টমেটো চাষ পদ্ধতি ও টমেটো চাষে সফলতার সহজ উপায়
টমেটো চাষ পদ্ধতি ও টমেটো চাষে সফলতার সহজ উপায় আমি আমার পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আপনারা যদি এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে জানতে পারবেন যে, টমেটো চাষ পদ্ধতি ও টমেটো চাষে সফলতার সহজ উপায়।
টমেটো চাষ জমিতে ও টবে করা যায়। এই কারণে টমেটো চাষ পদ্ধতি ও টমেটো চাষে সফলতার সহজ উপায় সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। কেননা টমেটো পুষ্টিকর সবজি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর, তাই সবাই এবং সবজায়গাতেই চাষ করা সম্ভব।
ভূমিকা
আমরা যে জায়গায় টমেটো চাষ করবো সেটা জমি হউক কিংবা টবে হউক কিছুটা রৌদ পড়তে হবে। টমেটো লাভজনক ফসল। অল্প দিনেই ফসল পাওয়া যায়। টমেটো কাঁচা-পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। টমেটোর সবজি রান্না করেও খাওয়া যায়, আবার ভর্ত্তা করেও খাওয়া যায়। যারা বাগান করতে পছন্দ করেন বা যারা শৌখিন তারা টমেটো চাষ করতে ভালোবাসেন।
টমেটো চাষে মাটি তৈরী
টমেটো চাষের জন্য মাটি বিভিন্ন ভাবে তৈরী করা যায়। যেমন- ৪ থেকে ৫ বার চাষ ও মই দিতে হবে, মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে এবং জৈব সার, গোবর, শিং কুচি, হাড়ের গুঁড়া, খৈল ইত্যাদি দিয়ে গাছ লাগানোর জায়গায় মাটির সঙ্গে মিশাতে হবে। গ্রীষ্মকালে ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার উঁচু ও ২৩০ সেন্টিমিটার চওড়া থালি তৈরী করতে হবে।
মনে রাখবেন থালি তৈরী করার সময় টমেটোর গাছে পরবর্তীতে সেচ দেওয়ার জন্য জায়গা রাখতে হবে এবং অবশ্যই মাটি তৈরীর সময় ট্রাইকোডারমা বা অন্য কোন ছত্রাকনাশক ঔষধ দিয়ে মাটি ভালো ভাবে সংমিশ্রণ করে কিছুদিন যাওয়ার পর গাছ লাগাতে হবে। তাতে গাছ তৈরীতে কোন প্রকার সমস্যা হয় না।
মাটিতে বেশী পরিমাণ পানি দেওয়া যাবে না কিংবা সেতসেঁতে জায়গায় টমেটো চাষ করা যাবে না। কেননা টমেটোর গাছ খুব নরম তাই সেতসেঁতে মাটি থাকলে গাছ ঢলে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। এমন জায়গায় টমেটো গাছ লাগাতে হবে যেখানে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা যেন রৌদ থাকে। সবচেয়ে ফলন ভালো শীতকালে।
তবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে সারা বছরই টমেটো চাষ করা যায়। যেহেতু টমেটো একটি সবজি জাতীয় ফসল তাই এটা সব সময় চাষ করা যায় এবং সব সময়ই খাওয়া যায়। তরকারি রান্না করে, ভর্ত্তা করে এবং সালাদ করেও টমেটো খাওয়া যায়। টমেটোর অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে।
টমেটোর চারা রোপণ
টমেটোর চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হচ্ছে চারার বয়স যখন ৩০ থেকে ৩৫ দিন অথবা ৫ থেকে ৬টি পাতা তখন জমিতে রোপণ করবেন। তাতে গাছও ভালো হবে এবং পরবর্তীতে ফলন ভালো পাওয়া যাবে। আর যদি চারার বয়স কম কিংবা পাতা ১টি/২টি গজিয়েছে, তখন চারা রোপন করলে চারা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে প্রায় ৫০ এর উপরে টমেটোর জাত রয়েছে এবং বিভিন্ন এলাকায় চাষও করা হচ্ছে এবং কিছু হাইব্রিড জাতের টমেটোও আছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ও পরমাণু ইনস্টিটিউট বেশ কিছু জাত উদ্ভাবন করে। এই জাতের গাছগুলো সারাবছরই ফলন দেয়। যদি আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করি তাহলে অনেক লাভবান হবো টমেটো চাষ করে।
বেশী ফলন পাওয়ার জন্য রোদযুক্ত ও উচু জায়গায় ভালভাবে মাটি চাষ করে ও সমতল করে ১ মিটার চওড়া বেড করে বীজ বপন করতে হবে। রোপনের সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে নভেম্বর থেকে জানুয়ারী। তবে তার আগেও চারা রোপন করা যায় যা আগাম চাষের জন্য অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসে।
টমেটো চাষে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
জমিতে টমেটোর চারা রোপন করার পূর্বে মাটি তৈরীর সময় ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, গোবর জমির পরিমাণ অনুযায়ী ছিটিয়ে দিতে হবে। তবে গবরের পরিমাণ বেশী করে দিবেন। আর চারা লাগানোর দিনও বেডে কিছু গবর মিক্সড করে দিবেন তাতে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। এর সঙ্গে জিপসাম, সালফেট, বোরিক এসিড পাউডার এবং ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সারও ছিটিয়ে দিবেন।
টমেটো গাছের পরিচর্যা
গাছ একটু বড় হতে লাগলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রতিটি গাছে বাঁশের খুঁটি দিবেন। মাটি বেশি সুষ্ক হলে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন, রোগ প্রতিকারে যথাযথ পদক্ষেপ নিবেন এবং পোকামাকড় দেখা দিলে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনি ভাবে ভাইরাস দেখা দিলে গাছ তুলে ফেলতে হবে। গাছে মরা পাতা থাকলে ছেঁটে ফেলতে হবে।
টমেটো সংগ্রহ
যদি হাইব্রিড জাতের গাছ হয় তাহলে ফলন ভালো এবং আগাম সংগ্রহ করা যায়। তবে ২-৩ মাসের মধ্যেই ফসল সংগ্রহ করা যায়। কাঁচা এবং পাকা উভয় সময় সংগ্রহ করা যায়। তবে দুরে কোথাও পাঠালে কাঁচা সংগ্রহ পাঠানোই ভালো। কেননা পাকা সংগ্রহ করে পাঠালে পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
টমেটোর উপকারিতা
নিয়মিত টমেটো খেলে ভিটামিন এ কে, বি১, বি৩, বি৫, বি৬, বি৭সহ আরো অনেক ভিটামিন পাওয়া যায়। টমেটো শীতের ফসল হলেও এখন সারা বছরই পাওয়া। টমেটোর সবজি, ভর্ত্তা, সালাদ করেও খাওয়া যায়। টমেটো খেলে আমরা নিম্নোক্ত উপকার পেয়ে থাকি-
- টমেটো নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
- রক্ত শূন্যতা রোধ ও রক্তের কণিকা বৃদ্ধি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে নিয়মিত টমেটো খাবেন।
- ত্বক পরিস্কার ও সতেজ রাখতে সহায়তা করে টমেটোর মধ্যে থাকা লাইকোপিন।
- নিয়মিত টমেটো খেলে হাড় শক্ত ও মুজবুত থাকে।
- রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।
- ভিটামিন এ, ভিটামিন বি এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
শেষ কথা
টমেটো চাষ পদ্ধতি ও টমেটো চাষে সফলতার সহজ উপায়ে অনেক তথ্য আলোকপাত করা হয়েছে। টমেটোর গুণাগুণ লিখে শেষ করা যাবে না এবং এটা চাষ করে অনেক কৃষক লাভবান হয়েছে এবং হচ্ছে। তাই আমরা উপরোক্ত তথ্যের আলোকে আমরা সারা বছরই টমেটো চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারি।
লেখকের মন্তব্য
যদি আমার এই পোস্টটি সস্পূর্ণ পড়ে আপনাদের ভালো লেগে থাকে কিংবা কোন উপকারে আসে তাহলে আমার সাইটটি ভিজিট করুন এবং অন্যকে শেয়ার করে জানিয়ে দিন। আর এই সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করলে আরো অনেক তথ্য পাবেন।ধন্যবাদ।
মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url