৃদ্ধি পাবে।

লাউ চাষের জন্য উত্তম সময়ঃ

লাউ মূলতঃ শীলকালীন সবজী। তবে শীতকালীন সময়ের সবজী হলেও এর চাষাবাদ সারাবছরই করা যায়। যদি শীতকালীন চাষাবাদ করি তাহলে আগাম েচাষাবাদের জন্য ভাদ্র, আশ্বিন, ও কার্তিক মাসে জমিতে বীজ বপন করতে হবে। আর যদি গ্রীষ্মকালীন সময়ে চাষাবাদ করি তাহলে জমিতে বীজ বপন করতে হবে মাঘ-ফাল্গুন মাসে। 

লাউয়ের জাত নির্বাচনঃ

বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন রকমের লাউয়ের বীজ পাওয়া যায়। যেহেতু বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করবো, সেহেতু হাইব্রিড জাতের লাউয়ের বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ করাই ভালো। তাহলে আমরা লাউ চাষ করে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হবো। আমাদের দেশীয় হাইব্রিড বীজ পাওয়া যায় এবং ইন্ডিয়ার কিছু কোম্পানীরও হাইব্রিড বীজ পাওয়া যায়। আপনি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে বীজ সংগ্রহ করুন। 

মাদা তৈরী ও সার প্রয়োগঃ

মাদাপ্রতি ২০০ গ্রাম টিএসপি+১০০ গ্রাম জিপসাম+জিংক, বোরন, ম্যাগনেসিয়াম, কার্বোফুরান ১৫-২০ গ্রাম হারে+৫০ গ্রাম এমওপি এবং বেশী বেশী  গোবর ও জৈব সার দিয়ে মাদা তৈরী করবেন। এতে করে লাউয়ের ফলন বেশী পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। 

চারা রোপন ও পরিচর্যাঃ

প্রতি মাদায় ২-৩টি চারা রোপন অথবা ৩/৪ টি বীজ বপন করলেই হবে। পরবর্তীতে ২/১টি গাছ রেখে বাকী গুলো উঠালেই ভালো। মাদা শুকনো থাকলে পানি দিতে হবে আর রোপনকৃত চারা কিছু দিয়ে ঢেকে রৌদ্র থেকে আড়াল রাখলে চারার কোন ক্ষতি হবে না। বিটল পোকা এসে পাতা খেয়ে ফেলতে পারে তার জন্য ছাই, কেরোসিন+পানি অথবা সাইপারমেথ্রিন স্প্রে করে দিতে হবে, প্রয়োজনে ছোট নেট দিয়ে চারা ঢেকে রাখতে হবে। ১৫ দিন পর ২ কেজি ইউরিয়া ও দেড় কেজি এমওপি সার মিক্স করে প্রতি মাদায় ৩/৪ মুঠো করে গোড়া থেকে ৫/৬ দুরে দিয়ে নিড়ানি করে মাটির সঙ্গে মিশে দিবেন। 

লাউ গাছের মাচা তৈরীঃ

গাছের লতা বৃদ্ধি পাইলে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে উপর দিকে উঠানোর ব্যবস্থা করে দিবেন। আবার মনে রাখবেন, লাউ গাছ অনেক ভাড়ি হয়, তাই বাঁশ কেটে খুটি করে মাচা তৈরী করে দিবেন। তাহলে লতাগুলো ভেঙ্গে পড়বেনা বরং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। এতে করে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। 

পোকামাকড়ঃ

লাউ গাছ ফুল আসার সময় অনেক ধরণের পোকামাকড় দেখা দেয়, এতে করে লাউ গাছের ফুল নষ্ট করে ফেলে। তাই সপ্তাহে ২/১ বার ইমিডাক্লোরপ্রিস স্প্রে করতে হবে। আবার অনেক সময় লেদাপোকাড় আক্রমন হয়ে থাকে তাই মাঝে মাঝে এমামেকটিন বেনজয়েড স্প্রে করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় যে, কচি লাউ ঝড়ে পরে, তখন আপনারা ফেরমন বা সাইপারমেথ্রিন সপ্তাহে ২/১ বার স্প্রে করবেন। আরেকটা গুরুত্বপুর্ণ রোগ হচ্ছে গাছের পাতা কিছুটা কুকড়ে ও হলুদ হয়ে যায়, ফলের রং ও আকৃতি নষ্ট হয় যায়। এ রোগের কোন প্রতিকার নাই। তাই আপনারা গাছ ও লতা কেটে বা উপড়ে মাটিতে পুঁতে রাখবেন।

রোগ বালাইঃ

অনেক সময় লাউ গাছে ডাওনি মিলডিউ বা পাউডারী মিলডিউ রোগ দেখা যায়। তখন আপনারা কার্বপন্ডাজিম বা ক্যবরিওটপ অথবা অন্যান্য ছত্রানাসক ব্যবহ করবেন এবং ছত্রানাশক স্প্রে করলে পচনজনিত রোগ ভালো হয় এবং ফলন বৃদ্ধি পায়। লাউয়ের রং খুব সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়। যদি কখনও গাছের শেকড় নেমাটোডা বা কৃমির আক্রমণে শেকড়ে গিটের সৃষ্টি হয় তাহলে গোড়ায় সামান্য কার্বোফুরান দিয়ে দিবেন। তাহলেই ভালো হয়ে যাবে। 

ফলনঃ

কচি অবস্থায়ই লাউ সংগ্রহ করতে হয় কেননা পরাগায়নের ১৫ দিনের পরই লাউ খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে থাকে। লাউ খাওয়ার উপযুক্ত হলেই সঙ্গে সঙ্গে কেটে মাচা পাতলা করে দিতে হবে। এতে ফলন বৃদ্ধি পায়। 

লেখক এর মন্তব্য

প্রিয় গ্রাহক আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনি উপকৃত হয়েছেন। এমন আরো নতুন পোস্ট পেতে হলে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করতে হবে। এতক্ষণ ধরে আমাদের পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার কোন মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url