বইমেলা অনুচ্ছেদ সম্পর্কে জেনে নিন, ক্লাস সিক্স থেকে টুয়েলভ পর্যন্ত

আজকে আমি আলোচনা করব বইমেলা অনুচ্ছেদ সম্পর্কে অর্থাৎ ওমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুচ্ছেদ সম্পর্কে। এই অনুচ্ছেদটি ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত হবে। এই অনুচ্ছেদটি একটু লম্বা হবে। এই অনুচ্ছেদ থেকে আপনারা পড়ে ছোট করে লিখতে পারবে।
বইমেলা অনুচ্ছেদ
প্রিয় বন্ধুরা আমি আপনাদের জন্য অনেক সহজ ও সাবলীল ভাষায় বইমেলা অনুচ্ছেদ লিখতে চেষ্টা করব। আশা করি অনুচ্ছেদটি আপনাদের ভালো লাগবে। যদি ভালো লাগে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন-ধন্যবাদ!

বইমেলা কি-ভূমিকা 

বইমেলা হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মেলা। বইমেলা হচ্ছে এমন একটি স্থান যেখানে বিভিন্ন ধরনের বই একসাথে পাওয়া যায়। বইমেলাতে লেখক এবং পাঠকের সমাগম হয় বইমেলাতে মিলন মেলাও বলা যেতে পারে। কারণ সেখানে বিভিন্ন স্থানের মানুষ একত্রিত হয় এবং লেখক ও পাঠকের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয় পরস্পরের সাথে দেখা হয় 

এবং সরাসরি কথা বলার সুযোগ হয়।প্রতিবছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে বাংলা একাডেমির বর্তমান হাউস প্রাঙ্গনে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সাল থেকে অমর একুশে গ্রন্থ মালাকে বাংলা একাডেমীর মুখোমুখি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণ করেছে বই মেলা হিসাবে। তবে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনেও বইমেলার আয়োজন করা হয়। 

অমর একুশে গ্রন্থমালা প্রাঙ্গণে মোদের গরব ভাস্কর্য অবস্থিত। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে বাংলা ভাষার জন্য যে সকল বীরেরা আত্মসর্গ করেন তাদের সেই স্মৃতিকে অম্লান রাখতে ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলার আয়োজন করা হয় আর এই বইমেলার নামকরণ করা হয়েছে" অমর একুশে গ্রন্থমালা"।

বইমেলা অনুচ্ছেদ/অমর একুশে গ্রন্থমালা অনুচ্ছেদ

বইমেলা হচ্ছে বইকে কেন্দ্র করে লেখক ও পাঠকের মধ্যে কথোপকথনের একটি নির্দিষ্ট জায়গা। যেখানে লেখক এবং পাঠক সরাসরি বই কেনাবেচার মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়। আমরা জীবনে অনেক লেখকের বই পড়েছি কিন্তু কোনো লেখকের সাথে কি দেখেছি। কিন্তু আমরা যদি বইমেলায় যায় তাহলে অনেক লেখককে স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হবে তাই তো বইমেলাতে লেখক ও পাঠকের মিলন মেলা ও বলা হয়। 

আনন্দঘন পরিবেশে বই কেনাবেচার একটা সুযোগই হচ্ছে বইমেলা। মেলাতে বইয়ের প্রকাশকগণ তাদের নতুন ও পুরাতন বই নিয়ে দোকান তৈরি করে এবং পাঠকেরা সেখান থেকে তাদের পছন্দের বইগুলো দেখে শুনে ক্রয় করতে পারেন। এটিই হচ্ছে বইমেলার সবচেয়ে বড় সুবিধা। এই বইমেলার ইতিহাস স্বাধীন বাংলাদেশের মতোই অনেক প্রাচীন। 

আরো পড়ুনঃ 

১৯৭২ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গনে এক বটতলায় এক টুকরো চটের উপর বসে কলকাতা থেকে ক্রয় করে আনা ৩২ টি বৈশাখে প্রথম বইমেলার পত্তন করেছিলেন। এই বইগুলো ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনার শিল্পের প্রথম অবদান। চিত্তরঞ্জন সাহা ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত করেছেন একাই বইমেলা পরিচালনা করেছেন। ১৯৭৬ সালে অনেক ব্যক্তি অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং 1978 সালে বাংলা একাডেমীর তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে সরাসরি বইমেলার সাথে সম্পৃক্ত করেন। 

১৯৭৯ সালে এই মেলার সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশনীর সমিতি এবং এই সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চিত্ত রঞ্জন শাহা। কাজে মনজুরে মাওলা হাজার ১৯৮৩ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম বইমেলার পরিবর্তে অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন এবং ১৯৮৪ সালে সারা বিশ্বে বর্তমানে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সূচনা হয়। ২০১৪ সাল থেকে বইমেলা বাংলা একাডেমির চত্বরে সংকুলার না হওয়ায় শহরা ওয়াদ্দি উদ্যানে বইমেলা সম্প্রসারণ করা হয়। 

২০১৪ সালে ২৯৯ জন প্রকাশক বইমেলায় অংশগ্রহণ করে কিন্তু তাদের মধ্যে ২৩২ জনকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিন একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত  বইমেলা বা অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হত কিন্তু বর্তমানে এই মেলা পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবছর এই বইমেলাতে উদ্বোধন করেন। 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সাংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বইমেলার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। প্রকাশকদের স্টল গুলো, প্রকাশক ও বিক্রেতার এলাকা, শিশু কর্ণার, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান  ,ম্যাগাজিন বিভিন্ন এলাকায় ভাগ করা আছে। এছাড়াও মেলা চত্বরে ভাষা শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউল সহ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও আরো অনেক প্রমুখ ব্যক্তিত্বের নামে ভাগ করা আছে । 

আরো পড়ুনঃ 

এই মেলায় দেশের খ্যাতনামা প্রকাশনী ও বই বিক্রেতা ছাড়াও বিদেশ থেকে যেমন ভারত , রাশিয়া জাপান প্রভৃতি দেশ থেকে ও নানা প্রকাশক তাদের বই নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। মেলাতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে লিটল ম্যাগাজিন। মেলার মিডিয়া সেন্টারে ইন্টারনেট ও ফ্যাক্স ব্যবহার সুবিধা রয়েছে এবং মেলার পরিবেশপলিথিন ও ধূমপান মুক্ত । বই মেলাতে প্রায় ২০ থেকে ২৫ পার্সেন্ট ছাড়ে বই ক্রয় করা যায়। 

এছাড়াও বইমেলাতে শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ ও তথ্যের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ টাক্সফোরসের ব্যবস্থা আছে এবং বইয়ের কপিরাইট বা মেধাশক্ত আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা তা সনাক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে এবং যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। মেলায় প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়ে থাকে এবং মেলায় প্রবেশের জন্য কোন ফি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না । নীলা চলাকালীন সময়ে প্রতিদিন মেলাতে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা সভা কবিতা পাঠের আসর বসে 

এবং প্রতি শ্রদ্ধায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় যে সকল লেখকেরা সেখানে উপস্থিত থাকেন তাদের বইয়ের ব্যাপারে দর্শক ও পাঠকের সাথে মতবিনিময় করা হয়। ২০১০ সাল থেকে এই মেলার প্রবর্তক জনাব চিত্তরঞ্জন সাহার নামে একটি পদপ্রবর্তন করা হয় । বইয়ের গুণগত মানের উপর বিচার করে এবং যে লেখকের বই বেশি বিক্রি হয় তাকে এই পুরস্কার দেওয়া। হয় ২০২৩ সালের মেলায় 47 কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে ৩৭৩০ টি বই

শেষ কথা: বইমেলা অনুচ্ছেদ সম্পর্কে

প্রিয় বন্ধুরা আশা করি বইমেলা অনুচ্ছেদ সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন। বইমেলা মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে বিশেষ করে শিশু কিশোরেরা , বাবা মা সবাই মিলে একসাথে বইমেলায় উপস্থিত হয়ে পছন্দের বইগুলো ক্রয় করতে পারে এবং জ্ঞান অর্জন করতে পারে। 

আরো পড়ুনঃ 

নতুন নতুন বইয়ের সাথে সকলে পরিচিত হয় এবং লেখক ও পাঠকের মধ্যে ভাব বিনিময় হয়। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যারা বইমেলায় উপস্থিত হওয়ার জন্য নতুন নতুন বই প্রকাশ করতে চান এর মাধ্যমে তারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করতে চান। কারণ সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য সেরা ক্রেতাকেও দেওয়া হয় পালন সরকার পুরস্কার 

এবং যে লেখকের বা প্রকাশকের বই বেশি বিক্রি হবে এবং যার বউয়ের গুণগত মান বেশি ভালো তাকে দেওয়া হবে চিত্তরঞ্জন সাহা পুরস্কার। প্রিয় বন্ধুরা আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন। এই অনুচ্ছেদটি যদি আপনাদের ভালো লাগে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন আর সকলের সাথে শেয়ার করবেন। সকলেই ভাল থাকবেন। আজকের মত এখানেই শেষ করছি-আল্লাহ হাফেজ!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url