গাভী পালনে বাসস্থান পরিচর্যা ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানুন

গাভী পালনে বাসস্থান পরিচর্যা ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অনেকেই জানেন না। এতে করে গাভী পালনে অনেকেই লোকসান করে থাকেন। আপনি হয়তো গাভী পালনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিন্তু কিভাবে শুরু করবেন তা বুঝতে পারছেন না। আমি এই পোস্টে নতুন গাভী পালনকারীদের জন্য অনেক তথ্য এই পোস্টে আলোকপাত করেছি।
গাভী পালনে বাসস্থান পরিচর্যা ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানুন
গাভী পালনে বাসস্থান পরিচর্যা ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানার আগে আপনাকে স্থির করতে হবে কি ধরণের গাভী পালন করবেন। কেননা আজকের বিশ্বে যে খানে কৃষির বিপ্লব ঘটেছে সেখানে দুগদ্ধজাত পশুর মাধ্যমেই হয়েছে। তাই আমার এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন তাহলে সব কিছুই জানতে পারবেন।

ভূমিকা 

গৃহপালিত পশু হিসেবে আমরা গাভী পালন করে থাকি। গাভী থেকে আমার বাচ্চা ও দুধ পেয়ে থাকি। গাভী পালনের জন্য সঠিক বাসস্থান, গাভীর পরিচর্যা, গাভীর চিকিৎসা, গাভীর সুষম খাদ্য সকল বিষয় নিয়ে নিম্নে আলোকপতা করা হয়েছে। 

গাভী পালনের সারসংক্ষেপ

বর্তমান সময়ে বিশ্বে যেখানেই কৃষি বিপ্লব ঘটেছে সেখানেই গাভীর দুধ উৎপাদন ও ব্যবহারে শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশেও কিছুটা শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে গাভী পালনের মাধ্যমে। বর্তমানে আমাদের দেশে পাঁচ ধরণের উন্নত জাতের গাভী পালন লক্ষ্য করা যায় যেমন- হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান, জার্সি, শাহিওয়ালা, সিন্ধি, রেড চিটাগাং ইত্যাদি। 

এই ধরণের জাতের গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা ভালো। তবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এই জাতের গাভীগুলো লালন পালন ও প্রজনন করাতে পারলে উৎপাদন বা প্রজনন ক্ষমতা ও দুধ আরও বৃদ্ধি পাবে।

গাভীর বাসস্থান 

গাভী পালন করার পূর্বে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, কিভাবে গাভীর বাসস্থান উঁচু ও শুকনো জায়গায় নির্মাণ করা যায়। গাভীর বাসস্থানকে গোশালা বলে আবার অনেক জায়গায় গোয়াল ঘরও বলে থাকে। তবে আমাদের দেশে সবাই গোয়াল ঘরে রেখেই গাভী পালন করে। যদি আমরা গোশালা তৈরী করে গাভী পালন করি তাহলে গাভী পালনের জন্য উপকারী বাসস্থান হবে। 

কেননা গোশালা একটু উঁচু ও শুকনো জায়গা হয়ে থাকে। যার ফলে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এবং বৃষ্টির পানি, তাপ, আর্দ্র তা প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গোশালা গাভীর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল এবং অবশ্যই একটু বড় আকারের যেন হয়। গোশালায় খাবার পাত্র ও আলাদা পানি পানের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

গাভীর পরিচর্যা 

গাভী পালনের ক্ষেত্রে প্রথমদিন থেকেই গাভীর পরিচর্যার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে করে গাভী অধিক কর্মক্ষম থাকে। গাভীর গর্ভকালীণ, প্রসবকালীণ ও দুগ্ধদোহন কালে পরিচর্যার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। গাভীর শিং, খুর কাটা ও নিয়মিত গোসল করা ইত্যাদির দিকে নজর রাখতে হবে। গর্ভকালীণ সময় গাভীর প্রতি সুদুষ্টি রাখতে হবে। এই সময়ে সুষম খাবার, স্বাস্থ্য ঠিক রাখা, নিয়মিত চিকিৎসা করা। 

এসবের মূল্য কারণই হচ্ছে গাভীর পেটের বাচ্চাকে সুস্থ্য ও গাভীকে সবল রাখা। যেন কোন ভাবেই পেটের বাচ্চার কোন সমস্যা না হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রসবের লক্ষণ দেখা দিলেই শান্ত পরিবেশে রেখে পর্যবেক্ষণ করতেহবে। প্রসব অগ্রসর না হলে ভেটেরিনারী ডাক্তারে শরণাপন্ন হতে হবে। গাভী প্রসব করার বাচ্চা বেশী বেশী শাল দুধ খাওয়াতে হবে। 

কারণ এই শাল দুধ খাওয়ালে বাচ্চার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় এবং সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠে। দুধ দোহনের সময় কোনভাবেই গাভীকে উত্তেজিত করা যাবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুধ দোহন শেষ করতে হবে। গাভীর পরিচর্যার আরও একটি উন্নতম লক্ষ্য হচ্ছে- গাভীকে মশা-মাছি, কীটপতঙ্গ ও পোকামাকড় থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা।

গাভীর খাদ্য

গাভীর খাদ্য তিন ভাগে ভাগ করা যায়- যেমন- আঁশযুক্ত, দানাদার ও ফিউ অ্যাডিটিভস খাদ্য। আঁশযুক্ত খাদ্যের মধ্যে খড়, কাঁচাঘাস, লতাপাতা, সাইলেজ ইত্যাদি প্রধান খাদ্য। দানাদার খাদ্যে মধ্যে রয়েছে শস্যদানা, গমের ভূষি, চালের কুঁড়া, খৈল ইত্যাদি প্রধান। তাছাড়া খনিজ ও ভিটামিনের মধ্যে হাঁড়ের গুড়া, বিভিন্ন ভিটামিন-খনিজ প্রিমিক্স পদার্থ রয়েছে। 

এই খাবারগুলি গাভীর শারীরিক বৃদ্ধি ও কোষাকলার বিকাশ ও ক্ষয়পূরণ তাপ ও শক্তি উৎপাদন, দুধ, মাংস ও প্রজননের সক্ষমতা অর্জন, গর্ভাবস্থায় বাচ্চার বিকাশ সাধন প্রভৃতি কাজের জন্য উপরোক্ত খাদ্যের প্রয়োজন।

গাভীর স্বাস্থ্যসম্মত লালন-পালন ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা

গাভীর স্বাস্থ্যসম্মত লালন-পালন বলতে স্বাস্থ্যবিধিকে বুঝায় যা নিম্নে আলোকপাত করা হলো-
  • আলো-বাতাস প্রবাহিত হতে পারে এমন জায়গায় বাসস্থান করা।
  • খাদ্য ও পানির পাত্র পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
  • ময়লাযুক্ত, পঁচা ও বাসি খাদ্য-পানি পরিহার করা।
  • সবসময় তরতাজা খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে।
  • গাভীর প্রজনন ও প্রসবের সময় নির্জীবাণু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।
  • সুস্থ্য ও ‍অসুস্থ্য গাভী পৃথক রাখতে হবে এবং নিয়মিত কৃমিনাশক ব্যবহার করতে হবে।
  • নিয়মিত সব ধরণের টিকা ব্যবহার করা ইত্যাদি।

গাভীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও রোগ চিকিৎসা

গাভীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে অসুস্থ গাভী শনাক্ত করা, গাভীর বিভিন্ন রোগ বালাই প্রতিরোধে সময়মতো টিকা দেওয়া, গাভী তড়কা, বাদলা, ক্ষুরা রোগ, রিন্ডারপেস্ট, ম্যাস্টাইটিস, পরজীবী, গলাফোলা ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হতে পারে সেই দিকে লক্ষ্য রাখা এবং গাভীর যে কোন রোগ দেখা দিলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

শেষ কথা

বর্তমান সময়ে গাভী পালন করে অনেক খামারী লাভবান হয়েছেন এবং হচ্ছেন। তাই বলবো যদি গাভী পালন করে নিজেকে আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী করতে চান তাহলে খামার করার পূর্বে গাভীর বাসস্থান, পরিচর্যা, খাদ্য ও চিকিৎসা সম্পর্কে এবং গাভী পালনে আরো অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে গাভী পালন শুরু করবেন। তাহলে আপনি কখনও গাভী পালন করে কিংবা খামার করে লোকসান করবেন না। 

লেখকের মন্তব্য

গাভী পালনের জন্য আমার এই সাইটটি  ভিজিট করবেন এবং নিয়মিত ভিজিট করলে গাভী পালনের আরো অনেক আপডেট তথ্য পাবেন।

ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url