সরিষার তেল শরীরে ব্যবহারের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
সরিষার তেল শরীরে ব্যবহারের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত জানুন আমার এই পোস্টে। সরিষার তেল (Mustard Oil) যেমন ঝাঁঝালো তেমনি এর গুণাগুণও অতুলনীয়। আবার আয়ুর্বেদিক গুনাগুণও অনেক। খ্রীষ্টপূর্ব ৩৫০০ বছর আগে থেকেই আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং অদ্যবধি ব্যবহার হয়ে আসছে। বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের সরিষার তেলের ব্যবহার অনেক বেশী।
সরিষার তেল শরীরে ব্যবহারের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত পোস্টে জানতে পারবেন যে, সরিষার তেল মানবদেহের জন্য কতখানি উপকারী তা যদি সকল মানবজাতি জানতো তাহলে আর কোন তেল ব্যবহার করতো না। তাই আজকে আমার এই পোস্টে জানতে পারবেন সরিষার তেল শরীরে ব্যবহারের উপকারিতা ও অপকারিতার বিস্তারিত তথ্য। তাই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনযোগ দিয়ে পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।
ভূমিকা
সরিষা বীজ থেকে তৈরী করা সরিষার তেল। এর রং ঘন লালচে হলুদ এবং ঝাঁঝালো ও গন্ধযুক্ত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে দেহের জন্য খুবই উপকারী এই সরিষার তেলের যে কোন খাবার। আমাদের দেশে বিভিন্ন উপায়ে এই সরিষা থেকে তেল তৈরী করা হয়। যেমন- ঘানি টেনে এবং মেশিন দিয়ে। সরিষার বীজ থেকে উৎপাদিত সরিষার তেলের গুণাগুণ লিখে শেষ করা যাবে না। তাই চলুন দেখা নেওয়া যাক সরিষার তেল শরীরে ব্যবহারের উপকারিতা ও অপকারিতার বিস্তারিত ।
সরিষার তেল ব্যবহার করুন শরীরের ব্যাথা কমাতে
সরিষার তেলের মধ্যে থাকা Anti-inflammatory Properties ব্যথা সাড়াতে সাহায্য করে এবং রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। শরীরের বিভিন্ন জোড়ায় জোড়ায় ব্যাথা, মাজা ব্যথা, হাঁটুর ব্যাথা ও বাতের ব্যাথা কমাতে সরিষার তেল দারুন কাজ করে।
সরিষার তেল ব্যবহারে অ্যাজমা রোগের মুক্তি
নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করলে অ্যাজমা আক্রান্ত রোগী অনেক উপকৃত হয়। এক্ষেত্রে অ্যাজমা আক্রান্ত রোগীরা প্রতিদিন সরিষার তেল বুকে ঘষলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং নিয়মিত শরীরে সরিষার তেল মাখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সরিষার তেল ব্যবহার করুন হৃদপিন্ড ঠিক রাখার জন্য
হৃদ রোগের ঝুঁকি কমাতে ৫০% সাহায্য করে এই সরিষার তেল। কেননা সরিষার তেলে মনোস্যাচুরেটেড ও পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড রয়েছে। দেহে উক্ত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। আবার হার্টের অনেক উপকারী কেননা এতে রয়েছে লিনোলোনিক ও লিনোলেইক এসিডের ভারসাম্য।
সরিষার তেল ব্যবহার ক্যান্সার প্রতিরোধ করুন
আপনি কি অবাক হচ্ছেন? সরিষার তেল ব্যবহার করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায়। হ্যাঁ সত্যিই দেহকে ক্যান্সার থেকে প্রতিরোধ করে সরিষার তেলে থাকা অ্যালিল আইসোথিওসায়ানেট নামক উপাদান। নিয়মিত সরিষার তেল ব্যবহার করলেই ক্যান্সারকে অনেকখানি প্রতিরোধ করে থাকে। ক্যান্সার নিঃসন্দেহে মরণব্যাধি রোগ, তাই নিয়মিত সরিষার ব্যবহার করুন।
সরিষার তেলের রান্না খেয়ে হজমশক্তি বৃদ্ধি করুন
সরিষার তেলের রান্না নিয়মিত খাবার চেষ্টা করুন এবং নিজেকে সুস্থ্য রাখুন। সরিষার তেল পাকস্থলীর পাচক রস উদ্দীপিত করে এবং ক্ষুধা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত সরিষার তেলের রান্না খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।
সরিষার তেল ব্যবহার করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন
সরিষার তেল ব্যবহার ও রান্না করা খাবার নিয়মিত খেলে শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, প্লাজমা, কোষেল লিপিডস, কোষেল ঝিল্লি আবরণ তৈরী ও লোহিত রক্ত কণিকার ঝিল্লি উন্নয়নে সাহায্য করে। এতে করে ভিটামিন-ই, ওমেগা ৩, ওমেগা ৫ ফ্যাটি এসিড শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সরিষার তেল শরীরে ব্যবহারের উপকারিতা ও অপকারিতা বিস্তারিত আলোচনায় কিছু রোগের তালিকা উল্লেখ করা হলো যা অনেকাংশে সরিষার তেলের ব্যবহার ও রান্না করা খাবার খেলে প্রতিরোধে কার্যকর।
- সরিষার তেল ব্যবহারে শরীরকে উষ্ণ রাখে ফলে ঠান্ডাজনিত সমস্যা খুব বেশী হয় না।
- সরিষার তেল ব্যবহারে দাঁতের সংক্রমণ ও মাড়ির ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে।
- শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ সহজেই বের হয়ে যায়, কারণ শরীরের ঘাম বরে হওয়া গ্রন্থিকে সচল রাখে।
- মেয়েদের পিরিয়ডের সময় পেট ব্যাথা করলে শরীরের তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়।
- মলাশয়ের ক্যান্সার ও অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে সরিষার তেলে থাকা গ্লুকোসিনোলেট নামক উপাদান।
- হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সরিষার তেলে থাকা ক্যালসিয়াম সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- যে কোন ইনফেকশন দূর করতে সরিষার তেল খুবই উপকারী।
- শরীরের জীবাণু প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে তেলে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট।
- নিয়মিত সরিষার তেল খেলে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা কমা থাকে।
- শ্বাস কষ্ট সমাধানে সরিষার তেল ব্যবহার করুন।
- মূত্রাশয়ের ক্যান্সার হওয়া থেকে বাধা সৃষ্টি করে সরিষার তলে।
- সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, ই ও বি। যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী।
সরিষার তেল শরীরে ব্যহারের অপকারিতা
সরিষার তেল শরীরে বেশী পরিমাণ ব্যবহার করলে কি কি সমস্যা হয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
- সরিষার তেলে কিছু রাসায়নিক যৌগ থাকে যা দেহের ভিতরে ভ্রুণের গঠনে বাধা প্রদান করে। তাই যাদের সন্তান সম্ভাবনা থাকে সেই মেয়েদের সরিষার তেল ব্যবহার ও রান্না করা খাবার খাওয়া নিষেধ।
- বাচ্চাদের ত্বকের জলীয় অংশর পরিমাণ কমে সরিষার ব্যবহার করলে। ফলে ত্বকে ফোস্কা পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বাচ্চাদের শরীরে সরিষার তেল মালিশ করা ঠিক হবে না।
- সরিষার তেল বেশী ব্যবহার করলে লাং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
- সরিষার তেল বেশী ব্যবহার করলে ত্বকের চামরায় ক্ষতি হতে পারে।
- সরিষার তেলে থাকা ইরোসিক নামক এসিড হৃদপিন্ডের ক্ষতি করে।
- কিছু কিছু মানুষের অ্যালার্জি হয় সরিষার তেল ব্যবহার করলে।
শেষ কথা
পরিশেষে বলবো যারা সরিষার তেল ব্যবহার করবেন কিংবা রান্না করা খাবার খাবেন তাদের উদ্দেশ্যে যে, সরিষার তেল শরীরে ব্যবহারে উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই আছে। যদি সরিষার তেল অতিরিক্ত ব্যবহার করে আপনার কোন প্রকার সমস্যা দেখা দেয়া তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। আমার এই পোস্ট পড়ে উৎসাহিত হয়ে সরিষার তেল ব্যবহার করে কোন সমস্যা দেখা দিলে দয়া করে আমাকে দোষারোপ করবেন না। কেননা বাজারে অনেক নিম্নমানের সরিষার তেলও রয়েছে। তাই অনুরোধ করবো যদি সরিষার তেল ব্যবহার করেন তাহলে অর্জিনাল সরিষার তেল ব্যবহার করবেন এবং রান্না করা খাবার খাবেন।লেখকের মন্তব্য
যদি আমার এই পোস্টটি সস্পূর্ণ পড়ে আপনাদের ভালো লেগে থাকে কিংবা কোন উপকারে আসে তাহলে আমার সাইটটি ভিজিট করুন এবং অন্যকে শেয়ার করে জানিয়ে দিন। আর এই সাইটটি নিয়মিত ভিজিট করলে আরো অনেক তথ্য পাবেন।ধন্যবাদ।
মাহ্ফুজ আইটি বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url